ইনসাইড পলিটিক্স

কোনো কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি


প্রকাশ: 23/10/2023


Thumbnail

বিএনপি ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে। এই মহাসমাবেশ নিয়ে এক রহস্যময় কৌশল করছে দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। বিএনপি মূলত সরকার যেন তাদের চালগুলো বুঝতে না পারে, সরকার যেন তাদের আন্দোলনের কৌশল বুঝতে না পারে, এজন্যই নানা ছল চতুরি এবং বিভিন্ন ধরনের কলা কৌশলে আশ্রয় নিচ্ছে। প্রথমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা করেছিলেন যে, ২৮ অক্টোবর হবে আন্দোলনের মহাযাত্রা। এই দিন থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি নতুন মাত্রা পাবে এবং লাগাতার আন্দোলন দেওয়া হবে। বিএনপির বহু নেতা জানিয়েছিলেন যে আন্দোলন হবে সর্বাত্মক এবং লাগাতার। কোনরকম ছাড় দেওয়া হবে না। এমনকি অবরোধ হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতেও তারা কার্পণ্য করবেন না এমন বক্তব্য বিএনপির নেতাদের কণ্ঠে ছিল। কিন্তু এর বিপরীতে যখন সরকার পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার জন্য অবস্থান গ্রহণ করে তখন বিএনপির সুর পাল্টে যায়। 

বিএনপির নেতারা বলেন, তারা ঢাকায় কোন অবস্থান গ্রহণ করবে না। এমনকি হেফাজতের মতো তারা কোন কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবে না। তারা একটা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চান। তাদের এই কণ্ঠস্বর হয়েই অনেকটা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠক নিয়েও নানা রকম ধুম্রজল তৈরি হয়েছে।কিন্তু বিএনপি আসলে কি করতে চাইছে? গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শেষ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে আসবে এবং সেই আসার প্রধান কারণ হবে বিএনপি নির্বাচনকে বানচাল করতে চায়। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগ যেভাবে শেষ মুহূর্তে সরে গিয়েছিল বিএনপি তেমন একটি কৌশলী অবলম্বন করতে চাইছে। বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, তারা যদি নির্বাচনে না যেয়ে নির্বাচন প্রতিরোধের ডাক দেয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির আওতায় তারা পড়তে পারেন। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তারা দেখতে চায়। এই নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক। যারাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বাধা দিবে তাদের বিরুদ্ধেই ভিসা নীতি কার্যকর করা হবে। আর তাই বিএনপি যদি নির্বাচন বয়কট করে বা বর্জন করে সেক্ষেত্রে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির আওতায় পড়বে। অন্তত দৃশ্যমান হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এই নীতির সমালোচনা করতে হবে। কিন্তু বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রতিটি মুহূর্তে সরকারের পক্ষপাতের অভিযোগ, বিভিন্ন রকম অভিযোগ উত্থাপন করে. এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বাধা হচ্ছে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে বিভিন্ন আবেদন নিবেদন করে তাহলে সেক্ষেত্রে ভিসা নীতির উল্টো প্রয়োগ ঘটবে। ক্ষমতাসীন দলই তখন ভিসা নীতির খড়গের মধ্যে পড়তে পারে। এইরকম পরিস্থিতিতে শেষ মুহূর্তে যদি বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় এরকম বক্তব্য দিয়ে যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নেই, এই জন্য তারা নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য হলেন তখন সব দায় দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে। তখন নির্বাচন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে সেই সময় একটি অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক নির্বাচন করাও সম্ভব হবে না। এটাই কি বিএনপির কৌশল? বিএনপি কি তাহলে নির্বাচনে তফসিল পর্যন্ত সময় কোনরকম কঠোর কর্মসূচি না দিয়ে বরং নির্বাচনের তফসিল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে এবং একটি সাজানো নাটকের মতো নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করে শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নির্বাচনকেই অনিশ্চিত করে তুলবে?

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ২০১৪ নির্বাচনে যদি জাতীয় পার্টি শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার না করতো তাহলে এরকম পরিস্থিতি হতো না। বিএনপি সেই একই কৌশল নিয়েছে কিনা সেটি নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে বিএনপির এখন প্রধান লক্ষ্য নির্বাচন বানচাল করা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের অনাগ্রহের কারণে তারা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে পারছেন না। তাছাড়া তাদেরও সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কাজেই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বানচাল করার কৌশলটাই বিএনপির জন্য সবচেয়ে সহজ কৌশল বলে অনেকে মনে করছেন। এখন দেখার বিষয় ২৮ অক্টোবর তারা কি করে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭