ইনসাইড পলিটিক্স

এক-এগারোর কুশীলবরাই বিএনপির 'থিংক ট্যাংক'


প্রকাশ: 24/10/2023


Thumbnail

বিএনপি চালায় কে? এই প্রশ্নটি এখন বিভিন্ন সময়ে আলোচিত হয়। অনেক ক্ষেত্রেই অনেকে মনে করেন যে বিএনপির নির্দেশনা আসে লন্ডন থেকে। লন্ডনের পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াই বিএনপি পরিচালনা করছে। কিন্তু একটু গভীরভাবে বিএনপির কর্মকান্ড এবং কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে তারেক জিয়া আসলে বিএনপি চালায় না। বিএনপিতে সাম্প্রতিক সময়ে একটি  শক্তিশালী থিংক ট্যাংক তৈরি হয়েছে। এই থিংক ট্যাংকরাই বিএনপির পরামর্শদাতা এবং তাদের কথাতেই বিএনপি ওঠাবসা করে, তাদের কথাতেই বিএনপি সব ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করছে।

এই থিংক ট্যাংকরা বাংলাদেশের সুশীল বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত এবং তারাই বিএনপিকে জাতে উঠাচ্ছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে বিএনপিকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা, বিএনপির পক্ষে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করা এবং বিএনপির পক্ষে জনগণের মধ্যে একটা সহানুভূতি সৃষ্টির জন্য এই সমস্ত থিংক ট্যাংকরা কাজ করছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে সমস্ত থিংক ট্যাংকরা এখন বিএনপিকে পরামর্শ দিচ্ছে তারা প্রায় প্রত্যেকেই এক-এগারোর কুশীলব এবং এক-এগারো আনার ক্ষেত্রে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে বিএনপির বাইরে সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে তারেক জিয়ার সরাসরি যোগাযোগ হয় একথা অনেকেই বলেন। এমনকি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বলা হয়েছে যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তিনি যেন মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে কথা বলেন। আর এই বক্তব্যটি যদি সত্যি হয় তাহলে মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপির অন্যতম থিংক ট্যাঙ্ক। মান্নাকে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়া দুজনই বিএনপিতে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু বাইরে থেকেই মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপির একজন অন্যতম প্রধান পরামর্শক হিসাবে কাজ করছেন। 

মান্না এক-এগারোর একজন বড় কুশীলব এবং এক-এগারো আনার ক্ষেত্রে যে সমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ভূমিকা রেখেছিল তাদের মধ্যে মাহমুদুর রহমান মান্না ছিলেন অন্যতম। মাহমুদুর রহমান মান্নার এককালীন রাজনৈতিক সহযোদ্ধা আলী রিয়াজ বিএনপির থিংক ট্যাঙ্ক এবং তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন। ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের মাধ্যমেই জিল্লুর তার প্রতিষ্ঠান খুলেছেন এবং জিল্লুরের প্রতিষ্ঠানে এনডিআই সহ বিভিন্ন মার্কিন সংস্থা যে অর্থায়ন করছে, সেই অর্থায়নের ক্ষেত্রে আলী রিয়াজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

জিল্লুর রহমানও এক-এগারোর কুশীলব এবং জিল্লুর রহমান এই পর্যায়ের কুশীলব ছিল যে তিনি পাকিস্তানে গিয়ে খুনি রশিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। এ ধরনের একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া বাংলাদেশের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এক-এগারো সরকার তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ভয়ে কুণ্ঠিত হয়ে তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি যিনি ঘৃণিত খুনির অবস্থানে গিয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এরকম ঘৃণ্য অপরাধের পরও তার অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যায়। এর চেয়ে লজ্জার আওয়ামী লীগের জন্য আর কিছু আছে কিনা তা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই ভালো করে ভেবে দেখতে পারেন। 

তবে এক-এগারোর এই কুশীলব জিল্লুর রহমানও এখন বিএনপি র অন্যতম থিংক ট্যাঙ্ক। বিএনপির প্রচার সেলের প্রধান জহির উদ্দিন স্বপনের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন বার্তা পরামর্শ ইত্যাদি জিল্লুর রহমান জহির উদ্দিন স্বপনের মাধ্যমে বিএনপিকে সরবরাহ করেন, যেভাবে বিএনপি প্রস্তুতি নেয়।

বদিউল আলম মজুমদার এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে সবচেয়ে সোচ্চার ব্যক্তি। তিনি প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন। এমনকি সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দেওয়াটাই অসাংবিধানিক এমন উদ্ভট বক্তব্য দিয়েও তিনি ক্ষান্ত হচ্ছেন না। বদিউল আলম মজুমদার এক-এগারোর একজন অন্যতম কুশীলব এটি সকলেই জানে।

বাংলাদেশের প্রধান দুটি গণমাধ্যম প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার এক-এগারোতে কি ভূমিকা পালন করেছিল তা সকলে জানে। এখন তারা বিএনপির লিফলেটে পরিণত হয়েছে এবং বিএনপির প্রধান বাহন হিসাবে কাজ করছে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার। প্রতিদিন প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে যে কলাম লেখাগুলো প্রকাশিত হচ্ছে এবং বিএনপির নেতাদের মামলা হামলা ইত্যাদি নিয়ে যে ধরনের আবেগঘন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে, তাতে বোঝা যায় যে বিএনপিকে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে এই দুই পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান এবং মাহফুজ আনাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

এরা দুজন এক-এগারোতে কি ভূমিকা পালন করেছিলেন তা সকলেই জানে। অর্থাৎ বিএনপি এখন পরিচালিত হচ্ছে এক-এগারোর কুশীলবদের দ্বারা। তাদের মূল লক্ষ্য বিএনপিকে ব্যবহার করে আরেকটি এক-এগারো সৃষ্টি করা। কারণ বিএনপি যদি রাজনৈতিকভাবে মাঠ গরম করতে না পারে, একটি পরিস্থিতি তৈরী করতে না পারে, তাহলে এক-এগারো আরেকবার আসা সম্ভব নয়। আর এ কারণেই এক-এগারোর ব্যর্থ কুশীলবরা এখন বিএনপির উপর ভর করেছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭