ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক ধারণা: কূটনৈতিক ব্যর্থতা?


প্রকাশ: 17/10/2023


Thumbnail

বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কমতি নেই। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের একজন উর্দ্ধতন কূটনৈতিক ব্যক্তি ঢাকায় অবস্থান করছেন। আরফিন আখতার বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। আজ তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। কিন্তু তার সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। 

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একের পর এক বিভিন্ন মার্কিন ব্যক্তিত্ব ঢাকায় আসছেন। তাদের যেন দম নেওয়ার ফুরসত নেই। আফরিন আখতার আসার আগেই বাংলাদেশ সফর করে গেছেন এনডিআই এবং এনআরআই এর যৌথ উদ্যোগে গঠিত প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে পাঁচ দফা সুপারিশও পেশ করেছে। এই সুপারিশের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান জানিয়েছে। বিএনপি নীরবতা পালন করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এই সুপারিশের পর বলছে যে শর্তহীন ভাবে যেকোনো আলোচনায় প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন বাংলাদেশের ব্যাপারে এত নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছেন, কেন বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার বার আগ্রাসী ভূমিকা অবতীর্ণ হচ্ছে? আগামী নির্বাচন নিয়েও তাদের এত আগ্রহ কেন? এর উত্তরে অনেকেই মনে করছেন, এটি বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতা।

বিএনপি-জামায়াত এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী বিভিন্ন সুশীল সমাজ যেভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন, পররাষ্ট্র দপ্তর এবং হোয়াইট হাউসকে প্রভাবিত করতে পারছেন ঠিক সেভাবে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা নেই। বরং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একের পর এক বিভিন্ন লাগাম ছাড়া বক্তব্য কূটনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও বিব্রতকর অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেকে। মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াত লবিস্ট ফার্ম নিযুক্ত করেছে। এই লবিস্ট ফার্মগুলো প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল তখন দুই বছর এ নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই শুনানিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস তেমন কোনো ভূমিকাই পালন করেনি। শুধু তাই নয়, যখন এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় তারপর থেকে এটি প্রত্যাহার করার ব্যাপারে কি ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে তা নিয়েও এক ধরনের অস্পষ্টতা এবং ধোঁয়াশা রয়েছে। 

বাংলাদেশকে যখন গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি তখন এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। যা অনেক ক্ষেত্রেই কূটনৈতিক ভাষা নয় বলে অনেকে মনে করেন। শুধু তাই নয়, ইদানিং বাংলাদেশের ব্যাপারে বিএনপি-জামায়াতপন্থী লবিস্টরা যেভাবে বিভিন্ন কংগ্রেসম্যান এবং সিনেটরদেরকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন তার বিপরীত কূটনীতি খুব জোরালো নয়। যদিও এইসব কংগ্রেসম্যান এবং সিনেটরদের কাছে পরবর্তীতে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু ততক্ষনে সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি এবং এই ভিসা নিতে কার্যকর করা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস কি করছে তা নিয়ে নানারকম বিতর্ক এবং প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে মুশফিক ফজল আনসারী কখনো হোয়াইট হাউসে, কখনো জাতিসংঘে বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক প্রশ্ন করছেন এবং সেই প্রশ্নগুলো দিয়েই সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে। একজন বিএনপিপন্থী ব্যক্তি যদি এভাবে হোয়াইট হাউস এবং জাতিসংঘে দাপিয়ে বড়াতে পারেন তাহলে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা তার বিপরীতে কি এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে বাংলাদেশ একটি লবিস্ট ফার্মকে নিযুক্ত করেছে যারা এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য কাজ করবে। সেই লবিস্ট ফার্ম কি কাজ করছে তার সম্পর্কে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন,বাংলাদেশের কারো ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না। কিন্তু তিনি কোথা থেকে, কোন সূত্র থেকে এই বক্তব্য পেয়েছেন তার ব্যাপারেও তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না। সবকিছু মিলিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ গুলো লেজে গোবরে এবং অনেকটাই অকূটনৈতিক বলে অনেকে মনে করছেন। আর এরকম প্রেক্ষাপটেই অনেকে মনে করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ এবং নীতিগুলোর রাজনৈতিক সমালোচনা নয় বরং কূটনৈতিক ভাবে সঠিক পরিস্থিতি উপলব্ধি করানো দরকার। সেক্ষেত্রে আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তর সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বলেই অনেকে মনে করেন। না হলে বাংলাদেশের সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এত নেতিবাচক ধারণা হওয়ার কথা নয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭