ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ: তিন শতাধিক বাংলাদেশির বিরুদ্ধে চলছে তদন্ত


প্রকাশ: 12/10/2023


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট ‘আন্তর্জাতিক অর্থপাচার এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ’ কর্মসূচির আওতায় এক হাজার সাতশো পঁচিশ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। এর মধ্যে ৩১৭ জন বাংলাদেশী। এরা কোন পন্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ এনেছেন এবং সম্পদ গড়েছেন তা নিয়ে তদন্ত করছে মার্কিন প্রশাসন। এই তদন্তে ইতিমধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত তিনজনের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এদের একজন সাবেক আমলা, একজন ব্যবসায়ী অন্যজনে পরিচয় জানা যায়নি। তদন্ত শেষ হলে এরা যদি দোষী প্রমাণিত হন তাহলে তাদের সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হবে। তবে এটি বাংলাদেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র বা মানবাধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। 

জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হবার সময় ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র অর্থ পাচার প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে। তিনি প্রেসিডেন্ট হবার পর এব্যাপারে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেন। অবৈধ এবং পাচারকৃত অর্থ জঙ্গি অর্থায়ন এবং সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয় এরকম বিশ্বাস থেকেই যুক্তরাষ্ট্র দুর্নীতি বিরোধী এবং মানি লন্ডারিং কার্যক্রম জোরদার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে যাদের সম্পদ রয়েছে সেই সমস্ত অভিবাসীরা বৈধ ভাবে এই সম্পদের মালিক হয়েছেন কিনা সেটিই এই অভিযানের প্রধান লক্ষ্য। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে বাড়ি-ঘর সহ বিভিন্ন সম্পদ গড়েছেন। এদের বেশির ভাগই বৈধপথে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন। ব্যাংক ঋণ, ব্যবসায় বা চাকরির মাধ্যমে বাড়ি-ঘর বা স্থাবর সম্পত্তি কিনেছেন। কিন্তু এরকম ৩১৭ জন বাংলাদেশি অভিবাসী পাওয়া গেছে যাদের সম্পদের বৈধ উৎস জানা নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরা সম্পদ কিনেছেন নগদ অর্থে। এরা বাড়ি-ঘর বা অন্য বিষয় সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংকিং চ্যানেল অনুসরণ করেননি। আবার কেউ কেউ সম্পদের প্রকৃত মূল্য গোপন করে কম মূল্য দেখিয়ে বাড়ি-ঘর কিনেছেন। 

যে ৩১৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে প্রায় শতাধিক ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। এদের মধ্যে বিএনপিরও বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। বিএনপির অন্তত একজন স্থায়ী কমিটির সদস্যের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লোরিডায় বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। তার নিকট আত্মীয় ঐ সম্পত্তি দেখভাল করেন। নিউ জার্সিতে তার একটি হোটেলও রয়েছে। এসব তিনি বৈধ পন্থায় কেনেননি বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে এই টাকা পাঠানো হয়নি। 

বিএনপির একজন সাবেক জনপ্রিয় প্রয়াত নেতার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে তার দুটি দোকান, জ্যাকসন হাইটে বেনামে তিনটি দোকানের মালিকানা তার বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই তিনি মারা গেলে তার ঘনিষ্ট একজন রাজনৈতিক কর্মী এসব দেখাশোনা করছেন। ২৮ সেপ্টেম্বর ঐ রাজনৈতিক কর্মীকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ প্রায় তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে। একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন তিনি বেনামে যুক্তরাষ্ট্রে তিনটি বাড়ী কিনেছেন। এর মধ্যে দুটি বাড়ি তিনি কেনেন হাইকোর্টে বিচারপতি থাকা অবস্থায়। বেনামে রাখা এই সম্পত্তি নিয়ে তদন্তে তার নাম এসেছে। 

আওয়ামী লীগের প্রয়াত এক প্রভাবশালী নেতার পুত্রের নামে নিউ ইয়র্কে একাধিক বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এনিয়ে তিনিও তদন্তের মুখে। স্বাস্থ্যখাতে শীর্ষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত একজন বিতর্কিত ব্যবসায়ী বর্তমানে মার্কিন প্রশাসনের নজর দারিতে রয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ পন্থায় প্রায় মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে তদন্ত চলছে এরকম ৩১৭ জনের বিরুদ্ধে। তদন্ত শেষ হলে জানা যাবে, কারা কারা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ভাবে গড়া সম্পদের মালিকানা হারাচ্ছেন। কাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত হচ্ছে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭