এডিটর’স মাইন্ড

বাংলাদেশে যেভাবে আসতে পারে অনির্বাচিত সরকার


প্রকাশ: 23/10/2023


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে বলেছেন যে একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর ষড়যন্ত্র চলছে এবং এই ষড়যন্ত্রের কিছুটা রূপরেখার আভাসও প্রধানমন্ত্রী গতকালকে সংসদীয় দলের বৈঠকে সংসদ সদস্যদেরকে দিয়েছেন। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা।নির্বাচনের ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলোর যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। তারা বলছে বাংলাদেশে নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হিসেবে তারা মনে করছেন যে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সহ কিছু বিদেশি রাষ্ট্রের ভিন্ন মনোভাব রয়েছে। তারা মনে করছেন যে একটি নির্বাচন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কোন রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল, কোন রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল না সেটা সেই দেশের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে যে রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক না কেন, সেই রাজনৈতিক দলগুলোকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আর এই নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই সরকার বলেছে যে নির্বাচনে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোটার যদি ভোট প্রদান করে তাহলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক বলে বিবেচনা করতে হবে।

এই যখন অবস্থা তখন বিএনপি বলছে যে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। এরকম নির্বাচন তারা হতেও দেবে না বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু যখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করল এবং ভিসার নীতি গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর শুরু করেছে বলে ঘোষণা দিল তখন থেকে বিএনপি ভিন্ন সুরে কথা বলছে। বিএনপি এখন সরকারকে নির্বাচনী ফাঁদে ফেলে একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চাচ্ছে। কিভাবে বিএনপি তার পরিকল্পনা সাজিয়েছে তার একটু আভাস প্রধানমন্ত্রী তার গতকালের বক্তব্যে দিয়েছেন। আমরা যদি ধাপ গুলো দেখি যে বিএনপি একটা নাটকীয় ঘোষণা দেবে। তারা বলবে যে তারা নিশ্চিত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না দলীয় সরকারের অধীনে, তারপরেও আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি শুধু প্রমাণ করার জন্য এই সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায় না। আমাদেরকে নির্বাচনে রাখতে চায় না। এই বক্তব্য রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিবে এবং নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে তারা বিভিন্ন অভিযোগ প্রতিনিয়ত উপস্থাপন করবে। বিশেষ করে তাদের মূল লক্ষ্য থাকবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের পক্ষে নিয়ে আসা। এটি আনার ক্ষেত্রে তারা একের পর এক বিভিন্ন ধরনের বিষয় উত্থাপন করবে। ফলে একটা পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করবে। তারা নির্বাচনে কারচুপি হচ্ছে বা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি অভিযোগগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হবে। কারণ বিএনপি-জামায়াত এবং বিরোধী দলগুলোর শক্তিশালী আন্তর্জাতিক লবিস্ট ফার্ম রয়েছে। যে কারণেই তারা বাংলাদেশ এবং সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণার সুযোগ পাচ্ছে।

দ্বিতীয় ধাপে তারা এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাবে যেখানে তারা বলবে যে আমরা নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন পরিবেশ নাই। এ কারণে আমরা আর নির্বাচন করছি না। আমরা নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করছি। ঠিক যেমনটি ২২ জানুয়ারি ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ করেছিল। ফলে এরকম অবস্থায় বিএনপির সকল প্রার্থী যদি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে সেক্ষেত্রে আবার ২০১৪’র মতো একটি পরিস্থিতি তৈরি হবে। অনেক জায়গায় একাধিক প্রার্থী থাকবেন না, অনেক জায়গায় অন্য প্রার্থীরা বসে যাবেন। ফলে নির্বাচন নিয়ে জনগণের যে আগ্রহ ছিল সেই আগ্রহ নষ্ট হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতির মধ্যে থেকে আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচনকে নাকচ করে দেবে এবং এরকম নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়, এই নির্বাচন থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারকে নানা রকম ভাবে আহ্বান জানাবে এবং এক পর্যায়ে তারা হস্তক্ষেপ করবে। তখন নির্বাচন তারা করতে দেবে না। এরকম একটি পরিকল্পনা থেকেই তারা একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করবে বলে জানা গেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে, সরকার বিএনপির পরিকল্পনার কথা ভালোমতোই জেনেছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিত তা সুস্পষ্ট করে। তাই এর বিপরীতে পাল্টা পরিকল্পনা নিশ্চিয় আওয়ামী লীগ সরকার গ্রহণ করবে। এখন দেখার বিষয় যে কৌশলের খেলায় কারা জয়ী হয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭