ইনসাইড পলিটিক্স

উন্মুক্ত নির্বাচন: সরব হচ্ছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা


প্রকাশ: 15/10/2023


Thumbnail

বিএনপি নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগ উন্মুক্ত নির্বাচন করবে অনেকগুলো আসনে। যে সমস্ত আসনে প্রার্থীদেরকে পছন্দ করবেন না সাধারণ আওয়ামী লীগের কর্মীরা বা তৃণমূলের নেতারা তারা সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী দেবেন। আর বিদ্রোহী প্রার্থী দিলে নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ উৎসব মুখর। আর এ কারণেই এখন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ইতিমধ্যে মাঠে তারা নেমেছেন। আওয়ামী লীগের অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী মনে করছেন যাকেই প্রার্থী দেওয়া হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে উন্মুক্ত। উন্মুক্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভুল প্রার্থী দিলে তার বিরুদ্ধে তারা দাঁড়াবেন। যেভাবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিপ্লব ঘটিয়েছিল। সেরকম একটি বিপ্লব জাতীয় নির্বাচনেও ঘটতে যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন। আর এই কারণে যারা নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন, যাদেরকে এতদিন ধরে আওয়ামী লীগ সতর্কবার্তা দিয়েছিল যে দলের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রার্থী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তারাই এখন আবার মাঠে নেমেছেন, সরব হয়েছেন। 

বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় যারা মনোনয়ন পাবেন না বলে আশাহত হয়ে ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন এবং যে সমস্ত এলাকায় দলের পছন্দের বাইরে বিতর্কিত প্রার্থীরাই আবার মনোনয়ন পাবে বলে অনেকে হতাশা প্রকাশ করছিলেন সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা চাঙ্গা ভাব রয়েছে। তারা মনে করছেন স্বতন্ত্র হলেও তারা নির্বাচনে যাবেন এবং স্বতন্ত্র হলে তাদেরকে ফেলে দেওয়া হবে না। 

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক মহলও মনে করছেন নির্বাচন যদি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় তাহলে বহু বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়াবে। এর ফলে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে, নির্বাচন হবে উৎসব মুখর এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও জেতে তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য কোন ক্ষতি নেই।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, সারাদেশে যে আওয়ামী লীগের জরিপে হচ্ছিল সেই জরিপে অন্তত দেড়শো আসনে নতুন প্রার্থী দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। কারণ গত নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের মধ্যে অন্তত দেড়শো জনের এলাকায় অবস্থা অন্তত খারাপ। তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জিততে পারবেন না। বিশেষ করে বিএনপি সহ বিরোধী দল যদি সেই নির্বাচনগুলোতে প্রার্থী হয় তাহলে আওয়ামী লীগের অবস্থা শোচনীয় হবে। এই জন্য আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি ভাবনা ছিল যে যোগ্য জনপ্রিয় প্রার্থীদেরকে বাছাই করা। কিন্তু যখন ধারণা করা হচ্ছে যে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে না এবং বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি থেকেও নিজেদেরকে গুটিয়ে নিচ্ছে তখন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ভাবনার পরিবর্তন হয়েছে। 

আওয়ামী লীগ ভালো মতই জানে যে বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হলে সেই নির্বাচন নিষ্প্রাণ হয়ে যেতে পারে। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে বসিয়ে দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে পারেন। তাছাড়া যতই সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হোক না কেন তৃণমূল বিএনপি বা জাতীয় পার্টির সারাদেশে এরকম জনপ্রিয়তা নেই যে তাদের কারণে জনগণ ভোট দিতে আসবে। আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতে যাচ্ছে এমন প্রত্যাশা করে তারা ঘরে বসে থাকবেন। যেটি বিভিন্ন উপনির্বাচনে দেখা গেছে। সেই অবস্থা হলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য  বড় ধরনের একটি সংকট তৈরি হবে নতুন সরকারের জন্য। সেটি যেন না হয় সেজন্যই আওয়ামী লীগ প্রার্থী তা উন্মুক্ত করে দেবে এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়নের বাইরে যারা মনোনয়ন পাবে না তাদের মধ্যে থেকে যদি কেউ জনপ্রিয় প্রার্থী হয় তারা স্বতন্ত্র দাঁড়ালে আওয়ামী লীগ সেটাকে উপেক্ষা করবে। 

তাছাড়া এরকম একটি নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগও তার প্রার্থীতায় খুব বড় ধরনের পরিবর্তন করবে না বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। একেবারে বিতর্কিত, একেবারেই অজনপ্রিয় ছাড়া  প্রার্থীদেরকে বাদ দেওয়া হবে না। এমনকি বয়সের কারণে, অসুস্থতার কারণে যাদেরকে আগামী নির্বাচনের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছিল না তাদেরকেও হয়তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ করে দেওয়া হবে শেষবারের মতো। এরকম পরিস্থিতিতে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা আওয়ামী লীগের বাড়বে। আর এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ উদারতা দেখাতে পারে এমন বার্তা তৃণমূলের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে তৃণমূলের যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন, যারা নির্বাচনে টাকা বা পেশিশক্তির কাছে পরাজিত হয়ে মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন তারা নতুন করে মাঠে নামছেন। এর ফলে বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও নির্বাচনী উত্তাপ তৃণমূল পর্যায়ে বেড়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ হয়েই আগামী নির্বাচনকে একটি ব্যাপক অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে করতে পারে এমন একটি পরিকল্পনা ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে মাঠে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭