ইনসাইড পলিটিক্স

পাঁচ কারণে নির্বাচনে যেতে পারে বিএনপি


প্রকাশ: 06/10/2023


Thumbnail

বিএনপি গতকালের সমাবেশ থেকে বলেছেন যে একটাই কথা তত্ত্বাবধানে সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না—এমন বক্তব্য বিএনপি নেতারা প্রতিদিনই দিচ্ছেন। গতকালের চট্টগ্রামে রোড মার্চ থেকে ৯ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। তবে এই কর্মসূচির ধরন দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, বিএনপি আসলে নির্বাচনে যাওয়ারই প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি আসলে সাংগঠনিক ভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করছে। পাঁচ কারণে বিএনপি নির্বাচনে যেতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এর মধ্যে-

১. বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া: প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি যাই বলুক না কেন এরকম একটি বিশ্বাসযোগ্য গুঞ্জন রয়েছে যে বেগম খালেদা জিয়া যদি বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে বেগম খালেদা জিয়াকে বিশেষ শর্তে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হতে পারে। আর এ ধরনের গুঞ্জনের বার্তা রাজনীতির বাতাসে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন মহল মনে করেন, এখনো আলাপ আলোচনা শেষ হয়নি। এখনো আশা আছে। আর সে কারণেই বিএনপি এরকম একটি সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে যেতে পারে। 

২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আর তাই তারা ভিসা নীতি সহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গুলো প্রয়োগ করেছে। এরকম নীতি প্রয়োগ করা বা বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের প্রধান কারণ হলো ক্ষমতাশীল সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং সংশ্লিষ্টরা যেন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধ্য হয়। আর শেষ পর্যন্ত যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে আশ্বস্ত করে যে নির্বাচনে কোনো কারচুপি হলে তারা এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিবে না বা গ্রহণ যোগ্যতা দেবে না তাহলে সেক্ষেত্রে বিএনপি মার্কিন পরামর্শে নির্বাচনে যেতেই পারে।

৩. দলের নির্বাচন মুখী নেতাদের চাপ: বিএনপি দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতায় নাই। তিনটি নির্বাচনে তাদের স্থানীয় পর্যায়ের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে। যারা দলের স্থানীয় পর্যায়ে নেতা এবং যাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে তারা নির্বাচন ছাড়া আর টিকতে পারছেন না। এই কারণেই তারা পরামর্শ দিয়েছেন দলের নেতাদেরকে যে, আন্দোলনের চেয়ে নির্বাচনে শক্তি পরীক্ষা করাটাই ভালো এবং এ ধরনের নির্বাচন করলে দলটি দলের সাংগঠনিক শক্তি আরও বাড়বে।

৪. আন্দোলন জমিয়ে তুলতে না পারা: বিএনপি যেভাবে প্রত্যাশা করেছিল যে আন্দোলনের সঙ্গে জনগণ সম্পৃক্ত হবে এবং একটি গণবিস্ফোরণ ঘটবে বাস্তবে তেমনটি ঘটেনি। আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ত না হওয়ার কারণে কৌশলগত অবস্থান থেকে বিএনপি নির্বাচনে যেতে পারে।

৫. নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা একটি কৌশল: নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা একটি কৌশল হিসাবেও নিতে পারে বিএনপি। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে সরকারকে একের পর এক বিতর্কিত করবে, প্রশ্নবিদ্ধ করবে, আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে নানা রকম চাপ সৃষ্টি করার ব্যবস্থা করা হবে। 

বিএনপির একজন নেতা স্বীকার করেছেন, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেতে চেয়েছিল। শেষ মুহূর্তে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। তখন বিএনপির সামনে আর কোনো পথ ছিল না। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন, সেই মডেলেই বিএনপির আন্দোলন করা উচিত। বিএনপি যদি শুরু থেকেই বলে যে তারা নির্বাচন করবে না তাহলে সেটি অন্যরকম একটি বার্তা পেতে পারে। কিন্তু বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় এবং শেষ মুহূর্তে যদি নির্বাচনে কারচুপি হচ্ছে, অনিয়ম হচ্ছে ইত্যাদি অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় তাহলে সেটি হবে তাদের জন্য সবচেয়ে ইতিবাচক। আর এ কারণেই  বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭