ইনসাইড বাংলাদেশ

মাঠ প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারীতায় অস্বস্তিতে সরকার


প্রকাশ: 18/10/2023


Thumbnail

মাঠ প্রশাসনের আমলারা একের পর এক নানা কেলেঙ্কারিতে জাড়াচ্ছেন। এর ফলে তাদেরকে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাদের এই লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা সরকারের জন্য একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করছে। একের পর এক এই সমস্ত ঘটনাগুলো জনমনেও নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। আমলাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে কেন? তা নিয়েও বিভিন্ন রকমের কথাবার্তা চলছে। নির্বাচনের আগে এটি সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের অস্বস্তির খবর বটে। 

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাবেক এক জেলা প্রশাসকের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই ভিডিওটি আপত্তিকর এবং এবং অশ্লীল। একজন জেলা প্রশাসক কিভাবে এ ধরনের নোংরামিতে জড়াতে পারেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে সচেতন মহল বলছেন যে, জেলা প্রশাসকদের এধরনের স্বেচ্ছাচারী কুরুচিপূর্ণ কর্মকাণ্ড এটাই প্রথম নয়। এর আগেও জামালপুরের ডিসি এ ধরনের নোংরামিতে জড়িয়ে ছিল। আরও কয়েকজন ডিসির বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ছিল। অথচ এদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তি গ্রহণ করা হয়নি। 

শুধু জেলা প্রশাসন নয়, একজন আমলা বিদেশে গিয়ে নির্যাতিত নারীদের রক্ষণাবেক্ষণের বদলে তাদের উপর যৌন নিপীড়নের দায় অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন এবং সেই অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হয়েছিল। তারপর তাকে শুধুমাত্র ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। তিনি কোনো শাস্তি পাননি। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে আমলারা কি বিচারের ঊর্ধ্বে? তারা কি আইনের ঊর্ধ্বে? অবশ্য পরিস্থিতি এমনটি দাঁড়িয়েছে। শুধু নারী কেলেঙ্কারি বা যৌন নিপীড়ন নয়, নানা রকম অভিযোগে অভিযুক্ত মাঠ প্রশাসন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না। 

সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি দমন আইনের বিধান সংশোধন করা হয়, করে আমলাদেরকে অনুমতি ছাড়া গ্রেপ্তার করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এটি এক দেশে দুই আইনের মতো। এর বিরুদ্ধে রিট করা হয়েছিল। সেই রিটে আমলারা হেরে যান। পরবর্তীতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। 

আমলাদের বিরুদ্ধে গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি, দায়িত্বহীনতা, স্বেচ্ছাচারিতা ইত্যাদি নানা অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তাদের শাস্তি হচ্ছে লঘুদণ্ড, কোথাও কোথাও পদাবনিত। কিন্তু সেই সমস্ত শাস্তিগুলো পরবর্তীতে মাফ করে দেওয়া হচ্ছে। কুঁড়ি গ্রামের এক জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের ধরে বেধড়ক পিটিয়েছিলেন। এজন্য তাকে লঘু দণ্ড দেওয়া হয়। তার পদাবনতি করা হয়েছিল, তাকে বদলি করা হয়েছিল, তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাছে মার্জনা ভিক্ষা করে তিনি সেই দ্বন্দ্ব থেকেও নিজেকে মুক্ত করেন। এভাবেই আমলাতন্ত্র এক ধরনের স্বেচ্ছাচারী রাজত্ব কায়েম করেছে। আর নির্বাচনের আগে এটি সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি হিসাবে দেখা দিয়েছে। কারণ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে আমলারা বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এখন আমলারা যেভাবে দলীয় করণের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং রাজনীতিবিদদের চেয়েও বড় রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছেন তাতে এই আমলারা নির্বাচনে কতটুকু নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারবেন তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া সরকার অতি মাত্রায় আমলা নির্ভর হয়ে হওয়ার কারণে জনগণের মধ্যেও এক ধরনের অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কাজেই নির্বাচনের আগে আমলাদের বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনের লাগাম টেনে ধরা এবং তাদেরকে একটি জবাবদিহিতার আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭