ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির ফাঁদ থেকে কিভাবে বেরোবে আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 24/10/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কৌশলের খেলা চলছে। এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে অনেকগুলো ফাঁদ পেতেছে। দেখার বিষয় যে এই সমস্ত ফাঁদে কে পা দেয়, কে ফাঁদ থেকে বেরিয়ে গিয়ে তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। বিএনপি আওয়ামী লীগের জন্য অনেকগুলো ফাঁদ তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগ এই ফাঁদ থেকে কিভাবে বেরোবে সেটি এখন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের আলোচনার প্রধান বিষয়। বিএনপি একটি অন্যরকম কৌশল নিয়েছে। তারা গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে মনে হচ্ছে যে বিএনপি বোধহয় খুব শিগগিরই বড় ধরনের একটা আন্দোলন করবে। এটি একটি ফাঁদ। এই ধরনের কোনো কর্মসূচি আসলে বিএনপি দিচ্ছে না। কিন্তু এর মাধ্যমে জনগণ বা বিভিন্ন সংশ্লিষ্টদেরকে বিএনপি সম্পর্কে একটা বড় ধরনের ধারণা দেওয়া হচ্ছে যে বিএনপি এখন অনেক শক্তিশালী হয়েছে এমন একটি হাইপ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। আওয়ামী লীগও এই ফাঁদে ভালোভাবেই পা দিয়েছে। আওয়ামী লীগও বিএনপির এই ধরনের কর্মসূচির হুমকি বা সরকার ফেলে দেওয়ার ঘোষণাকে ভীষণ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। যার ফলে অনেকেই মনে করছে যে আওয়ামী লীগ বোধহয় বিএনপির জনপ্রিয়তায় বা বিএনপির আন্দোলনের কর্মসূচিতে ভয় পাচ্ছে।

বিএনপির দ্বিতীয় ফাঁদ হলো বিএনপি বলছে যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, এটি আসলে বিএনপির একটি কৌশলগত অবস্থান। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে যাবে। আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, বিএনপি ছাড়াই একটি নির্বাচন হবে এবং সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় অবধারিত। এই ধারণা নিয়ে আওয়ামী লীগ এখন অনেকটাই উদাসীন। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসছে এমন একটা মোহে পৃষ্ট হয়ে আছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যখন বিএনপি নির্বাচনের ঘোষণা দিবে তখন আওয়ামী লীগের জন্য সেটি হবে একটি বড় ধরনের ঝটকা। আর এই ঝটকা থেকে আওয়ামী লীগ বের হতে পারবে কিনা সেটি নিয়ে অনেকের সংশয় রয়েছে।

বিএনপি যে তৃতীয় ফাঁদ পেতেছে তাহলে নির্বাচনী ফাঁদ। বিএনপি হয়তো শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাবে। কিন্তু নির্বাচনে যাওয়ার পর আবার বিএনপি সেখান থেকে সরে আসবে। ফলে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হবে যে বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থী শূন্য হয়ে পড়বে, আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকবে, যেমনটি হয়েছিল ২০১৪ সালে। ফলে নির্বাচনই অনিশ্চিত হবে এবং একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা আসার পথ তৈরি হবে। আওয়ামী লীগ যদি আগে থেকেই জানে যে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না তাহলে আওয়ামী লীগ বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারে। যেমন- তৃণমূল বিএনপি, জাতীয় পার্টি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে যার যার অবস্থান থেকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া এবং সকলে মিলে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা। কিন্তু যদি নির্বাচনের শেষ প্রান্তে এসে মনোনয়ন প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটে সেটি হবে আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় ধরনের ফাঁদ। এখন প্রশ্ন হলো যে এই তিন ফাঁদ থেকে আওয়ামী লীগ বেরোবে কিভাবে? 

আওয়ামী লীগের প্রথম যে ফাঁদ সে ফাঁদ থেকে বেরোনোর উপায় খুব সহজ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনের দিকে মনোনিবেশ দিতে হবে। পুরো দেশকে আন্দোলন নয়, একটা নির্বাচনের আবহ তৈরি করতে হবে পুরো দেশে। সেই কাজটি যত দ্রুত শুরু করবে ততই দলের জন্য এবং দেশের জন্য মঙ্গল। দ্বিতীয়ত নির্বাচনে আসবে, এটি মাথায় রেখে আওয়ামী লীগকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য যথেষ্ট, যোগ্য প্রার্থীদেরকে মনোনয়ন দিতে হবে। যারা মনোনয়ন পাবেন তাদেরকে সবুজ সংকেত দেওয়াটা খুবই জরুরী এবং এখনই যেন তারা নির্বাচনী এলাকাগুলোতে কাজ শুরু করেন সেটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। তৃতীয় বিষয় হল  যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও তাহলেও আওয়ামী লীগকে বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে। অর্থাৎ বহু জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থী রেখে আওয়ামী লীগকে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করে রাখতে হবে যেখানে বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জনও করে তাহলে যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব হয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭