ইনসাইড পলিটিক্স

আগে নির্বাচন তারপর পরিস্থিতি সামাল দিতে চায় আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 15/10/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য হলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করা। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন করাটাই আওয়ামী লীগের এখন একমাত্র লক্ষ্য। এরপর যে পরিস্থিতিগুলো হবে সেই পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ নির্বাচনের পরেই সামাল দেবে। আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা বলেছেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদ আগামী ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। যেকোনো মূল্যে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে এবং নতুন সরকার গঠন করতে হবে। নতুন সরকার গঠিত হবার পরপরই সেই সরকার লাইফ লাইন পাবে। তার মেয়াদ হবে আরও পাঁচ বছর। তখন সরকার অফুরন্ত সময় পাবে সমস্ত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংকট নিরসনের জন্য। তখন নির্বাচিত সরকার বিভিন্ন মহলে দরকষাকষি বা দেন দরবার করার সুযোগ পাবে। 

আওয়ামী লীগ মনে করছে যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে ছাড়া একটি নির্বাচন হয় তাহলে হাতে গোনা কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। তবে আওয়ামী লীগ মনে করছে যে রাশিয়া, চীন, ভারত, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, জাপান, ইউরোপের যুক্তরাজ্য, ইউরোপের ফ্রান্স সহ বেশ কিছু দেশ এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য বড় রাষ্ট্রগুলোর স্বীকৃতি পেতে সরকারের সমস্যা হবে না। ফলে সরকার নির্বাচনটা যেভাবেই হোক না কেন একটি আন্তর্জাতিক বৈধতা আপনা আপনি ভাবে পেয়ে যাবে। কিন্তু নির্বাচন যদি পিছিয়ে যায় বা নির্বাচন যদি সংবিধান সম্মত সময়ে না হয় তাহলে সেই বৈধতা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে এবং তখনই একটি অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতায় আসার সুযোগ তৈরি হতে পারে। যেটি আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই হতে দেবে না। এরকম পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বিভিন্ন রকমের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে, অনেকের ওপর  ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবে যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাইজেরিয়ায় এবং কম্বোডিয়ার ক্ষেত্রে দিয়েছে। কিন্তৃ এ ধরনের বিধি নিষেধ এবং নিষেধাজ্ঞা খুব একটা কার্যকর হয় না সেটাতে আওয়ামী লীগ দেখেছে। তাছাড়া এই এর পরপরই আওয়ামী লীগ তার কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলাপ আলোচনা এবং সংলাপের মধ্যে দিয়ে পরিস্থিতি  সামাল দেওয়ার চেষ্টা করবে। 

আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ভাববার বিষয় হলো নির্বাচনের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। নির্বাচনের পর বিএনপি আন্দোলন অব্যাহত রাখতে পারে এমন বার্তা আওয়ামী লীগের কাছে রয়েছে। বিএনপির সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে যে সমস্ত খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে বিএনপির পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে যে নির্বাচন পর্যন্ত তারা নির্বাচন প্রতিরোধের আন্দোলন করবে এবং নির্বাচনের পরে তারা  সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে। যে আন্দোলনে তাদের লক্ষ্য হবে সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করা এবং আন্তর্জাতিক ভাবে যেন সরকার স্বীকৃতি না পায় সে চেষ্টা করা। সেক্ষেত্রে বিএনপি দেশে জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুরের রাজনীতি করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ মনে করছে, যখনই নতুন সরকার গঠিত হবে তখন নতুন সরকার পাঁচ বছর মেয়াদ হবে। কাজেই এই সময়ের মধ্যে বিএনপির আন্দোলনকে কঠোরভাবে দমন করা সরকারের জন্য কঠিন হবে না। এখন যেহেতু মেয়াদের শেষ প্রান্তে সরকার অনেক কিছুই তার ইচ্ছা অনুযায়ী করছে না। অনেক কিছু ভাবতে হচ্ছে, নির্বাচনকে মাথায় নিতে হচ্ছে কিন্তু তখন বিষয়টি তেমন হবে না। ফলে একটি ভিন্ন পরিস্থিতিতে সরকার প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশ সামাল দিতে পারবে।

তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক দুরাবস্থার বিষয়টিও সরকার নির্বাচনের পরেই ভাবতে চাচ্ছে। সরকার মনে করছে যে বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভ  কমা বা অন্যান্য যে অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়গুলো আছে তা সরকার জানুয়ারি পর্যন্ত সামাল দিতে পারবে। নতুন সরকার আসার পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করবে এবং যেভাবে কর্মসূচি নেওয়া হবে তাতে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠা সরকারের জন্য খুব বড় ধরনের সমস্যা হবে না। কারণ এই সরকারই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপর নিয়ে গিয়েছিল। কাজেই আবার নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিশেষ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান, অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানের মাধ্যমে সরকার পরিস্থিতিকে তার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে পারবে বলে মনে করছে। কাজেই নির্বাচনই সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। কাজেই আগে নির্বাচন তারপর পরিস্থিতি সামাল দিতে চায় আওয়ামী লীগ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭