ইনসাইড বাংলাদেশ

সহে না মানবতার অবমাননা


প্রকাশ: 09/10/2023


Thumbnail


১ অক্টোবর ২০০১। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে জুলাই মাসে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশে ক্ষমতা হস্তান্তর হয় শান্তিপূর্ণ ভাবে। কিন্তু ১ অক্টোবরের নির্বাচনে ফলাফল ঘোষনার সাথে সাথে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা তান্ডব শুরু করে, শুরু হয় সন্ত্রাস, নারকীয়তার বিভৎস উৎসব। ঐ সময়কার ঘটনা উঠে এসেছে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সহে না মানবতার অবমাননা’ শীর্ষক লেখায়। পাঠকদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে আজ ৮ অক্টোবর লেখাটি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হলো-

 

৮/ জামাল হত্যার জন্য দায়ী কে?

মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া ২৪ ঘণ্টার বেশি থানায় আটক রেখে পুলিশ গাজীপুরের ছাত্রলীগ নেতা জামাল ফকিরকে নির্মম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন করেছে। তাকে মাঝ নদীতে বাঁশের লগি দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছে। গাজীপুরের কাপাসিয়ার ছাত্রনেতা জামালকে কাপাসিয়া থানা পুলিশ শুক্রবার ভোরে হত্যা করে বলে প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন।

 

নিহত জামাল ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের স্নাতক পরীক্ষার্থী ছিল। গরিব ঘরের মেধাবী ছাত্র জামাল, ১৯৯৫ এসএসসিতে স্টার মার্কসহ (৭৫৭) প্রথম বিভাগে পাস করেছিল। এইচএসসিতেও সে প্রথম বিভাগ পেয়েছিল। সে কাপাসিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য ও তরগাঁও বঙ্গতাজ স্মৃতি পাঠাগারের (দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ-এর নামে) সভাপতি ছিল। নিহত জামাল ১৯৯৫ সালে শীতলক্ষ্যায় সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এরপরেও পুলিশ বলছে সাঁতার না জানার কারণে সে পানিতে ডুবে মারা গেছে।

 ১৩ এপ্রিল ২০০২ রাতে তরগাঁও গ্রামে ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ড. গোলাম হোসেনের বাসায় ডাকাতি হয়। এ ব্যাপারে তার ভাই কবির হোসেন বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় নাম উল্লেখ না করে ২০-২২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। এ মামলার নাম করে ব্রানার এসি গাজী মঈনউদ্দীনের নেতৃত্বের একদল পুলিশ গত ১৭ এপ্রিল রাত বারোটায় সন্দেহজনক হিসেবে তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় তারা জামালের মা- বাবার সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করে। মধ্যরাতে গ্রেফতার করা হলেও পুলিশ কাগজে- কলমে জামালকে গ্রেফতার দেখায় ১৮ এপ্রিল সকাল সাড়ে দশটায়। হাজতে প্রায় ৩০ ঘন্টা জামালকে আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। অথচ ডাকাত গ্রেফতারকৃত জামালের নামে থানায় কোনোদিনই কোনো মামলা ছিল না। এমনকি সন্দেহবশত তাকে কোনোদিন থানায় আনা হয় নি। গ্রামবাসী বলেছেন, পুলিশের অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে জামাল শুক্রবার সকালে থানা হাজত থেকে পালানোর চেষ্টা করে। সঙ্গে সঙ্গে ডিউটি অফিসার এস এসআই এবি সিদ্দিক ও কনস্টেবল আলতাফ পুলিশ নিয়ে তার পিছু ধাওয়া করে। পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য সে দৌড়ে পিছনে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁপ দেয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এসময় পুলিশ নৌকা করে জামালকে ধাওয়া করে মাঝনদীতে নিয়ে ফেলে। তখন কনস্টেবল আলতাফ তাকে লগি দিয়ে খোঁচাতে থাকে। কিছুক্ষণ পর জামাল পানিতে তলিয়ে গেলে তারা ফিরে আসে। ওসি মঈনউদ্দীন বলেন, জামালের ওপর কোনো নির্যাতন করা হয় নি। জামাল হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল বের করলে ছাত্রদলের ছেলেরা তাদের বাধা দেয়। জামালের লাশ দেখতে থানার সামনে শত শত জনতার ভিড়েও ছাত্রদলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উচিয়ে ভয় দেখায়। নিহত ছাত্রলীগ নেতা জামাল ফকিরের (২৪) ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃতের শরীরে অনেক স্থানে জখম ও পানিতে ডুবে থাকার চিহ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে ডাক্তার মৃত্যুর কোনো কারণ উল্লেখ করেন নি। ময়নাতদন্ত টিমে ছিলেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুব হাসান, সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সাইফুদ্দিন আহমেদ, ডা. হান্নান ও ডা. সোহেল। সাবেক পাটমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার (অব) হান্নান শাহ রবিবার গাজীপুর সদর হাসপাতালে আরএম এর সঙ্গে বৈঠক করেন। নদী থেকে লাশ উদ্ধারের ২৭ ঘন্টা পর জামালকে নিজ গ্রামে দাফন করা হয়। গাজীপুর সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর পুলিশ প্রহরায় জামালের লাশ তার গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। এ সময় হাজার হাজার মানুষ তার বাড়িতে সমবেত হয়। সন্তান হারানোর শোকে উন্মাদপ্রায় জামালের মা বারবার চিৎকার করতে থাকেন, 'আমার পুতরে আইন্যা দে।' কিন্তু পৃথিবীর কোনো শক্তি কি ফিরিয়ে দিতে পারবে তার সন্তানকে।

 

কাপাসিয়ার ফকিরবাড়ির জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ শাহ আলম খান বলেন, জামাল ছিল ভদ্র ছেলে, দেখা হলেই সালাম দিত। শবেবরাত ও শবেকদরের রাতে সারারাত মুসল্লিদের সাথে নামাজ পড়ত। জামাল ডাকাত হতে পারে এ কথা বিশ্বাস করেন না হাফেজ শাহ আলম। বিএনপি-জামায়াত ঐক্যজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিরোধী দলের মুখ বন্ধ করার যে ঘৃণ্য প্রচেষ্টা চলছে তারই নির্মম শিকার ভদ্র বিনয়ী, নিরীহ, মেধাবী একটি ছেলে জামাল। তার অপরাধ সে ছাত্রলীগ করত, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ছিল। আজ জামাল হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল তৎপর হয়ে উঠেছে। কাপাসিয়া থানার ওসি এবং ছাত্রদলের ছেলেরা যোগসাজশ করে বিভিন্ন তদন্ত কমিটির সামনে মিথ্যা সাক্ষী হাজির করা হয় এবং মিথ্যা বর্ণনা দেওয়া হয়। যেহেতু ওসি নিজেই ছিলেন কথিত ডাকাতি মামলার আইও এবং তার উপস্থিতিতেই জামালকে ধরে আনা হয় সেহেতু তাকে রেখে তদন্ত কতটুকু নিরপেক্ষ হবে তা ভেবে দেখার বিষয় ।

৯/ বুয়েটে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের বন্ধুকযুদ্ধে মেধাবী ছাত্রী সনি নিহত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে দুই কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে বন্ধুকযুদ্ধে বুয়েটের ছাত্রী সাবেকুন নাহার (সনি) নিহত হয়। ২ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে বুয়েটে এ সংঘর্ষ ঘটে বলে পুলিশ জানায়। দুই গ্রুপের মধ্যে পলাশী কাঁচাবাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও দুই গ্রুপের বিরোধ ছিল। নিহত সনি বুয়েটে কেমি কৌশল বিভাগের লেভেল-২ টার্ম-২ এর ছাত্রী ছিল। নিহত সনি মা-বাবার একমাত্র কন্যা সন্তান এবং সবার বড়। প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, ১১ জুন বুয়েটে নির্মাণ ও মেরামত কাজের জন্য টেন্ডার দখল নিয়ে বুয়েটে ছাত্রদলের প্রাক্তন নেতা সাধারণ সম্পাদক মোকাম্মেল হায়াৎ মুক্তি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলের ছাত্রদল নেতা উদ্দীন টগর দুই গ্রুপের মধ্যে বেলা বারোটায় বন্ধুকযুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় সনি ক্লাস না হওয়ায় হোস্টেলে ফেরার পথে তলপেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। সুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

 

 (সূত্র: শেখ হাসিনা রচনা সমগ্র-২।। পৃষ্টা:৪৪-৪৬)



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭