ইনসাইড পলিটিক্স

এক-এগারো মডেলেই এগোচ্ছে সবকিছু?


প্রকাশ: 23/10/2023


Thumbnail

২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা দখল করেছিল। এক-এগারো প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছিল প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের সংকট এবং অচল অবস্থার মধ্যে। এই সময় আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুটি রাজনৈতিক দলই সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থান গ্রহণ করেছিল। শুধু বিপরীতমুখী অবস্থানই নয়, দুটি রাজনৈতিক দলই সহিংস হয়ে পড়েছিলে। বিএনপি যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে চেয়েছিল সেই সরকারের ব্যাপারেও আওয়ামী লীগের আপত্তি ছিল। ফলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি হয়ে উঠেছিল সহিংস। এই সময় আন্তর্জাতিক মহল দুইটি দলকে সংলাপের জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া এবং আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের মধ্যে দীর্ঘ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু সেই সংলাপ থেকে কোনো ইতিবাচক ফলাফল আসেনি। অন্যদিকে সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২ জানুয়ারী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সেনা সমর্থিত এক-এগারো সরকার ক্ষমতা দখল করে। আর এরকম একটি পটভূমি তৈরি করারই এখন নীরবে চেষ্টা চলছে বলে অনেকে মনে করেন। বিশেষ করে বিএনপি সেই কৌশলেই এগোচ্ছে বলে তাদের ধারণা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক জনসভায় বলেছেন, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। অর্থাৎ তিনি একটি অনির্বাচিত সরকারকেই হয়তো ক্ষমতায় আনতে চান। সেই জন্যেই হয়তো সব আয়োজন করা হচ্ছে। বিএনপি এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংস করে তুলতে চাইছে। আওয়ামী লীগও মাঠে নামছে। এর ফলে যেকোনো সময় রাজনীতিতে একটি রক্তক্ষয়ী সহিংসতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরকে ঘিরে এই শঙ্কা আরও দানা বেঁধে উঠেছে। ২৮  অক্টোবরের এই শঙ্কার প্রেক্ষাপটেও যদি আওয়ামী লীগ-বিএনপি যদি শেষ মুহূর্তে রাজনৈতিক সংলাপে যায় সেই সংলাপের পর যদি বিএনপি নির্বাচনে যায় তাহলেও নিশ্চিত হওয়ার মতো কোনো কারণ থাকবে না। বরং ওই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়ন পত্র দাখিল করেও বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারে। বিএনপি যদি সেই মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে রাজপথে সহিংসতা করে তাহলে একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত হবে বলেই অনেকে মনে করছে। সেরকম একটি পরিকল্পনা নিয়েই বিভিন্ন মহল এগোচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সংসদীয় দলের বৈঠকে বলেছেন, অনির্বাচিত কাউকে আনার ষড়যন্ত্র চলছে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর মনোভাব এখন সুস্পষ্ট। তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব ঘোলাটে করার ক্ষেত্রে অনেকেই মদদ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে আবার একটি এক-এগারোর মডেল বাস্তবায়নের নীরব দৃশ্যমান চেষ্টা চলছে। প্রশ্ন হলো যে এরকম একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে যে সমস্ত শক্তির ক্রিয়াশীল ভূমিকা দরকার তারা সবাই কি সক্রিয়। এর উত্তর হল ‘না’। সকলেই এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত না। সেজন্যই আরেকটি এক-এগারো করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ এক-এগারোর ক্ষেত্রে অন্যতম অনুষঙ্গ হলো সেনাবাহিনীর ভূমিকা। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান সেনাবাহিনী গত ১৫ বছরে একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। সেনাবাহিনী এ ধরনের  রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ির মধ্যে নিজেদেরকে জড়াবে না বলেই এখন পর্যন্ত প্রতীয়মান হচ্ছে। ফলে এক-এগারো অর্থাৎ সুশীল সমাজের একটি সরকার বাস্তবায়নের জন্য আনুষঙ্গিক সব আয়োজন সম্পূর্ণ হলেও শেষ পর্যন্ত এক-এগারো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কিনা অনেকের মধ্যেই সংশয় রয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭