প্রকাশ: 18/10/2023
মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতি
আদরের ‘রাসেল সোনা’, শেখ রেহানার ‘রাসুমণি’
আর বঙ্গবন্ধুর প্রাণের সহচর শহীদ শেখ
রাসেল আমাদের আবেগ, আমাদের ভালোবাসার নির্মলতার প্রতীক; দুরন্ত, প্রাণবন্ত ও নির্ভীক শিশুর
প্রতিনিধি। ‘শেখ রাসেল দিবসে’
তোমার ৬০তম জন্মদিনে এই
বাংলাদেশ তোমাকে স্মরণ করছে। মায়াবী দুঃখের মুখ নিয়ে তোমার
স্মৃতি ঘেরা আঙিনাগুলো জেগে
উঠেছে। শ্বেত কপোতের ডানা ঝাপটানো তোমার
সকাল, পুকুরে রূপালি মাছের সঙ্গে সাঁতরানো দুপুর, বিকেলে পিতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
গণভবনের লেক মাড়ানোর গল্প
অথবা সন্ধ্যা-রাতের বত্রিশ নম্বরের বাড়িটির হৈচৈ আর শাসন-বারণের নানা আদর তোমাকে
জড়িয়ে রেখেছে যত্নে। তুমি নেই তাই
৩২ নম্বরের বাড়িটির অবকাঠামো তেমনি থাকলেও পাল্টেছে অনেক কিছুই। বঙ্গমাতা
শেখ মুজিবের কোলে শুয়ে তোমার
ঘুম, বড় বোন হাসু
আপার মমতা মাখানো চেয়ে
থাকা দৃষ্টি, আর ভাবিদের সঙ্গে
দুষ্টামি করে তোমার দিন
কখন গড়িয়ে গেল রাসেল। তোমার
জন্মের পরও বঙ্গবন্ধুকে জেলে
যেতে হয় বারবার। তখন
তুমি ছোট ছিলে বলে
সকলের চোখের মণি হয়ে ওঠ।
তুমি একটু ব্যথা পেলে
সকলের মন কেঁদে উঠত।
সুন্দর তুলতুলে একটা শিশু কার
না প্রিয় হয়। তুমি ছিলে
এদেশের সকলের আপনজন, তুমি ছিলে আগামীর
বাংলাদেশ।
২.
ধানমন্ডি
৩২ নম্বর সড়কের যে বাড়িটিতে ১৯৬৪
সালের ১৮ অক্টোবর তোমার
জন্ম সেখানে এখন সুনসান নীরবতা।
অথচ হেমন্তের সেই দিনটি ছিল
উৎসবের। শেখ হাসিনা লিখেছেন,
‘আমাদের পাঁচ ভাইবোনের সবার
ছোট রাসেল। অনেক বছর পর
একটা ছোট্ট বাচ্চা আমাদের বাসায় ঘর আলো করে
এসেছে, আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। আব্বা
বার্ট্রান্ড রাসেলের খুব ভক্ত ছিলেন,
রাসেলের বই পড়ে মাকে
বাংলায় ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। মা
রাসেলের ফিলোসফি শুনে শুনে এত
ভক্ত হয়ে যান যে
নিজের ছোট সন্তানের নাম
রাসেল রাখেন।’ ১৯৬৪ সালটি ছিল
গুরুত্ববহ বছর। পাকিস্তানিদের রক্তচক্ষু
উপেক্ষা করে এ বছরই
একমাত্র বিরোধী দল হিসেবে বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন বঙ্গবন্ধু।দাসত্বের শৃঙ্খল মুক্ত
করার জন্য স্বাধীনতার পথে
হাঁটা এবং রাসেলের বেড়ে
ওঠা এজন্য সমান্তরাল। আসলে বাঙালির জেগে
ওঠা আর মুক্তিসংগ্রামের প্রতীকী
শিশু শেখ রাসেল।এই শিশু
যে সহিংসতার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে
তার পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য
আজকে আমাদের শপথ নেবার দিন।
৩.
প্রাণবন্ত
রাসেল ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা বা ‘হাসুপা’র
অতি কাছের। অবসর সময় কাটত
তাকে নিয়ে। বাসার সামনের ছোট্ট সবুজ লনে ভাইবোনরা
এই শিশুর সাথে খেলায় মেতে
উঠত। তার হামাগুড়ি দেওয়া,
হাঁটার চেষ্টা সবই স্পষ্ট ছবি
হয়ে আছে এখনো। শেখ
হাসিনাকে ‘হাসুপা’বলে ডাকত। কামাল
ও জামালকে ভাই, আর রেহানাকে
‘দেনা আপু’। কামাল
ও জামালের নাম কখনও বলত
না। অনেক চেষ্টা করার
পর ডেকেছিল-‘কামমাল’, ‘জামমাল’। তবে সব
সময় ‘ভাই’ বলেই ডাকত
তাদের।
শিশুকাল
থেকে চলাফেরায় রাসেলের ছিল সাহসী আর
সাবধানি আচরণ। তার অতি প্রিয়
দুটি সাইকেল এখনও রয়েছে ধানমন্ডির
৩২ নম্বরের বাড়িটিতে। যে সাইকেল নিয়ে
ব্যস্ত সময় কাটতো তার।
১৯৬৬ সালে ৬-দফা
দাবি আদায়ের আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার
হলে রাসেলের মুখের হাসি মুছে যায়।
সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে
রাসেল তার আব্বাকে খুঁজত।
আর তখন তার মহীয়সী
মা বেগম মুজিবও ব্যস্ত
স্বামীর মামলা-মকদ্দমা সামলাতে, পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ সংগঠনের
নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে।
ফলে রাসেলের যত্ন না পাওয়ারই
কথা। কিন্তু শেখ হাসিনা তার
কাছে থেকেছেন। বত্রিশ নম্বর বাড়ির আঙিনা জুড়ে কবুতর ঘুরে
বেড়াত। আর রোজ সকালে
রাসেলকে কোলে নিয়ে বেগম
মুজিব তাদের খাবার দিতেন। রাসেল বড় হতে থাকলে
খেলার সাথি হিসেবে কবুতরের
পেছনে ছোটা আর নিজে
হাতে করে খাবার দেওয়া
অভ্যাসে পরিণত হয়। কিন্তু ওকে
কখনো কবুতরের মাংস খাওয়াতে পারেননি
কেউ। যেন পোষা পাখির
প্রতি বাল্যকাল থেকে তার অন্তরে
মমতা জেগে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু
জেলে থাকার সময়গুলো পিতার অভাব ভুলিয়ে রাখার
জন্য পরিবারের সকলের চেষ্টা থাকত নিরন্তর। বাসায়
পিতার জন্য কান্নাকাটি করলে
বেগম মুজিব তাকে বোঝাতেন এবং
তাকে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন।
শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘মাকেই আব্বা বলে ডাকতে শুরু
করে।’ বঙ্গবন্ধু ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে ১৯৬৭ সালের ৮
ফেব্রুয়ারি স্মৃতির আয়নায় বেদনাসিক্ত বয়ানে প্রিয় পুত্র রাসেলের কথা লিখেছেন- ‘দুই
বৎসরের ছেলেটা এসে ‘আব্বা বালি
চলো’। কি উত্তর
ওকে আমি দেবো? ওকে
ভোলাতে চেষ্টা করলাম। ওতো বুঝে না
আমি কারাবন্দি। ওকে বললাম তোমার
মার বাড়ি তুমি যাও,
আমার বাড়ি আমি থাকি।
আবার দেখতে এসো। ও কি
বুঝতে চায়! কি করে
নিয়ে যাবে এই ছোট্ট
ছেলেটা ওর দুর্বল হাত
দিয়ে মুক্ত করে এই পাষাণ
প্রাচীর থেকে?’ ১৯৬৮ সালের ১৮
জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা মামলায় আসামি করে অজ্ঞাত স্থানে
আটক রাখা হলে পরিবারে
নেমে আসে দুশ্চিন্তার কালো
ছায়া। সেসময় রাসেলের শরীর খারাপ হয়ে
যায়। যেন শিশু মন
টের পায় পিতার সংকট
কতটা গভীর।
১৯৬৮-৬৯ সালের
দিকে সবাই যখন আন্দোলনে
ব্যস্ত তখন সে বাড়ির
কাজের লোকদের সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠে। এমনিভাবে
সে কাজের লোকদের সাথে ভাত খেতে
পছন্দ করতে শিখেছিল। চার
বছর বয়সেই সে বাড়ির পোষা
কুকুর টমির সঙ্গে বন্ধুত্ব
গড়ে নিয়েছিল। টমিকে সে খুবই ভালোবাসতো।
হাতে করে খাবার দিত।
নিজের পছন্দমতো খাবারগুলো টমিকে ভাগ দেওয়া ছিল
একটি কাজ। ১৯৬৯ সালে
২২ ফেব্রুয়ারিতে প্রায় তিন বছর পর
বঙ্গবন্ধু মুক্ত হলে রাসেল খেলার
ফাঁকে ফাঁকে কিছুক্ষণ পরপরই পিতাকে দেখে আসত। পিতা
বাড়ির নিচে অফিস করতেন।
সারাদিন নিচে খেলা করত
সে আর কিছুক্ষণ পরপর
বঙ্গবন্ধুকে দেখতে যেত।
১৯৭১
সালের ২৫ মার্চ ভয়াল
রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলে পরদিন
হামলার মুখে পড়ে মা’র সঙ্গে রাসেলকেও
দেওয়াল টপকে পালাতে হয়।
তারপর দীর্ঘ নয় মাস ধানমন্ডির
১৮ নম্বর বাড়িতে বন্দি থাকতে হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর পাহাড়ায়। তখন রাসেলের দিনগুলো
কেটেছে নিরানন্দে। প্রথমদিকে রাসেল বঙ্গবন্ধুর জন্য খুব কান্নাকাটি
করত। তার ওপর ভাই
কামাল মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ায় তাকে পায়নি, সেটাও
তার জন্য কষ্টকর ছিল।
মনের কষ্টে চোখের কোণে সব সময়
পানি থাকত তার। তবে
ছোটবেলা থেকে মনের কষ্ট
নিজেই বহন করতে শিখেছিল
রাসেল। ১৯৭১ সালে সজীব
ওয়াজেদ জয়ের জন্ম হলে
বন্দিখানায় তার আনন্দ সঙ্গী
জুটেছিল। সারাক্ষণ তার পাশেই থাকত
সে। একাত্তরে ঢাকায় বিমান হামলার সময় রাসেল তুলা
নিয়ে এসে জয়ের কানে
গুঁজে দিত। স্নেহ-মমতায়
অন্তরপূর্ণ সার্থক মানুষ হয়ে উঠছিল সে।
৪.
শেখ
রাসেল, একাত্তরে তুমি ছিলে তোমার
প্রিয় সব খাবার থেকে
বঞ্চিত, খেলার সাথি ছাড়াই তোমাকে
বন্দিশালার জানালা দিয়ে পাকসেনাদের অস্ত্রশস্ত্র
পরিষ্কার করা দেখতে দেখতে
নয় মাস কাটাতে হয়েছে।
যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা দেখার সুযোগ না হলেও রাজনৈতিক
পরিবারের সন্তান হওয়ায় তোমার ভেতর মানুষের জন্য
ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল
গভীর মমত্ববোধ। ১৭ ডিসেম্বর(১৯৭১)
তুমি হৃদয় দিয়ে অনুভব
করতে পেরেছিলে মুক্তির আনন্দ। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা করে শত্রু
তাড়ানোর সেই উল্লাস পরিবারের
সদস্যদের চোখের পানিতে ধুয়ে গেছে। তাদের
দুঃখ দেখলে তোমার মন খারাপ হয়ে
যেত। অবশ্য যুদ্ধ শেষে কামাল ও
জামালকে পুনরায় কাছে পেয়ে পৃথিবী
ঝলমল করে উঠলেও তখনও
পিতাকে তুমি খুঁজে ফিরছিলে।
১৯৭২
সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু
ফিরে এলেন। এয়ারপোর্টে গিয়েছিলে পিতাকে আনতে। সেদিন লাখো মানুষের ঢলে
পিতাকে নিয়ে তোমার খুব
গর্ব হয়েছিল রাসেল? সবচেয়ে আনন্দের সেই দিনটি কেবল
তোমার নয় সমগ্র বাঙালি
জাতির ছিল। এজন্য তুমি
যেমন পিতাকে ছেড়ে এক মুহূর্ত
থাকতে চাইতে না তেমনি আমাদের
জনগণও। তুমি যেন হয়ে
উঠলে জনগণের প্রতীক। বঙ্গবন্ধুকে এদেশের মানুষ ভালোবেসেছিল নিঃস্বার্থভাবে; যেমন তুমি পিতাকে।
তোমার ভালোবাসার সারণিতে এখনো আমরা দাঁড়িয়ে
আছি রাসেল।
স্বাধীনতার
পর ৩২ নম্বর সড়কের
বাড়িতে পুনরায় তোমার হাসি মুখে ঘুরে
বেড়ানো শুরু হয়। সাইকেলে
চড়ে তুমি
ব্যস্ত হয়ে ওঠ সারা
দিন। দুরন্ত তুমি তখন সাঁতার
জানো, ফুলবল ও ক্রিকেট খেলতে
শিখেছো। তারপর পুরনো গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ছোটছেলের সার্বক্ষণিক আনাগোনা। বিকেলে সাইকেলটাও সাথে থাকত। তোমার
খুব শখ ছিল মাছ
ধরার। তা ছিল খেলা।
কারণ মাছ ধরে আবার
ছেড়ে দিতে তুমি। নাটোরের
উত্তরা গণভবনেও তোমাকে সেরকমই দেখা গেছে। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র ছিলে। সেখানে তোমার নাম ছিল- শেখ
রিসালউদ্দীন।শিষ্টাচার ও সৌজন্য শিখেছিলে
তখনই। বাসায় তোমাকে পড়াতে গিয়ে শিক্ষককে তোমার
কথাই শুনতে হতো বেশি। তোমার
কথায় পড়াতে আসা শিক্ষয়িত্রীকে প্রতিদিন
দুটো করে মিষ্টি খেতে
হতো। মানুষকে আপ্যায়ন করতে খুবই পছন্দ
করতে তুমি। টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে গেলে তোমার খেলাধুলার
অনেক সাথি জুটে যেত।
প্রত্যেকের জন্য খাবার কিনে
দিতে। বেগম মুজিব ও
চাচা শেখ আবু নাসের
তাদের জন্য জামা-কাপড় নিয়ে
যেতেন। গ্রামের শিশুদের সঙ্গে তোমার সেই মৈত্রীর বন্ধন
অনেকেই এখনো স্মরণ করেন।
তুমি হতে চেয়েছিলে আর্মি
অফিসার। কামাল-জামালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে তার অনুপ্রেরণা
জন্মেছিল।
৫.
পিতার
সঙ্গে ‘নির্মলতার প্রতীক’ রাসেলের সম্পর্ক ছিল চিরন্তন পিতৃ
হৃদয়ের মমতা মাখানো। পিতাকে
মোটেই ছাড়তে চাইত না সে।
শেখ রেহানা ‘রাসেল আমাদের ভালোবাসা’ নিবন্ধে লিখেছেন- ‘রাসেলের জন্মের পর দীর্ঘ সময়
আব্বার জেলে কেটেছে। আব্বাকে
দীর্ঘ সময় দেখতে না
পেয়ে রাসেল মন খারাপ করত।কাঁদত
আব্বার কাছে যাবার জন্য।
ওর জন্য আমাদেরও খারাপ
লাগত।’ একাত্তরে বন্দিজীবনেও তার অবস্থা একইরকম
ছিল। শেখ রেহানা আরো
লিখেছেন- ‘আব্বারও কোনো খবর নেই।
রাসেল একাকী বসে বসে কাঁদত।
কাউকে কিছু বলতে পারত
না। মনের মধ্যে কষ্ট
চেপে রাখত, প্রকাশ করতে চাইত না।
চোখে পানি কেন জানতে
চাইলে বলত, ধুলো লেগেছে।’
তবে একাত্তরের পর যেখানে যেখানে
নিয়ে যাওয়া সম্ভব প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তাকে নিয়ে যেতেন।
বেগম মুজিব তার জন্য প্রিন্স
স্যুট বানিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ পিতা প্রিন্স
স্যুট যেদিন পরতেন রাসেলও পরত। পোশাকের ব্যাপারে
ছোটবেলা থেকেই তার নিজের পছন্দ
ছিল। ‘কোথায় কোন পোশাক পরে
যেতে হবে এ ব্যাপারে
যথেষ্ট সচেতন ছিল।’ ছেলেবেলা থেকেই তার চরিত্রে দৃঢ়তা
গড়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধুর জাপান, মস্কো, লন্ডন সফরের সময় রাসেলও সেসব
জায়গায় যেতে পেরে আনন্দে
মেতে উঠেছিল। তবে মাকে ছেড়ে
কোথাও তার থাকতে খুব
কষ্ট হতো। বাইরে পিতা
সান্নিধ্যে থেকেও মার কথা মনে
পড়লেই মন খারাপ করত
সে। কারণ বঙ্গবন্ধুর অধিকাংশ
সময় জেলে কেটেছে। এজন্য
মাকে কেন্দ্র করে তার প্রাত্যহিক
জীবন গড়ে উঠেছিল। ১৯৭৫
সালের জুলাই মাসে কামাল ও
জামালের বিয়ের অনুষ্ঠানে রাসেল ওর সমবয়সীদের সাথে
মিলে রঙ খেলেছিল। বিয়ের
পর সব সময় ভাবিদের
পাশে ঘুরঘুর করত সে; কার
কী লাগবে খুব খেয়াল রাখত।
১৯৭৫-এর ৩০ জুলাই
শেখ হাসিনা জার্মানিতে স্বামীর কর্মস্থলে যাওয়ার পর রাসেলের খুব
মন খারাপ হয়ে যায়।
৬.
শেখ
হাসিনা জার্মানি যাওয়ার সময় রাসেলকে সাথে
নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু
তার হঠাৎ জন্ডিস হওয়ায়
শরীর খারাপ হয়ে পড়ে। সে
কারণে বেগম মুজিব তাকে
আর শেখ হাসিনার সাথে
যেতে দেননি। রাসেলকে যদি সেদিন তিনি
সাথে নিয়ে যেতে পারতেন
তা হলে তাকে আর
হারাতে হতো না। ১৯৭৫
সালের পনের আগস্ট ঘাতকের
নির্মম বুলেটে ক্ষতবিক্ষত করা হয় ছোট্ট
রাসেলকে। মা, বাবা, দুই
ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচার লাশের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে
নিয়ে সবার শেষে নিষ্ঠুরভাবে
হত্যা করা হয় শেখ
রাসেলকে। তার আগে সে
বারবার বলেছিল, ‘মায়ের কাছে যাবো’।
তৃষ্ণার্ত হয়ে পানি খেতেও
চেয়েছিল। মায়ের কাছে নেওয়ার নাম
করেই হত্যা করা হয় শিশু
রাসেলকে। মাত্র ১০ বছর ৯
মাস ২৭ দিনের স্বল্পায়ু
জীবন ছিল তার।
আজ জন্মদিনে তাকে আমরা স্মরণ
করছি- একটি রাজনৈতিক পরিবারে
বেড়ে ওঠা শিশুর অন্তরবেদনা,
তার মানুষের সঙ্গে সহমর্মিতার সম্পর্ক বোঝার জন্য। প্রাণোচ্ছল শিশু শেখ রাসেল
মানুষকে ভালোবাসতে শিখেছিল, বঙ্গবন্ধুর আনন্দের সঙ্গী ছিল আর বাঙালির
চিরন্তন পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধনে তার অনাবিল উচ্ছ্বাস
ছিল অফুরন্ত। ১৯৭৫ সালের ১৫
আগস্ট শেখ রাসেল পিতা-মাতা
ও অন্যদের সঙ্গে যে নিষ্ঠুরতার নির্মম
শিকার হয়েছিল তা এখনো বিশ্ব
মানবতাকে বিচলিত করে। আমরা সেই
সহিংসতা থেকে আলোর পথে
বের হয়ে আসতে চাই।
তাই স্মরণ করি শেখ রাসেলকে।
শেখ রেহানার ভাষায় বলতে হয়- ‘রাসেল
আমাদের ব্যথা, আমাদের শোক এবং আমাদের
ভালোবাসা।’
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭