ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

গাজায় হাসপাতালে হামলা, বর্বরতার সকল সীমা অতিক্রম করলো ইসরায়েল


প্রকাশ: 18/10/2023


Thumbnail

টানা দশদিন ধরে গাজার ওপর ইসরায়েলিরা যে ভয়াবহ বোমা হামলা চালাচ্ছে তা অবর্ণনীয়। পুরো গাজা নগরীতে ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাওয়া যায় না, যেন লাশের নগরীতে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিন। তবে সব সীমা হয়তো পার করে ফেলেছে গত মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) ইসরায়েলিরা গাজার একটি হাসপাতালে যে হামলা ঘটিয়েছে সেটির মাধ্যমে। এ হামলায় মুহূর্তেই নিহত হয়েছে গাজার ৫০০ জন মানুষ। যার বেশিরভাগই ছিল শিশু এবং নারী। সারিবদ্ধ লাশ দেখতে দেখতে যে কেউ কান্নায় ভেঙে পড়বে। এ দৃশ্য দেখা যায় না। এ দৃশ্য সহ্য করার মত না।

মঙ্গলবার রাতে মধ্য গাজার আলআহলি আরব নামের একটি হাসপাতালে এই হামলা চালানো হয়। এর আগে ইসরায়েলি হামলায় আহত শত শত রোগী ও গৃহহীন অসংখ্য বাসিন্দা ‘নিরাপদ ভেবে ওই হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালে এ বোমা হামলায় অন্তত ৫০০ জন নিহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন অনেকে। হামলার ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।


স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে (বাংলাদেশ সময় সাড়ে ১১টা) ঐ হাসপাতালে একাধিক বিস্ফোরণ হয়। জাতিসংঘসহ মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলো হাসপাতালে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানও এই হামলার নিন্দা জানাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, গাজা শাসকগোষ্ঠী হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন এক হামলা চালায়। এরপর থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতে করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ভয়াবহ এক মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়:

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ের এরদোয়ান বলেছেন, ইসরায়েল যে ন্যুনতম মানবিক মূল্যবোধেরও তোয়াক্কা করছে না গাজায় হাসপাতালে হামলা তার সর্বশেষ উদাহরণ। গাজায় ‘নজিরবিহীন নৃশংসতা বন্ধে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গাজার আলআহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিসরও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এভাবে নির্বিচার হামলা ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন’।

গাজায় হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে গাজার নিরস্ত্র ও অসহায় মানুষদের হত্যা করছে। জঘন্য এই অপরাধের মাধ্যমে ইহুদী এই রাষ্ট্রটি আরও একবার বিশ্বের সামনে তাদের অমানবিক ও পাশবিকাতেই তুলে ধরেছে।

হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় শত শত মানুষের মৃত্যুকে ‘জঘন্য অপরাধ অভিহিত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ও এই হামলাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে নৃশংস, জঘন্য, রক্তক্ষয়ী গণহত্যাগুলোর একটি অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

গাজার হাসপাতালের হামলার নিন্দা জানিয়েছে আরব লীগও। সংস্থাটির প্রধান আহমেদ ঘেতি বলেছেন, বিশ্ব নেতাদের অবিলম্বে এই ‘ট্রাজেডি বন্ধ করতে হবে।

গাজায় হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। একে ‘গণহত্যা অভিহিত করে তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে কেউ চুপ থাকতে পারে না। এভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা ‘মানবতার জন্য লজ্জাজনক’।

ইসরায়েলি বাহিনীর হাসপাতালে বোমা হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রলায় বলেছে, ইসরায়েল যেভাবে গাজার হাসপাতাল, স্কুল ও জনবহুল এলাকায় হামলা করছে এতে সংঘাত ভয়ংকরভাবে বিস্তৃত হচ্ছে।

গাজায় হাসপাতালে হামলার ঘটনাকে ‘ভয়ংকর হিসেবে বর্ণনা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান জানানো উচিত। যুদ্ধের কিছু নিয়মনীতি আছে। কোনো হাসপাতালে এভাবে হামলা করার ঘটনা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।


গাজার হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস। অবিলম্বে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। 

এদিকে গাজার হাসপাতালে হামলার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে একটি জরুরি বৈঠকে বসার জন্য অনুরোধ করেছে স্থানীয় সদস্য রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

হাসপাতালে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এমন হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেছে ফিলিস্তিনের মানবাধিকার সংস্থা আলমিজান। সংস্থাটি বলছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী হাসপাতালগুলো ‘নিরাপদ স্থান হিসেবেই বিবেচিত।

গাজার হাসপাতালে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ফ্রান্সও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, মানবাধিকবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন সবার জন্য প্রযোজ্য। বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

যুদ্ধ বন্ধ করা ছাড়া কোনো আলোচনা নয়:

এদিকে ইসরায়েলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মিত্র ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের অংশ হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের পর এবার তেল আবিব সফরে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

তবে জর্ডানে ফিলিস্তিনির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আলসিসির সঙ্গে তাঁর যে নির্ধারিত বৈঠক হওয়ার কথা ছিল তা আর হচ্ছে না বলে জানিয়েছে জর্ডান।

অবশ্য জর্ডান আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার আগেই বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক বাতিলের ঘোষণা দেন ফিলিস্তিনির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ঘোষণা দেওয়ার পরপরই তিনি আম্মান থেকে পশ্চিম তীরের রামাল্লার উদ্দেশে রওনা হন।

এদিকে বাইডেনের সঙ্গে সম্মেলন বাতিলের ঘোষণায় জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করা ছাড়া এখন আর আলোচনা করে কোনো লাভ নেই।

ইসরায়েল সফর শেষ করে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে যাওয়ার কথা ছিল বাইডেনের। সেখানে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকের কথা ছিল তাঁর।



তবে হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবুজ সংকেত পাওয়া ছাড়া ইসরায়েলের পক্ষে এই হামলা চালানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘সবারই বোঝার কথা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন গতকাল ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টার বেশি বৈঠক করেন। এদিকে জো বাইডেনও আজ ইসরায়েল সফরে আসছেন।

ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ‘শত্রুরা (ইসরায়েল ও দেশটির মিত্ররা) যে কতটা পাশবিক হাসপাতালে চালানো এই গণহত্যা তারই প্রমাণ। ইসরায়েলের দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়তে সব ফিলিস্তিনিকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন হামাস প্রধান।

তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, গাজার ওই হাসপাতালে তারা হামলা চালায়নি। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের নিক্ষেপ করা রকেটই নাকি ওই হাসপাতালে আঘাত করে। তাদের দাবি, ইসলামিক জিহাদ ইসরায়েলকে নিশানা করে রকেট ছুড়লেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সেগুলো ওই হাসপাতালে আঘাত হানে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭