ইনসাইড পলিটিক্স

যে বিষয়ে নির্বাচন নিয়ে সংলাপ হতে পারে


প্রকাশ: 16/10/2023


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা এবং সংলাপের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। সংলাপ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। আওয়ামী লীগ বলেছে যে শর্তহীন যেকোনো সংলাপে আওয়ামী লীগ রাজি। অন্যদিকে বিএনপি বলেছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নীতিগতভাবে মেনে নিলেই কেবল সংলাপ হতে পারে। এরকম অবস্থায় সংলাপ নানা শর্তের বেড়াজালে আটকা পড়ে গেছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে, নানা রকম শর্ত থাকলেও শেষ পর্যন্ত সংলাপ হতে পারে। আর এই সংলাপ হওয়ার ক্ষেত্রে কতগুলো ইতিবাচক দিক সামনে এনেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন যে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হতেই পারে এবং সেই আলোচনা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করতে পারে। 

যেসব বিষয় নিয়ে দুটি রাজনৈতিক দল সমঝোতায় বসতে পারে তার মধ্যে রয়েছে-

১. নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা: অনেকেই মনে করেন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয় বরং একটি শক্তিশালী স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের জন্য সরকার যেমন ভূমিকা রাখতে পারে তেমনি বিরোধী দলও ভূমিকা রাখতে পারে। আর এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের বর্তমান আইনের কি কি ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে সেগুলোতে কতটুকু সংশোধন করা যায় এবং নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়ে উভয় পক্ষ আলোচনা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে নির্বাচন হতে পারে যেখানে নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হবে। কাজেই এটি নিয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমত এবং সমঝোতা হতেই পারে। যদি দুই পক্ষ আলোচনার টেবিলে বসে এবং একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে ঐক্যমত হয় তাহলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ অনেকটাই উন্মুক্ত হবে। যেমন- নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি। তারা যে কোন নির্বাচন বাতিল করার যে ক্ষমতা চেয়েছিল সেটি যদি তাদেরকে দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন একাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যথেষ্ট বলে অনেকে মনে করেন। 

২. প্রশাসনের নিরপেক্ষতা: নির্বাচনের সময় মাঠ প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন করে তাহলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। বিরোধী পক্ষ যদি এই সময় সরকারের কাছে কিভাবে প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকতে পারে সে ব্যাপারে একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা দেয় তাহলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ অনেকটাই প্রশস্ত হয়। কাজেই এই নিয়ে দুই পক্ষের আলোচনা হতেই পারে।

৩. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখে। তাদের সামান্য পক্ষপাতও একটা নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাবিত করতে পারে। অতীতের নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন যার পক্ষে কিছুটা হলেও অবস্থান নিয়েছে সেই নির্বাচনে ফলাফল প্রভাবিত হয়েছে। একটি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে বাধ্য। তা যে সরকারই হোক না কেন। এখন দুটি রাজনৈতিক দল যদি আলোচনায় বসে কিভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে তা নির্ধারণ করে তাহলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। 

৪. বিরোধী দলের মামলা হামলা: বিরোধী দলের মামলা হামলার বিষয়টি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে একটি বড় বাধা বলে অনেকে মনে করছেন। বিশেষ করে বিএনপির একাধিক নেতা নানা রকম মামলার ভারে জর্জরিত। কেউ নির্বাচনে অযোগ্য হয়েছেন। এই জায়গায় যদি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল যদি ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তারা যদি মনে করে যে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বিরোধী দলকে কিছু ছাড় দেওয়া হবে এবং তাদের মামলা এবং বিশেষ করে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো স্থগিত রাখা হবে তাহলেও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তা ভূমিকা রাখতে পারে।

৫. লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড: নির্বাচনের সময় যদি সরকারের ক্ষমতা কতৃত্ত্ব সীমিত করা হয়, রুটিন কাজের মধ্যে যদি তাদের রাখা হয় এবং সকল রাজনৈতিক দলকে যদি সমান সুযোগ সুবিধা করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো একটি চুক্তিতে পৌঁছায় তাহলেও একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ভূমিকা রাখতে পারে। 

এরকম বেশ কিছু বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দূরত্ব কমাতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটি এসেছে যে সেই সময় একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকবে যারা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে। তারা কোনো ভূমিকা পালন করবে না। কিন্তু দলীয় সরকার রেখেও যদি এই বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমতে পৌঁছে তাহলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ অনেকটাই উন্মুক্ত হয়ে যাবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭