ইনসাইড বাংলাদেশ

রাষ্ট্রীয় নীতি উপেক্ষা করে মন্ত্রী সচিবরা একসাথে বিদেশ যান কেন?


প্রকাশ: 25/10/2023


Thumbnail

কিশোরগঞ্জের ভৈরব জংশনের আউটার পয়েন্ট জগন্নাথপুর রেল ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী এগারসিন্দুর গোধূলী এক্সপ্রেস ও মালবাহী ট্রেনের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে হতাহতের সংখ্যা বিশের কাছাকাছি। এই রেল দুর্ঘটনা সারা দেশকে আবেগাপ্লুত করেছে। সকলেই শোকাহত।

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে রেল দুর্ঘটনা যখন ঘটেছে তখন রেলমন্ত্রী এবং রেল সচিব দুইজনই দেশের বাইরে। মালয়েশিয়া সফরে ছিলেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এবং চীনে অবস্থান করছিলেন রেল সচিব মো: হুমায়ুন কবীর। দুইজনই সস্ত্রীক দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

এমন ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সচিবের একসাথে বিদেশ যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার এবং নিয়ম-নীতি অনুযায়ী মন্ত্রী এবং সচিবরা সাধারণত একসঙ্গে বিদেশ যান না। এটা যাওয়া উচিতও নয়। কারণ একজন মন্ত্রী হলেন একটি মন্ত্রালয়ের প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, নীতিনির্ধারক। অন্যদিকে সচিব হলেন প্রধান নির্বাহী। সাধারণত নিয়ম হলো, যখন মন্ত্রী বিদেশে যাবেন তখন সচিব দেশে অবস্থান করবেন। আবার যখন সচিব বিদেশে যাবেন তখন মন্ত্রী দেশে থাকবেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্যের কারণে সচিবরাই এইসব মানছেন না।

এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব একসাথে লটবহর নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তার সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও এই দুই মন্ত্রী, সচিব এবং মহাপরিচালককে একসাথে যেতে দেখা গেছে। অথচ সেখানে মন্ত্রী এবং সচিবের একসঙ্গে কাজ কি সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এরকম বহু মন্ত্রণালয়ে এমন ঘটনাগুলো দেখা যাচ্ছে।

একটি মন্ত্রণালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির একজন হলেন মন্ত্রী এবং অন্যজন হলেন সচিব। তাই তাদের যেকোনো একজনের মন্ত্রণালয়ে থাকা আবশ্যিক। এ কারণেই সাধারণ নিয়ম হলো যে যখন দুইজনের মধ্যে যেকোনো একজন বিদেশ যাবেন। একসঙ্গে জরুরি কাজ ছাড়া বিদেশ যাওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হবে। কিন্তু সস্ত্রীক রেলমন্ত্রী এবং তার সচিব কেন বিদেশ গেলেন এই প্রশ্নের উত্তর নেই।

যদিও এর ব্যাখ্যা হিসেবে তারা বিভিন্ন ধরনের অজুহাত দিতে পারেন। কিন্তু সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হলো যে সর্বশেষ রেল দুর্ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনার ২০ ঘণ্টা পর শোক প্রকাশ করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। গত সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল তিনটায় দুর্ঘটনা ঘটলেও মঙ্গলবার দুপুর বারোটার পর গণমাধ্যমে এই শোক বার্তা পাঠানো হয়। এই ধরনের ঘটনাগুলো প্রশাসনের জন্য উদ্বেগজনক। এধরণের নিয়ম-নীতি মানা হয় না কেন, সেটিও ভেবে দেখার বিষয়। কারণ এই ধরনের নিয়ম নীতিগুলো যদি মানা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে তা বড় ধরনের সংকট তৈরি করবে। যেমন ঘটেছে রেল দুর্ঘটনার সময়।

তাছাড়া বর্তমান সরকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকার কারণে বিদেশ সফর নিরুৎসাহিত করেছেন এবং বিদেশে যেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া না যাওয়া হয়, সেইরকম নির্দেশনার পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। কিন্তু আমলারা এই নির্দেশনা মানছেন না। গত কয়েক মাসে আমলাদের বিদেশ ভ্রমণে কোন ঘাটতি ছিল না। এর মধ্যে কয়টি প্রয়োজনে আর কয়টি অপ্রয়োজনে সেটা দেখার বিষয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭