ইনসাইড থট

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আচার্য মহোদয়ের কাছে কিছু প্রত্যাশা


প্রকাশ: 05/10/2023


Thumbnail

বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হচ্ছে আজ। মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য। শিক্ষকের  একটি আইনগত অধিকার আছে মহামান্যের কাছে বিচার চাইবার। সেজন্য একটি আবেদন শিক্ষক করতে পারেন। নিয়ম অনুসারে আবেদনটি মহামান্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেবেন দেখভাল করবার জন্য। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় সেই আবেদনটি আচার্য মহোদয়ের টেবিল থেকে মন্ত্রণালয়ে আসে না। তাই শিক্ষক দিবস জনৈক শিক্ষক এর কাছে একটি উপহাস মনে হতে পারে।

শিক্ষক দিবসে দেখছি চুরি করা শিক্ষকরা বহাল তাবিয়াতে আছেন। আর ৯৯ জন ছাত্র নকল করবার অপরাধে সাজা পাচ্ছে। এমন শোনা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাজদানের কমিটিতে নাকি গবেষণা নকলকারী শিক্ষক আছেন। আমরা কেমন জাতি যে চোরের কাছে আমাদের সন্তানদের পাঠাই। এসব শুনে আমার মাথা নিচু হয়ে যায়।  আমিও একজন শিক্ষক কিন্তু সমাজে আমার নেই সন্মান। কিছুদিন আগে এক উপাচার্য বলেছেন তিনি তালেবানি কালচার নিয়ে সন্তুষ্ট। কারণ অভিভাবকরা সেটা চান। আমার প্রশ্ন অভিভাবকরা কি চোর শিক্ষকের কাছে পড়াতে পাঠান?

কদিন আগে গিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে। একটি বিষয় তদন্ত হচ্ছে। সেখানে গবেষণা চুরি ও নিম্নমানের শিক্ষক নিয়োগের বিষয় আছে। এক কর্মকর্তা বললেন স্যার এই তদন্ত করে কোনো লাভ হবে না। কেন? উত্তরে বললেন একজন শিক্ষকের গবেষণা জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত করে দিয়েছি। সেটা বিশ্ববিদ্যালয় আমলে না নিয়ে তাকে পদোন্নতি দিয়েছে। সুতরাং আপনি কেন কষ্ট করে আসেন। আপনি বিচার পাবেন না। আর উনার তদন্ত করতে ভালো লাগে না।  কারণ তাতে তিনি কিছু মানুষের শত্রু হয়ে যান। বললেন ওই যে এক উপাচার্য শতাধিক নিয়োগ দিয়েছেন শেষ দিনে। কই তিনিতো বহাল তবিয়তে আছেন। আমি কাজ করেছি কিন্তু ফলাফল শুন্য। সুতরাং, কেন রাষ্ট্রের টাকা নষ্ট করা হলো এই তদন্তে।

তেমনি একটি কথা বলছিলেন একজন সদস্য- আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন বছরে প্লাগিয়ারিজম সফটওয়্যার খরচ দেই যদি গবেষণা চুরির জন্য শাস্তি না হয়। একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি সুন্দরভাবে তদন্ত করে দেয়ার পর সেই কমিটির সদস্যরা অভিযুক্ত মহলের রোষানলে পড়েন।  তাদেরকে অপমান বা হুমকি দেয়া হয়। চোরের মার্ বড় গলা। সেজন্য সে যিনি চোর ধরেন তাকে বলেন আপনি কুকর্ম করেছেন। খুবই ভালো কথা তবে কি ওই ৯৯ ছাত্র যারা নকলের জন্য সাজা পেলো তারাও কি বলবে বিশ্ববিদ্যালয় নকল প্রতিরোধ আইন বা নকলের সাজা দিয়ে কুকর্ম করেছেন?

তিনি চুরি করবেন আর সেই চোর ধরলে আপনার কাজ হবে কুকর্ম। শুনলে আঁতকে উঠবেন না -তাদের রক্ষা করবার জন্য আছে আমলা। চোর ধরা যদি হয় কুকর্ম তবে কেন অধ্যাপক জাফর ইকবালকে পাঠপুস্তকে নকলের অভিযোগে ক্ষমা চাইতে হয়? অধ্যাপক জাফর ইকবালের সততার প্রতি দৃঢ় অবস্থান ও অকপট স্বীকৃতির পর আমি এক তত্তাবধায়ক শিক্ষককে  লিখে ছিলাম আপনার ছাত্রকে দোষ স্বীকার করতে বলবেন কি?” উনি আমার মেসেজটি দেখে মেসেজ মুছে যাওয়ার সিস্টেম চালু করেছেন। তিনি আমার শিক্ষক। আমার শিক্ষকের এই কাজটিকে যখন অন্য একজন শিক্ষক তথা উচ্চ কর্মকর্তাকে বললাম তিনি বললেন আপনি যখন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তখন একটি অপরাধ করেন। আমি হতবাক হলাম।সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান ঠিক তিন দিন পরে বলছেন অভিযোগকারীর নিরাপত্তা দিতে হবে।তিনিও কিন্তু শিক্ষক। তিনি প্রকৃতি শিক্ষক।    

হ্যাঁ, যিনি হুইসেল বাজাবেন তিনি সবচে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। এই বিষয় নিয়ে যিনি গবেষণা করেছেন তিনি ওই হুইসেল বাজকের প্রাণনাশের হুমকিতে নাকি খুশি হয়েছেন এবং তিনি সতর্ক করেছেন সেই হুইসেল বাদক যেন বিভাগে না যান, গেলে অপমানিত হতে হবে। তিনি আরও বলেছেন ওই বিভাগের চেয়ারম্যান নাকি ওই হুইসেলবাদককে তার অফিস ঢুকেই দেননি। উত্তরে ওই হুইসেল বাদক শিক্ষক বলেছেন- তিনি সেটা বিশ্বাস করেন না এবং বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষক রেশনাল।  বিভাগের শিক্ষক হুইসেল বাদককে কেন ঢুকতে দেননি তার কারণ না জেনে একটি অপপ্রচার করছেন তিনি। আসলে তিনি জানতেন না যে একটি তদন্ত চলছে বলে সভাপতি শিক্ষক হুইসেল বাদককে ঢুকতে দেননি যাতে প্রভাবিত করবার অভিযোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।এই তদন্তকারী শিক্ষক কি প্রকৃত শিক্ষক নন? তিনি কি পুরস্কার পেতে পারেন না?   

ওই হুইসেল বাদক শিক্ষক নানা ঝামেলাতে আছেন। তার চরিত্র হননে নানা চেষ্টা চলছে। ছাত্র লেলিয়ে দিয়ে ক্লাসে ডিসটার্ব করা হচ্ছে, তার সকল গবেষণা কর্ম পরীক্ষা নিরিক্ষা করা হচ্ছে এবং একটি মিথ্যা রটনার চেষ্টা চলছে। এ বিষয় নিয়ে এক গবেষকের সঙ্গে কথা বলছিলাম। ওনাকে আমাদের মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী উপাচার্য হতে বলেন। তিনি বলেছেন আমি চাই না। এই না করবার জন্য তিনি অনুযোগের শিকার হন। তিনি বলেন আমি গবেষক হিসেবে থাকতে চাই। তিনি দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ করে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে পারবেন না বলেই উপাচার্য হতে চান না। 

শিক্ষায় দুর্নীতি এমন পর্যায়ে গেছে যে শিক্ষা হুমকিতে। সেজন্য দলে দলে বিদেশ চলে যাচ্ছে অথবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটছে। আমাদের শিক্ষকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবই মনোযোগী কিন্তু নিজের কর্মস্থলে দিনের পর দিন ফাঁকি দিচ্ছেন অভিযোগে অভিযুক্ত হতেও লজ্জিত নন। আমরা হিরো আলমের রুচির দুর্ভিক্ষ নিয়ে তুফান উঠিয়েছি। কিন্তু শিক্ষকদের রুচির দুর্ভিক্ষ আমাদেরকে লজ্জা দেয় না। 

বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আমি লড়াই করছি। আমার দুই একজন প্রিয় শিক্ষক আছেন তারা আমাকে অনুপ্রেরণা দেন। বাকি সকলে আমার কাজকে বোকামি মনে করেন। ওই যে এক শিক্ষক উপাচার্যের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। তিনি আজ পরাজিত। মন্ত্রণালয় নাকি ওই নিয়োগের বৈধতা দিতে বলেছে। সুতরাং, কিছু হবে বলে যে তত্ত্বাবধায়ক বলেছিলেন তিনি তার কথা সত্য প্রমান করবেনই।

কয়েকদিন আগে এক উপাচার্য ফোন দিয়েছিলেন। আমি উনার বিরুদ্ধে পত্রিকাতে অভিযোগ দিয়েছি। আমি অনুমান করেছি তিনি আমাকে বকাঝকা করবেন। কারণ উনি সকলকে কর্মচারী মনে করেন এবং সকলকে বকাঝকা করেন। আমি দেখেছি দলবেঁধে এসে কর্মচারীরা অভিযোগ করছেন ওই উপাচার্যের বিরুদ্ধে। তারা অপেক্ষা করছেন সেই শিক্ষক উপাচার্যের মেয়াদ কবে শেষ হবে। তিন নাকি গালি দেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেবেন ইত্যাদি বলেন। আরেক কর্মচারী এসময় বলেছেন তিনি গালি দিয়ে ছেড়ে দেন। কিন্তু যিনি তালিকাতে আগামী উপাচার্যের তালিকাতে তিনটি শো-কোজ দেবেন। বিতর্ক হতেই পারে এ বিষয়ে। কোথাও কোথাও শোনা  যায় উপাচার্যরা বলেন তারা গড। তারা আপনার উপর অসন্তুষ্ট হলে খবর আছে। সত্যিতো উপাচার্যরা গড। তাই তাদের অবৈধ কর্মকান্ড কোনোদিন বিচারের আওতায় আনা  হয় না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে বলা আছে, প্রতি দুমাস অন্তর সিন্ডিকেট সভা হতে হবে। কিন্তু দেখা যায় যায় ছয় মাসে একটি সিন্ডিকেট সভা হয় না। আমাদের গড শিক্ষকদের আরও অনেক কাহিনী আছে। 

গতকাল পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজ পাওয়া শিক্ষক এর ফোন কল নিয়ে অনেক পোস্ট দেখলাম। অসাধারণ শিক্ষক। নোবেল পেয়েছেন বলে দৌড়ে ক্লাস ফেলে নিউটনের মতো ইউরেকা  ইউরেকে  বলে  নগ্ন হয়ে বের হননি। আমি মঞ্জুরি কমিশন কর্মকর্তাকে বলেছি, আমি সেই বিভাগের ছাত্র যে বিভাগে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ শিক্ষক গোবিন্দ দেব।

গোবিন্দ দেব বিদেশের মোহ ছেড়ে দেশে ফিরে শহীদ হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে। আমি সেই বিশ্ববিদ্যালয় ও সেই বিভাগের নৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই। আপনাকে প্রমান করে দেব আপনার অনুমান মিথ্যা। আমার ছাত্র যিনি মঞ্জুরি কমিশন থেকে ফিরে বলেন স্যার আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আপনি শুধু অভিযোগ দিয়ে থাকেন। আমি বললাম ওই অভিযোগ তোমাকে দিয়েছিলাম এবং তুমি নির্দেশ দিয়েছো তদন্তের জন্য এবং তোমার কাছে অভিযোগ দেয়ার জন্য আবার তোমার শিক্ষককেই এমন কথা বলছে। আমি জানি তিনি কে। তুমি নির্ভয়ে কাজ কর।  আমি তোমার পাশে থাকবো। 

সব খানেই কিছু ভালো মানুষ আছে। তাই দেশটা বেঁচে আছে। ওই যে বরেণ্য শিক্ষক উপাচার্য হতে চাননা। ওই রকম বরেণ্য শিক্ষক আছে। আবার এমন উপাচার্য শিক্ষক আছেন যিনি একজন ভালো শিক্ষকের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করেন, সিলেকশন বোর্ডে দুর্নীতিবাজদের রাখেন। দুর্নীতি মুক্ত শিক্ষা হোক আজকের বিশ্ব শিক্ষা দিবস এর প্রতিপাদ্য বিষয়। 

আমরা যেমন ছাত্রদেরকে তাদের নকলের জন্য শাস্তি দেই তেমনি যেন নকলবাজ শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তি হয়। যেন দুর্নীতিবাজ উপাচার্য শিক্ষকের বিচার হয়। মহামান্য আচার্যের কাছে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আবেদন তিনি যেন সত্যিকার বিচারকের মতো একটি ভূমিকা পালন করে জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে আমাদেরকে অনুপ্রেরণা দেন। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আচার্য মহোদয়ের কাছে কিছু প্রত্যাশা।  

মহামান্য, আমাদের উচ্চ শিক্ষা নানা হুমকিতে। আমাদের জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় বিশ্ববিদ্যালয় চলে। সেই কষ্টের টাকা যেন জলে না যায় সেজন্য আপনি আমাদের পাশে থাকবেন। আমরা যেন দূষণমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ আমাদের শিক্ষার্থদেরকে দিতে পারি। আমরা যেন মেরুদন্ড শক্ত করে দাঁড়াতে পারি। যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদেরকে আপনি সহযোগিতা দিন। যারা ভালো শিক্ষক তারা যাতে হতাশ হয়ে বিদেশ না চলে যায়, আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে সত্যিকার নাগরিক হতে পারে সেজন্য আমরা আপনাকে পাশে পাবো বলে প্রত্যাশা করি।

যে উপাচার্য দুর্ব্যবহার করেন, যে কর্মকর্তা হুইসেলবাদককে ধমকান, যে সব উপাচার্য দুর্নীতিবাজদেরকে পদোন্নতি দেন, ভালো শিক্ষকদেরকে সিলেকশন বোর্ডে রাখেন না, তাদের চেতনা জাগরণে আপনার ভূমিকা সাধারণ শিক্ষকদের কাম্য।     



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭