ইনসাইড বাংলাদেশ

মন্ত্রীরা ‘ডিপ্লোম্যাটিক প্রটোকল’ মানছেন না কেন


প্রকাশ: 23/10/2023


Thumbnail

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে দেখা করেছেন। এই বৈঠক নিয়ে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে কূটনীতিক অঙ্গনে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। রাতে মার্কিন দূতাবাস থেকে মুঠোফোন বার্তায় জানানো হয়েছে যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে বক্তব্য গুলো দিয়েছেন সেরকম কোনো কথা মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বলেননি। আজ এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। এই বৈঠক নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির ফলে কিছু কূটনৈতিক প্রশ্ন উঠেছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন যেটি সামনে এসেছে তা হচ্ছে মন্ত্রীরা যখন তখন যেকোনো ভাবে কূটনীতিকদের সাথে বিশেষ করে রাষ্ট্রদূতদের সাথে বৈঠক করছেন কেন?

রাষ্ট্রদূতদের সাথে মন্ত্রীরা বৈঠক করতেই পারেন। এই বৈঠক করার ক্ষেত্রে কতগুলো ডিপ্লোম্যাটিক প্রটোকল বা নিয়ম-নীতি রয়েছে। সেই ডিপ্লোম্যাটিক প্রটোকল বা নিয়ম-নীতি গুলো কতটুকু অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকালকের বৈঠকের কথাই ধরা যাক। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু পৃথিবীর সব দেশে এটি সাধারণ কূটনৈতিক শিষ্টাচার। যখন কোন মন্ত্রী কোন রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠক করবেন তখন ওই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকা বাঞ্ছনীয়। ভারত, পাকিস্তান এমনকি নেপালের মতো দেশগুলো এই কূটনৈতিক নিয়ম নীতিগুলো মানে। সেখানে কোনো মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকার চাইতে গেলে রাষ্ট্রদূতদেরকে পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই মন্ত্রীর সময় ঠিক করে দেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের একজন প্রতিনিধি সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকেন। 

নিয়ম অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এ ব্যাপারে ব্রিফিং করেন। এটি বাংলাদেশেও প্রচলিত ছিল। বাংলাদেশেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েকজন মন্ত্রী এই শিষ্টাচার গুলো মানতেন। বিশেষ করে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যেকোনো কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠকের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাকে সময় নিতে বলতেন। তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনাও সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু সেটিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। এটি নিয়ম। কিন্তু বাংলাদেশে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে। মন্ত্রীরা যখন তখন যেকোনো রাষ্ট্রদূতকে সময় দিচ্ছেন এবং এই বৈঠক করে তারা ধন্য হচ্ছেন। অনেক সময় প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করে অনেক মন্ত্রীরা যেন নিজেদেরকে আলোচিত করতে চাইছেন। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বৈঠক করতেই পারেন। তিনি একজন রাষ্ট্রদূত এবং তিনি যেকোনো বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য আগ্রহ দেখাতেই পারেন। সেক্ষেত্রে কূটনৈতিক নিয়ম কি? কূটনৈতিক প্রথম ধাপ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রদূতকে ওই বৈঠকের কারণ সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মন্ত্রীকে একটি সার সংক্ষেপ পাঠাবেন এবং বৈঠকের বৈঠকের জন্য সময় বের করতে বলবেন। ওই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাবেন যে তিনি কখন সময় দিতে পারবেন। সেই বার্তাটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রদূত বা কূটনীতিককে দিবেন। তখন ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে এবং সেই বৈঠকে একজন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন।

বাংলাদেশে যত বিদেশি দূতাবাস বা কূটনৈতিক মিশন রয়েছে সেগুলো সরাসরিভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের কার্যক্রম, গতিবিধি ইত্যাদি সবকিছু সম্পর্কে অবহিত থাকবে। এটাই নিয়ম। পৃথিবীর সব দেশই এটি অনুসরণ করে। কিন্তু বাংলাদেশ কেন এটি করে না। এটি করে না জন্যই অনেকগুলো ঘটনা ঘটে। প্রথমত, না করার ফলে দুই দেশের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এর ফলে অনেক প্রভাবশীল দেশের কূটনীতিকরা মনে করেন যে, মন্ত্রীরা তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য লালায়িত এবং তারা এতে নিজেদেরকে উচ্চতর ক্ষমতা সম্পন্ন বা প্রভাবশালী ব্যক্তি মনে করে। মন্ত্রীদের চেয়েও তারা নিজেদেরকে ক্ষমতার প্রতিপত্তি দিয়ে বড় করে ভাবতে শুরু করেন। ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন ছোটখাটো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা নাক গলানোর সুযোগ পায়।

বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দল কি সমাবেশ করবে, সেই সমাবেশে সরকার কি পদক্ষেপ নেবে সেটি একান্তই সরকারের নিজস্ব বিষয়। এ নিয়ে কূটনৈতিকদের দৌড়ঝাঁপ করার কোন কিছু নেই। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অন্ধকারে রেখে কেন এই ধরনের বৈঠক করবেন সেটিও এখন একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের মন্ত্রীরা যদি সচেতন হন, দায়িত্বশীল হন, নিজেদের মর্যাদা বোঝেন তাহলে এ ধরনের সমস্যা গুলো আমরা সহজেই এড়াতে পারি। কূটনৈতিকরা কথায় কথায় আমাদের ওপর খবরদারি করতে পারেন না।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭