এডিটর’স মাইন্ড

তোফায়েল আহমেদ: জীবন সায়াহ্নে অচেনা পথে


প্রকাশ: 22/10/2023


Thumbnail

আজ ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক শিষ্য তোফায়েল আহমেদের ৮১ তম জন্মদিন। ১৯৪৩ সালের এই দিনে ভোলার জেলার কোরালিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তোফায়েল আহমেদের এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক অধ্যায়। তবে তার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরিচয় হলো তিনি জাতির পিতা স্নেহধন্য হয়েছিলেন। জাতির পিতা নিজ হাতে যে সমস্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জন্ম দিয়েছিলেন, বিকশিত করেছিলেন তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে তোফায়েল আহমেদ অন্যতম। 

তোফায়েল আহমেদের রাজনৈতিক জীবনে নানা চড়াই উতরাই মধ্যে কেটেছে। কিন্তু সব সময় তিনি জনপ্রিয়তা এবং আলোচনার কেন্দ্রেই ছিলেন। কিন্তু জীবন সায়াহ্নে ৮১ বছরে এসে তিনি যেন এক অচেনা পথ পাড়ি দিচ্ছেন। যে পথে তিনি অপাংক্তেয়, অনাহুত এবং মাঝে মাঝেই বিতর্কিত। তোফায়েল আহমেদেন রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত সময়। এই সময়টা হলো তার রাজনৈতিক জীবনের উত্থান পর্ব। তিনি ছাত্র অবস্থায় রাজনীতি শুরু করেন। অনল বক্সী বক্তা হিসেবে পরিচিত পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এসে তিনি একজন জনপ্রিয় ছাত্র নেতায় পরিণত হন। বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিতে পড়েন এবং আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলা থেকে জাতির পিতা মুক্তি পাওয়ার পর তিনি তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করার সৌভাগ্য অর্জন করেন এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচরে পরিণত হন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় যে মুজিব বাহিনী গঠন করা হয় তার অন্যতম নিউক্লিয়াস ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। 

জাতির পিতা দেশে ফিরে আসলে বঙ্গবন্ধু তাকে আরও কাছে টেনে নেন। শেষ জীবন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এমনকি পঁচাত্তরের ১৪ আগস্ট জাতির পিতা গণভবনের শেষ অনুষ্ঠানে তোফায়েল আহমেদকে সাথে রেখেছিলেন। তোফায়েল আহমেদ তাকে গাড়িতে করে ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনে পৌঁছে দিয়েছিলেন। এই অধ্যায়টি তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল গৌরবদীপ্ত সময়। কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর সবকিছু যেন পাল্টে যায়। তোফায়েল আহমেদের পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ভূমিকা রাজনীতিতে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। আর এই প্রশ্নগুলো তাকে ক্ষত বিক্ষত করেছে।

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার পর তোফায়েল আহমেদ সেই ক্ষত সারানোর জন্য চেষ্টা করেন। তিনি শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অদৃশ্য দেয়াল তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে রেখেছিল। সেই দূরত্ব কখনো ঘোচেনি। তোফায়েল আহমেদ শেখ হাসিনার কাছে কখনোই আস্থাভাজন এবং বিশ্বস্ত রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেননি কারণ পঁচাত্তরের ক্ষত। এই অধ্যায়ে তোফায়েল আহমেদ আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় নেতা হিসাবে আবির্ভূত হয়ে ছিলেন। পঁচাত্তরের ক্ষতকে আড়াল করেও তিনি জনগণের মাঝে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। কিন্তু এক-এগারো তোফায়েল আহমেদের রাজনৈতিক গতিপথ এক অচেনা মরুপথে নিয়ে যায়। 

২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে যারা সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিল তাদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ অন্যতম ছিলেন। তোফায়েল আহমেদ সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন যেখানে তিনি শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন। সেখান থেকে যেন রাজনীতির মূলধারা থেকে ছিটকে পড়েন তোফায়েল আহমেদ। যদিও তারপরও তিনি ২০১৪ সালে মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সঙ্গে তার দূরত্ব তিনি কমাতে পারেননি। এর ফলে আওয়ামী লীগেও তিনি একজন বিতর্কিত নেতা হিসেবে আস্তে আস্তে আবির্ভূত হতে থাকেন। বিশেষ করে গত শোকের মাসে আওয়ামী লীগ সভাপতির লেখার মাধ্যমে তোফায়েল আহমেদ যেন বিতর্কের চূড়ান্ত সীমা স্পর্শ করেছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এক অনিবার্য নক্ষত্র তোফায়েল আহমেদ এই জন্মদিনে তিনি শারীরিক অবস্থা এবং রাজনৈতিক বিতর্ক নিয়ে হাটছেন এক অচেনা পথে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭