ইনসাইড পলিটিক্স

জাতীয় নির্বাচনেও গাজীপুর মডেলের ভাবনা আওয়ামী লীগের


প্রকাশ: 14/10/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে তা নিয়ে নানামুখী আলাপ আলোচনা চলছে। তবে এই নির্বাচনে যে বিএনপি শেষ পর্যন্ত দলগতভাবে অংশগ্রহণ করবে না এটা মোটামুটি নিশ্চিত। বিএনপি যে অবস্থান গ্রহণ করেছে তাতে তাদের নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আওয়ামী লীগেরও একটি বড় অংশ চাচ্ছে না যে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেই তারা নির্বাচনকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে। এই ভাবনা থেকে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ছাড়াই আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।

এই নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে মাঠে নামানোর জন্য আওয়ামী লীগ কাজ শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছেন। এখন পর্যন্ত কমবেশি ৩২টি রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে একটি ধারণা পাওয়া গেছে।

তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, এই নির্বাচনে কে অংশগ্রহণ করলো, কে অংশগ্রহণ করল না সেটির চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ হল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের একটি চরিত্র দেওয়া। অন্তত ৪০ থেকে ৫০ ভাগ ভোটার যেন ভোটকেন্দ্রে যেয়ে ভোট প্রদান করে, সেটি যেমন নিশ্চিত করতে হবে, আবার নির্বাচন হতে হবে অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ।

কিন্তু বিএনপি ছাড়া অন্যান্য যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করবে তাদের ব্যাপারে জনগণের কতটুকু আগ্রহ আছে এই নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেকের সংশয় রয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের অনেকেই মনে করেন যে, এই ধরনের নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি, জাতীয় পার্টি ইত্যাদি ভোটারদের আগ্রহ তৈরি করতে পারবে না। আর এই কারণেই আওয়ামী লীগের মধ্যে গাজীপুর মডেলের ভাবনা এসেছে।

গাজীপুরের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জাহাঙ্গীর এবং তার মা এই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। আজমত উল্লাহর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। তবে তার মা এই নির্বাচনকে একটি উত্তেজনার আবহাওয়া দিয়েছিলেন। সে কারণেই ভোটারদের উপস্থিতি বেড়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত একটি প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হয়েছিল।

জাহাঙ্গীরকে সেই সময় বহিস্কার করা হলেও এখন জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। তার মা ইতিমধ্যে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা মনে করছেন যে, আওয়ামী লীগের এবার প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় তিন থেকে পাঁচজন প্রার্থী রয়েছেন। মনোনয়ন পাবেন একজন প্রার্থী। বাকি প্রার্থীদের মধ্যে যদি একজন দুইজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাহলে নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হবে, আগ্রহ তৈরি হবে এবং ভোটার উপস্থিতিও বাড়তে পারে।

২০১৪ সালে এ ধরনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিল অনেকেই। কিন্তু তাদেরকে কঠোরভাবে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৫৩ আসনে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন সংসদ সদস্যরা। এবার যেন সেরকম ঘটনা না ঘটে সেই জন্য এখন থেকেই আওয়ামী লীগ সতর্ক। আর তাই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এবার বসিয়ে দেওয়া হবে না। বরং প্রচ্ছন্নভাবে তারা যেন নির্বাচনের প্রার্থী হয় সে ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেওয়া হতে পারে। এর ফলে যারা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী যারা মনোনয়ন পাবেন না তারা স্বতন্ত্র হিসাবে দাঁড়িয়ে নির্বাচনকে জমজমাট করে তুলতে পারেন বলে কেউ কেউ মনে করছেন। বিশেষ করে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে জনপ্রিয় প্রার্থী রয়েছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা মনোনয়ন নাও পেতে পারে।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বড় পরিবর্তন নাও হতে পারে। আওয়ামী লীগের বর্তমানে যারা সংসদ সদস্য আছেন তাদের অন্তত অর্ধেককে বাদ দেওয়র একটা গুঞ্জন রয়ছে। কিন্তু বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে আওয়ামী লীগ হয়তো বড় ধরনের প্রার্থীতা পরিবর্তন করবে না। অনেক অযোগ্য ব্যর্থ এবং জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিকেও শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হিসাবে দেখা যেতে পারে। আর এর ফলে তৃণমূলে ক্ষোভ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়বে এবং তারা নির্বাচনের ব্যাপারে উৎসাহী হবে।

এর আগেও উপজেলা নির্বাচন এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি দেখা গিয়েছিল এবং বিদ্রোহী প্রার্থীরা বড় ধরনের চমক দিয়েছিল। জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এরকম চমক হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগ এই গাজীপুর মডেলের ব্যাপারে আগ্রহী এই কারণে যে এর ফলে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে, আর নির্বাচন সরকার যেকোনো মূল্যে আবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করবে। ভোটার উপস্থিতি বাড়লে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭