ইনসাইড বাংলাদেশ

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না তত্ত্বাবধায়ক সরকার: কি চায় যুক্তরাষ্ট্র?


প্রকাশ: 07/10/2023


Thumbnail

আগামী নির্বাচন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে চায় তা নিয়ে রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জ্যাক সুলিভানের সাথে বৈঠকে কখনো তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক ভাবে কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সমর্থন করেনি। এমনকি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে—এমন বক্তব্য তারা কখনো সামনে আনেনি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটা মূলত বিএনপির দাবি এবং এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা আন্দোলন করছে। 

বিএনপির নেতারা যদিও বলছে, কৌশলগত কারণে বা বিদেশি রাষ্ট্র হওয়ার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সমর্থন করছে না বটে তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বিশ্বাস করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না। বিএনপির নেতারা এটিও বলছেন, বর্তমানে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে ভিসা নীতি সহ নানা রকম কঠোর অবস্থানের কথা জানাচ্ছে তার প্রধান কারণ হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নির্বাচন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে সমস্ত উৎস থেকে বাংলাদেশের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করেন সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিরাও যুক্তরাষ্ট্রকে জানাচ্ছে যে, বাংলাদেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটি যৌক্তিক দাবি এবং এটি ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। বিশেষ করে বদিউল আলম মজুমদার, আলী রিয়াজের মতো মার্কিন ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবীরাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির কথা এখন খোলামেলা ভাবেই বলছেন। এই বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন করবে নাকি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে করবে এটি একটি বড় কৌশল। 

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বলবে না। তবে তারা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করবে যাতে দলীয় সরকারই হোক বা তত্ত্বাবধান সরকারই হোক সরকারকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতেই হবে। এটি যদি সরকার না করে তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অবশ্য কোনো কোনো কূটনীতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা, অর্থনীতি নিষেধাজ্ঞা সহ নির্বাচনের আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় যে পরিস্থিতিতে সরকার  ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে এবং একটি অনির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই সে ধরনের অবস্থানের কথা বলছে না। বরং তারা বারবার বলছে, তারা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় এবং যারা এর বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাদের ওপরেই ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা সম্ভব করা হবে। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টি একটি গোলক ধাঁধা বলে অনেকে মনে করছেন। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ গুলো নিচ্ছে তাতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে তারা মনে করছে না যে বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। আর এ কারণেই শেষ পর্যন্ত যদি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় সেই নির্বাচনের আগে পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সেই প্রশ্নটি বড় হয়ে উঠেছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি নির্বাচনের আগে একের পর এক বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করে যে পরিস্থিতিতে সরকার নির্বাচন করতে অক্ষম হয় তাহলে পরে অনির্বাচিত সরকার দেশে প্রতিষ্ঠিত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেরকম পরিস্থিতি চায় কিনা সেটি এখন বড় প্রশ্ন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭