ইনসাইড পলিটিক্স

দুর্গম পথে আওয়ামী লীগের একলা যাত্রা


প্রকাশ: 24/10/2023


Thumbnail

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যার নেতৃত্বে এদেশের মুক্তিযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে এদেশের নিরস্ত্র মানুষ যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের যে স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার দল আওয়ামী লীগ।

আওমীলীগের রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে সবসময় আওয়ামী লীগ একটি বিরাট সহযোগী মিত্র শক্তি পেয়েছে যারা আওয়ামী লীগকে বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করেছে, পাশে থেকেছে। হতে পারেন তারা ব্যক্তি অথবা রাজনৈতিক সংগঠন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় ঐক্যের রাজনীতি করতেন। বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতেন। আমরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি দেখি যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিয়েছে বটে কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে তিনি পাশে নিয়েছিলেন। আবার বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, শিক্ষক, প্রকৌশলী সকলকে নিয়ে বাংলাদেশের একটি ঐক্যের মেলবন্ধন তৈরি করেছিলেন জাতির পিতা।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর এদেশে যারা এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছিল আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পীরা ছিলেন অগ্রগণ্য। একাশিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব গ্রহণের পরেও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার শক্তির উপর তিনি নির্ভর করেছিলেন। আওয়ামী লীগের বাইরে বিভিন্ন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দলগুলোকে তিনি এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার নিরন্তর চেষ্টা করে সফল হয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ১৫ দলীয় জোট। কমিউনিস্ট পার্টি সহ বিভিন্ন সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছিলেন।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা একক মন্ত্রিসভা গঠন করেননি। বরং ঐক্য মতের মন্ত্রিসভা গঠন করে সকলের প্রশংসা কুড়িয়ে ছিলেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবার অসাম্প্রতিক শক্তিকে জোটবদ্ধ করেন। তার পেছনে ছিলেন দেশের লেখক, শিল্পী, কলাকুশলী বুদ্ধিজীবী সহ সুশীল সমাজের সিংহভাগ অংশ। আর রাজনৈতিকভাবে তিনি গঠন করেছিলেন ১৪ দলীয় জোট। 

২০০৮ এর নির্বাচনে তিনি মহাজোট গঠন করেছিলেন। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগই যেন এখন বড় একলা, আওয়ামী লীগের যেন কোনো বন্ধু নাই, মিত্র নাই। আওয়ামী লীগের এই একলা চলার কারণ কি তা নিয়ে আলাপ আলোচনা অনেক হয়েছে। কিন্তু এই বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগের এই একলা চলা একটি দুর্গম যাত্রার মতো বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনীতির দৃশ্যপটটা যেন পাল্টে গেছে। বাংলাদেশের সুশীল সমাজ, লেখক, বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশ এখন হয় নিস্ক্রিয়, আওয়ামী লীগের ব্যাপারে হতাশ অথবা বিএনপির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আওয়ামী লীগপন্থী যে সমস্ত লেখক, বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন পেশা জীবীরা ছিলেন তাদের বড় অংশই নিষ্ক্রিয়। কিছু মুষ্টিমেয় অংশ যারা কিছু পাচ্ছেন বা পাওয়ার লোভে আওয়ামী লীগের স্তুতি গান। এছাড়া একটি বড় অংশই এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। তাদেরকে আগের মতো করে আওয়ামী লীগের পাশে বা কঠিন সময়ে পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে অনেকে সন্দেহ রয়েছে। 

রাজনৈতিকভাবেও আওয়ামী লীগের বন্ধুর সংখ্যা কমে গেছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাসে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতম বন্ধু কমিউনিস্ট পার্টি তাদের সাথে নেই। ১৪ দলীয় জোট নিষ্ক্রিয় এবং ১৪ দলের জোটের মধ্যে অনেক হতাশা এবং এক ধরনের বেদনা কাজ করছে। তারা অপাংক্তেয় অবস্থায় পড়ে আছে। বিভিন্ন শ্রেণী পেশায় শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় চাটুকাররাই চারপাশে ঘুরপাক খায়। কিন্তু তারা কঠিন সময় আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই সংগ্রাম করবে বা সৎ পরামর্শ দেবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। এই দুর্গম পথে শেখ হাসিনার সহযাত্রী তাহলে কে? এমনকি আওয়ামী লীগের ভেতরেও নেতাদের মধ্যে এখন একটা গা ছাড়া ভাব, কেউই দায়িত্ব নিতে চান না। সকলেই শুধু বক্তৃতার মধ্যে দিয়েই দায়িত্ব সীমাবদ্ধ করেন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে তার বন্ধুত্বের হাতকে সম্প্রসারিত করতে হবে। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে যারা বন্ধু ছিল তাদেরকে আবার কাছে ডেকে আনতে হবে, তাদেরকে পাশে নিয়ে আওয়ামী লীগকে এই দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে। কারণ আগামী নির্বাচনটা বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আগামী নির্বাচন যদি বাংলাদেশে না হয়, গণতন্ত্র যদি নির্বাসিত হয় তাহলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। সে কারণেই নির্বাচন সুষ্ঠু করতে গেলে একলা চলো নীতি থেকে আওয়ামী লীগকে বেরিয়ে আসতেই হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালন করে এমন সকল শক্তিকে আওয়ামী লীগ কাছে টেনে নিলেই আওয়ামী লীগের বিজয় সম্ভব। না হলে এই দুর্গম পথ আওয়ামী লীগের জন্য দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭