মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের ওপর প্রকাশ্য চাপ প্রয়োগ করছে। যদিও মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কোনো রকম চাপ নয়, জনগণের আকাঙ্ক্ষার অভিপ্রায় হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। যে নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটবে। বাংলাদেশের নির্বাচন যেন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয় সেজন্যই ভিসা নীতি সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করছে। আগামী রোববার প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি দল বাংলাদেশ সফর করবে। এই দলের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপ। ইতিমধ্যে গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা শুরু করেছে। সেখানে বেশ কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামনের দিনগুলোতে আরও বিভিন্ন ধরনের চাপ দিতে পারে এমন খবর গণমাধ্যমে প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে। অনেক সুশীল বুদ্ধিজীবী দাবি করছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক অবরোধ, রপ্তানি অবরোধ সহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। আর এরকম পরিস্থিতিতে সরকার অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ যেন সংকটাপন্ন না হয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ যেন বন্ধহীন না হয় সেজন্য আগাম উদ্যোগ এবং তৎপরতা গ্রহণ করেছে।
গতকাল বাংলাদেশ পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করেছে এবং রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে ইউরোনিয়াম হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এই নব দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়েছিলেন এবং দুই দেশ পরীক্ষিত বন্ধু এ কথা দুই নেতাই উচ্চারণ করেছেন।
রাশিয়া ছাড়াও বাংলাদেশ নির্বাচনের আগে আরও কয়েকটি বন্ধু দেশকে পাশে টানছেন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিন এবং ভারত বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা কোনো গোপন বিষয় নয় এবং ভারত প্রকাশ্যেই গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা এবং ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা বলে আসছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একাধিক বৈঠক হয়েছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলও ভারতে গেছে। ভারত শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে সহাবস্থানে থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ভারত বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটুক, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দাটপ বাড়ুক—এমনটি চান না। আর এটি না চাওয়ার কারণেই এরকম একটি অবস্থান নিয়েছে ভারত।
অন্যদিকে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো রাখার চেষ্টা করছে এবং চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সরকার কাজ করে যাচ্ছে। চীন ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর সমালোচনা করেছে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক ক্ষমতাধর এই দেশটি।
বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়ন করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরেকটি নতুন বলয় তৈরি করার কাজ প্রায় সম্পূর্ণ করেছে। সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলো অর্থনৈতিক সংকটে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবে এমন আশ্বাস বাংলাদেশ পেয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ জাপানসহ অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক রক্ষা করতে চাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মার্কিন বলয় চলে যেতে পারে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করতে পারে—এটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করেছে। ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রভাবশালী দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন আগের চেয়ে ভালো। সব কিছু মিলিয়ে মার্কিন চাপে যেন বাংলাদেশ নতজানু না হয়ে যায় এবং একঘরে না হয়—এটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ কূটনৈতিক বিন্যাস নতুন করে সাজাচ্ছে।