ইনসাইড পলিটিক্স

ভারতকে খুশি করতেই মরিয়া বিএনপি


প্রকাশ: 05/10/2023


Thumbnail

বিএনপি এখন একদফা আন্দোলন করছে। তাদের একদফা আন্দোলনের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর সহানুভূতি রয়েছে এটি আর কোন গোপন বিষয় নয়। বিএনপি নেতারাও পরিষ্কার বলছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তাদের পক্ষে। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য সরকারকে চাপে ফেলার জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বলে তারা দাবি করছেন।

কিন্তু তারপরেও সরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেবে এমনটি আশা করছেন না বিএনপির নেতারা। বরং বিএনপির নেতারা মনে করছেন যতক্ষণ পর্যন্ত ভারত সরকারের পক্ষে আছে এবং বিএনপির ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই আন্দোলনের বিজয় অসম্ভব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর আরো কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, এমনকি অর্থনৈতিক অবরোধও ঘোষণা করে তারপরও এই নির্বাচন সরকার করে ফেলবে। কারণ সরকার একটি বিকল্প বলয় তৈরি করেছে।

ভারত, চীন, রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার আগামী নির্বাচন করে ফেলবে এবং সেই নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহন না করে তাহলে বিএনপির জন্য আরেকটি বড় ধরনের ধাক্কা অপেক্ষা করছে বলেও বিএনপির নেতারা মনে করে।

এখান থেকে বের হওয়ার একটা মাত্র উপায় তারা খুঁজে পাচ্ছে। তা হল ভারতের মন জয় করা। ভারতকে যদি তারা নিরপেক্ষ করতে পারে তাহলে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করা অনেক সহজ হবে। আর এই কারণেই বিএনপি তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে।

অক্টোবরে বিএনপির যে বড় ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ছিল সেই কর্মসূচি ঘোষণা থেকে তারা সরে এসেছে। বরং আগের ধারায় তারা সভা-সমাবেশ, রোডমার্চ, পদযাত্রার মতো কর্মসূচির মধ্যেই তাদের আন্দোলন সীমিত রেখেছে।

বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন যে, সামনে শারদীয় দুর্গা উৎসব। দুর্গা পূজার সময় যদি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হয় কিংবা খুব বড় ধরনের গোলযোগ হয় তাহলে ভারত ক্ষুব্ধ হতে পারে। এমনিতেই বিএনপির উপর ভারতের কোন আস্থা এবং বিশ্বাস নেই। তারপর এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটলে তার সমস্ত দায় দায়িত্ব সরকার বিএনপির উপর বর্তাবে, এমন আশঙ্কা থেকেই বিএনপি এখন ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করছে।

এছাড়াও ভারতের মন জয় করার জন্য আওয়ামী লীগই সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন করে এমন বক্তব্য এখন বিএনপির নেতারা জোরালো করেছেন। বিএনপির বিভিন্ন নেতারাই সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘু নিপীড়ন করে এবং সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করে এমন বক্তব্য দিচ্ছেন। বিএনপি প্রথমবারের মতো জন্মাষ্টমী উৎসব পালন করেছে এবং জন্মাষ্টমীর উৎসবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বক্তব্য রেখেছেন।

কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, ভারতের সাথে বিশ্বস্ততার সম্পর্ক করার জন্য এগুলোই যথেষ্ট নয়। বরং ভারত বিএনপিকে যে ৩ দফা পরামর্শ দিয়েছিল তার একটিও বিএনপি এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তিন দিন পরামর্শের মধ্যে জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের বিষয়টি তারা চূড়ান্ত ফয়সালা করে ফেলেছে। জামাতের সাথে বিএনপির কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই।

কিন্তু বিভিন্ন সূত্র বলছে, জামাতের সঙ্গে বিএনপির এখনো যোগাযোগ রয়েছে এবং জামাত বিএনপির সঙ্গে মিলিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করছে। কোথাও কোথাও জামাত বিএনপির স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া তারেক জিয়ার নেতৃত্ব এবং দলের ভিতর শুদ্ধি অভিযান করে যারা পাকিস্তান পন্থী এবং ভারত বিরোধী তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। আর এই সমস্ত কারণেই ভারত বিএনপিকে আস্থা এবং বিশ্বাসের মধ্যে আনতে পারছে না।

ইতিমধ্যে ভারতের থিংক ট্যাঙ্কগুলো বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে বিভিন্ন রকম কথাবার্তার মধ্যে শুরু করেছে। তাতে গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশের কথাই বেশি করে বলা হচ্ছে। ভারত এখন পর্যন্ত মনে করে যে বাংলাদেশে যদি ক্ষমতাকেন্দ্রের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বর্তমান সরকার ক্ষমতায় না থাকলে বাংলাদেশ বাংলাদেশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে এবং জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটবে।

তাই ভারতের মন জয় করার জন্য বিএনপি আর কতটুকু ছাড় দেবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭