ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশ নিয়ে ভারত কি তার অবস্থান পাল্টাচ্ছে?


প্রকাশ: 16/10/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে, বর্তমান সরকার ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রাখতে পারবে কিনা, টানা চতুর্থ বারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারবে কিনা ইত্যাদি নানা প্রশ্ন এখন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে। আর এই প্রশ্নের উত্তরে আন্তর্জাতিক বিশ্ব দ্বিধা বিভক্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টত সরকারের ওপর চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে এতদিন পর্যন্ত ভারতের অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। ভারত মনে করত বাংলাদেশে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা দরকার। কারণ ক্ষমতার ধারাবাহিকতা যদি না থাকে তাহলে ভারতের স্থিতিশীলতা এবং শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে। কারণ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রকোপ বন্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আর এ কারণেই ভারত রাষ্ট্র পরিচালনার ধারাবাহিকতা দেখতে চায় এবং ভারত সবসময় মনে করে যে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এটাই ভারত প্রত্যাশা করে। তবে ভারত এটাও মনে করে যে বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক। কিন্তু সেই জায়গা থেকে ভারত কি সরে এসেছে? 

সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছেন, আমাদের সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে, সে দেশের জনগণের সঙ্গে, কোনো নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে নয়। এতদিন ধরে ভারতের মনোভাব ছিল সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা বেড়ে যাবে। তাছাড়া বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতার উত্থান ঘটবে এমন আশঙ্কা ভারত প্রকাশ করে আসছিল। বিশেষ করে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশে আশ্রয় প্রশয় দেওয়া চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপারে শুন্য সহিষ্ণুতা যে নীতি গ্রহণ করেছেন সেই নীতির ধারা অব্যাহত রেখেছেন। ফলে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের জন্য ভারতকে যে বিপুল অঙ্কের ব্যয় করতে হতো সেই ব্যয় এখন সম্পূর্ণভাবে কমে এসেছে। আর এই কারণেই ভারত শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প দেখেন না। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্যের পর এখন নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাহলে কি ভারত তার অবস্থান বদলেছে? বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন রকম আলাপ আলোচনার পরও তাদের অবস্থান পাল্টায়নি। বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা সহ বিভিন্ন শর্ত আরোপ করছে ঠিক সেই সময় ভারতের সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো বিশেষ দলের সঙ্গে নয় এ ধরনের বার্তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে বলে অনেকে মনে করছেন।

তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি আনুষ্ঠানিক কথাবার্তা। ভারতের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ভারত সবসময় মনে করে বাংলাদেশে একটি অসাম্প্রদায়িক সরকার ক্ষমতায় থাকুক। কারণ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, বিচ্ছিন্নতাবাদী দমন এবং দুই দেশের মধ্যে যে সংযোগ তা অব্যাহত রাখতে গেলে বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের কোনো বিকল্প এই মুহূর্তে নাই। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনারও বিকল্প নাই। এছাড়াও ভারত মনে করে যে বাংলাদেশে যদি একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলে তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না। কারণ ২০০৭ সালে এক-এগারো আনার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি ভাবে কাজ করেছিল ভারত এবং দুইটি দেশের প্রচ্ছন্ন সমর্থনেই এক-এগারো সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতা দখল করেছিল। ভারত সেই অভিজ্ঞতায় ফিরে যেতে ফিরে যেতে চায় না বলেই অনেকে মনে করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের নীরবতা এবং এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য নতুন করে এই সমীকরণ গুলোকে সামনে এনেছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭