ইনসাইড বাংলাদেশ

সিরাজগঞ্জে বাড়ছে ভিক্ষাবৃত্তিতে, নামছেন দরিদ্র মানুষ


প্রকাশ: 21/10/2023


Thumbnail

দুর্ঘটনায় আহত হয়ে শারীরিক অক্ষমতা, দরিদ্রতা ও সন্তানদের কাছে বিতারিত হয়ে সিরাজগঞ্জে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামছেন দরিদ্র মানুষ। প্রতিদিনই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহরের ভিড় করছেন তারা। সকাল থেকে জনাকীর্ণ এলাকায় দেখা যায় তাদের জটলা। স্থানীয়রা বলছেন, ভাসমান ভিক্ষুকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে অনেক জায়গায় অর্ধশতাধিক ভিক্ষুকের আনাগোনাও চোখে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর না হলেও তারা বলছেন, ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনে কাজ চলমান রয়েছে।

 

জেলার কোর্ট ভবন, এস এস রোড, মুজিব সড়ক, বাজার স্টেশন, বড়পুলসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভিক্ষুকরা দল বেঁধে ভিক্ষা নিতে বিভিন্ন দোকানের সামনে ঘোরাঘুরি করছেন। তাদের মধ্যে কেউ বলছেন তিনি নিজে অসুস্থ, আবার কেউ বলছেন ঘরে অসুস্থ স্বামী রয়েছে। কেউবা জানিয়েছেন স্বামী মারা গেছেন, সন্তানরা দেখেন না। কেউ আবার বলছেন, সন্তানরা যে টাকা আয় করে তা দিয়ে তাদেরই চলে না।

 

সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের সরিষাখোলা গ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জ শহরে ভিক্ষা করতে এসেছেন দুলাল হোসেন (৬৫) জানালেন, তিনি একসময় রিকশা চালাতেন। সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভাঙার পর অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু পাননি। উয়ান্তর না পেয়ে এখন ভিক্ষা করছেন।'

 

দুলাল হোসেন শারীরিক অক্ষমতার কারণে হাত পেতেছেন মানুষের কাছে। কিন্তু তার চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছেন মর্জিনা খাতুন। স্বামী না থাকায় একসময় না খেয়েও দিন গেছে তার। এখন নেমেছেন রাস্তায়। প্রতি মাসে বয়স্ক ভাতা পান কাজীপুর উপজেলার একডালা গ্রামের মর্জিনা খাতুন (৭০) কিন্তু এই টাকায় দিন পার হয় না। স্বামীও মারা গেছেন অনেক আগে। বললেন, জমিজমা, বাড়িঘর কিছুই নেই আমার। মাসে ৫০০ টাকা বয়স্ক ভাতা পাই। তা দিয়ে চলে না। তাই মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে কোনো রকমে দিন পার করছি।’

 

ঘরহারা বৃদ্ধা দিলরুবা খাতুন। নিজের অসহায়ত্বের কথা জানালেন অশ্রুসিক্ত নয়নে। বলেন, ‘দুনিয়ায় আমার কেউ নেই। দিনে বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করি, আর রাতে রেলস্টেশনের যাত্রী ছাউনিতে থাকি। কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই আমার।’

 

শুরুর দিকে ভিক্ষা করতে গিয়ে অপমান বোধ করলেও এখন আর সেই অনুভূতি নেই।' শারীরিক অক্ষমতার কারণে সব ভুলে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়েছে রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা থেকে আসা রজব আলীর (৬৫) বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা পা ভেঙেছে। কোনো কাজ করতে পারি না। দুই ছেলে থাকলেও আমাকে দেখে না। তাই পেটের দায়ে ভিক্ষা করি। শুরুর দিকে ভিক্ষা করতে অপমানিত বোধ করতাম, কিন্তু এখন আর কিছু মনে হয় না।’

 

তাড়াশের নওগাঁ ইউনিয়নের মাজেদা খাতুন (৬৩) অবশ্য জানিয়েছেন, ভিক্ষা করে প্রতিদিন তার আয় হয় ৩০০-৪০০ টাকা। তা-ই দিয়ে চলে সংসার। আগের তুলনায় ভিক্ষুকদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে দাবি করে একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের বিভিন্ন দোকানে আসতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি। মুজিব সড়কের রাজ্জাক ডেন্টালের মালিক শাহিন হোসেন বলেন, প্রতিদিন অনেক ভিক্ষুক দোকানে সামনে এসে ভিড় করেন। তবে কোনো কোনো দিন এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

 

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সিরাজগঞ্জে সরকারি হিসাবে প্রায় চার হাজারের বেশি ভিক্ষুক আছেন। এ পর্যন্ত আমাদের দপ্তর থেকে ২১৩ জনকে পুনর্বাসন করেছি। আরও ভিক্ষুককে যেন সহযোগিতা দেওয়া যায় সে জন্য আমরা কাজ করছি। প্রয়োজনে আবারও ভিক্ষুকদের তালিকা করে তাদের পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭