লিভিং ইনসাইড

যে ভা‌বে দিন শুরু কর‌লে সারা‌দিন ভা‌লো যা‌বে


প্রকাশ: 16/10/2023


Thumbnail

আপনি ফুরফুরে একটা মেজাজ নিয়ে সকালটা যদি শুরু করতে পারেন, তবে সারাটাদিন আপনি আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্বাছন্দে কঠিন পরিশ্রম করতে পারবেন। আর এই কঠিন পরিশ্রমই হচ্ছে সফলতার মূলমন্ত্র যার পেছনে আছে অনুপ্রেরণা, উচ্চাশা এবং তীব্র ইচ্ছা। আর এগুলো আপনার মাঝে তৈরি হবে, যদি আপনি প্রতিদিন সকালে কিছু কাজ অভ্যাসে পরিনত করতে পারেন।

সকালের ৬টি কাজ নিয়ে হ্যাল ইলরোড তাঁর দ্যা মিরাকেল মর্নিং বইয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। চলুন সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক সকালের সেই সেই কাজগু‌লো।

এক, নামাজ বা প্রার্থণা বা ধ্যান ।

বর্তমানে আমাদের প্রায় সবারই সকাল শুরু হয় মোবাইল ফোনের স্কিনে চোখ রেখে, ফেসবুক, মেসেঞ্জার চেক করে বা পেপার পড়ে মন খারাপ করা সব তথ্য বা সংবাদ নিয়ে। ফলে মনের অজান্তেই দিনের শুরুটাই হয় নেগেটিভ চিন্তা দিয়ে যা সারাদিন এসব মনে না পড়লেও সেই নেগেটিভ অনুভূতিটা আমাদের মাঝে থেকে যায়।

তাই স্টিভ জবস মতো সফল মানুষরা সকালে উঠেই সাইলেন্ট মুডে চলে যান। সাইলেন্ট মুডে যাওয়া মানে নামাজ বা প্রার্থনা, যোগা, মেডিটেশন ইত্যাদি করা। সাইলেন্ট মুডের মাধ্যমে একটি পজিটিভ মনোভাব নিয়ে ঠান্ডা মাথায় দিনের শুরুটা হয় । আবার এতে আমাদের মস্তিষ্কে এমন একটি সুস্থির অবস্থার সৃষ্টি হয়, যাতে দিনের অন্যান্য কাজগুলি সঠিকভাবে করার একাগ্রতা অর্জিত হয় যার ফলাফল পাওয়া যায় পজিটিভ ।

খুব সকালে উঠে ফজরের নামাজ বা প্রার্থনা বা মেডিটেশনের সময় চোখ বন্ধ করে নিজের জীবন, শরীর, আজকের দিনে সকাল দেখতে পারা– ইত্যাদির জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালে, মনের ভেতর দারুন একটা পজিটিভ অনুভূতি সৃষ্টি হয়, যা সারাদিন আপনাকে পজিটিভ ও আত্মবিশ্বাসী থাকতে সাহায্য করবে।

দুই, পজিটিভ বিষয়ে নিজের সাথেই একান্তে কথা বলা।

সফল মানুষরা নিয়মিত সকালবেলায় অবচেতন মনে পজিটিভ বিষয়টি স্থায়ী করার জন্য নিজের সাথেই নিজে একান্তে কথা বলেন। আপনিও এই কাজটি করতে পারেন এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন যে আপনি কেমন স্থানে নিজেকে দেখতে চান এবং সেটা কেন চান? আর সেইসঙ্গে নিজেকে প্রশ্ন করুন যে, ওই স্থানে পৌঁছাতে আপনি কি কি পদক্ষেপ নিতে পারবেন? বা তার জন্য আপনি কতটাই ত্যাগ স্বীকার করতে পারবেন । নিজের সাথে কথা বলার এই অভ্যাসটিই বদলে দেবে আপনার সমস্ত ধারণা,কর্মক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত নেবার পদ্ধতি ।

ধরুন আপনি ঠিক করেছেন আগামী ১ বছরের মধ্যে আপনি ১০ লক্ষ টাকা আয় করবেন। এখন যদি প্রতিদিন সকালে উঠে মেডিটেশন বা প্রার্থনা করার পর কয়েক মিনিটের জন্য বার বার বলতে থাকেন,“আমি আগামী এক বছরের মধ্যে মাসে ১০ লক্ষ টাকা আয় করবো”– তাহলে এটা আপনার অবচেতন মনে স্থায়ী হয়ে যাবে। এবং আপনি নিজে থেকেই এই লক্ষ্য পূরণে যা করা দরকার তাই করতে শুরু করবেন। সেইসাথে লক্ষ্য যত বড়ই হোক, বার বার নিজেকে এই কথা শোনাতে শোনাতে সেটা সহজ মনে হওয়া শুরু হবে।

তিন,  মনছবি বা কল্পনা

আপনি যে লক্ষ্য পূরণ করতে চাইছেন সেটা প্রতিদিন কল্পনায় দেখতে থাকলে– তবে কিছুদিনের মধ্যে সেটা নিজেই অবচেতন মনে তা আপনি বাস্তব ভাবা শুরু করবেন এবং নিজের মাঝে বিশ্বাস তৈরি হবে। তখন আপনি নিজে থেকেই সেই লক্ষ্য পূরণে যা করা প্রয়োজন – তার সবই আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে পরিশ্রম করা শুরু করবেন।

এ কথাটিই লেখক ‘হ্যাল ইলরোড’ তাঁর Miracle Morning বইয়ে তুলে ধরেন যে, লক্ষ্য যত কঠিনই হোক, যদি বার বার একজন মানুষ সেই লক্ষ্য সফল হওয়ার কথা নিজেকে বলে, আর কল্পনা করে যে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে– তবে খুব তাড়াতাড়িই সেই লক্ষ্য পূরণ করা সহজ মনে হওয়া শুরু হবে, এবং সে সেই লক্ষ্য পূরণের জন্যকাজ করা শুরু করবে।

৪.ব্যায়াম

আপনি সকালে এক্সারসাইজ করলে আপনার হার্ট শরীর ও মস্তিষ্কে বেশি পরিমানে রক্তের যোগান দেবে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গের সক্ষমতা যেমন বাড়ে তেমনি মস্তিষ্কে বেশি পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহের ফলে ক্লান্তিহীন ও সুন্দরভাবে কাজ করার জন্য মস্তিষ্ককে তৈরি করে দেয় যা আপনাকে একটি সুন্দর দিন শুরু করতে সাহায্য করবে। এখানে লেখক ‘হ্যাল ইলরোড” লিখেছেন যে, প্রতি সকালে মাত্র ১ মিনিট টানা লাফালে আপনার মস্তিষ্ক ও শরীর সাধারণের চেয়ে ১০ গুণ পারফেকশনের সাথে কাজ করবে। এজন্য আপনাকে শরীরচর্চার জন্য কোন জিমে যেতে হবে না । খালি হাতেই সেসব ব্যায়াম করা যায় , সেগুলি করার জন্য লেখক বলেছেন ।

৫. বই পড়া

বিল গেটস কিংবা Warren Buffett এর মতো বিশ্বসেরা ধনী এবং সফল মানুষেরা বই পড়ার মধ্য দিয়ে তাঁদের সকাল বেলাটা শুরু করেন।Joseph Addison বলেন “Reading is to the mind what exercise is to the body ” জী হ্যাঁ ,ব্যায়াম যেমন আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে তেমনি বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মনকে সুস্থ ও আনন্দিত রাখতে পারি ।

বই পড়ার অভ্যাস মানসিক চাপ কমায়, মনোযোগ বৃদ্ধি করে এবং দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদী স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায়। যুক্তরাজ্যের Sussex বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের মতে, ‘মাত্র ছয় মিনিটের জন্য বই পড়লে স্ট্রেস লেভেল ৬৮% পর্যন্ত কমে যায়, যেখানে হাঁটায় ৪২%, কফি পান করলে ৫৪% গান শুনলে ৬১% স্ট্রেস লেভেল কমে যায়।

মিরাকেল মর্নিং বইয়ে লেখকহ্যাল বলেন,

‘দিনের শুরুতে ভালো একটি বই বিশেষ করে সেলফ ডেভেলপমেন্ট টাইপের বই পড়লে মানুষের মস্তিষ্কে যে উদ্দীপনা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয় তা মানুষের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।“

এছাড়াও ধর্মগ্রন্থ বা মোটিভেশনাল উক্তি পড়া, কিংবা মোটিভেশনাল অডিও শুনতে পারেন।

৬. লেখা

দিনের শুরুতে কাগজ কলম নিয়ে আপনার নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্নের কথা, বা আজকের দিনে কি করবেন সেই পরিকল্পনা অথবা মেডিটেশন বা বই থেকে আজকের উপলব্ধির কথাও লিখে রাখতে পারেন। যদি নিজের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপ এবং তার ফলাফল ডায়েরিতে লেখা থাকে, তাহলে পরবর্তী কাজগুলোতে ভুলত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।

লেখক বলেন, সকালের এই লেখাটি কম্পিউটার বা ফোনে লেখার চেয়ে কাগজ-কলমে লেখার চেষ্টা করবেন। কাগজ-কলমের লেখায় অনেক বেশি যত্ন থাকে, আর চিন্তা ভাবনাও অনেক ক্লিয়ার হয়। গবেষনায় দেখা গেছে, হাতে লেখা আইডিয়া জ্ঞানগর্ভ অনুশীলনের সমান।

পরিশেষে বলবো যে, সকাল আটটার মধ্যেই এই কাজগু‌লো করার অভ্যাস করতে পারলে আপনি আপনার লক্ষ্য পূরণ করে সাফল্যের মুখ দেখবেন- এটাই বিশ্বাস করা যায়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭