ইনসাইড পলিটিক্স

পুরস্কার বঞ্চিত, দুঃখ, বেদনা নিয়েই চলে গেলেন সৈয়দ আবুল হোসেন


প্রকাশ: 25/10/2023


Thumbnail

আজ সকালে সৈয়দ আবুল হোসেন মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু ছিল আকস্মিক এবং কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। পরিপাটি একজন মানুষ কেতা দুরস্ত ভদ্রলোক যিনি প্রচন্ড স্বাস্থ্য সচেতন। এরকম একটি মানুষ হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করবেন এটা অনেকেই ভাবতেও পারেননি। কিন্তু মৃত্যু এরকমই একটি অনিবার্য বাস্তবতা। তবে সৈয়দ আবুল হোসেন গেলেন অনেকগুলো দুঃখবোধ নিয়ে এবং পুরস্কার না পাওয়ার বেদনা নিয়ে। পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম নির্ভর করেছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেনের ওপর। 

২০০৯ আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করলে সৈয়দ আবুল হোসেন হয়েছিলেন যোগাযোগ মন্ত্রী এবং যোগাযোগ মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি পদ্মা সেতুর নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি টেন্ডার প্রক্রিয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রাক সমীক্ষা ইত্যাদি দায়িত্ব সম্পন্ন করেন এবং তিনি যখন যোগাযোগ মন্ত্রী সেই সময় বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি এবং জাইকার সঙ্গে চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু মাঝপথে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে আসে। তারা অভিযোগ করে যে এখানে দুর্নীতি হয়েছে এবং সেই দুর্নীতির অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সদ্য প্রয়াত আবুল হোসেন।

আবুল হোসেন বার বার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন এবং তিনি প্রতিবারই বলছিলেন যে, এটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন বানোয়াট। এই অভিযোগে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংক যেন অর্থায়ন করে সেই আশায় সরকারের ভিতর কতিপয় ব্যক্তি বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ করে এবং সেই যোগাযোগের সূত্র ধরেই সরকার সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদত্যাগে বাধ্য করে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান ছুটিতে যান। আর তৎকালীন যোগাযোগ সচিব মোশারফ হোসেন ভুঁইয়াকে জেলে যেতে হয়। পরবর্তীতে যখন বাংলাদেশ নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহসী সিদ্ধান্ত নেয় তখন সৈয়দ আবুল হোসেন আর মন্ত্রী ছিলেন না। কিন্তু তার জায়গা দখল করেন ওবায়দুল কাদের। 

ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী হওয়ার পর নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু শুরু হয়। এই সময় কানাডার আদালতও রায় দেয় যে, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ স্রেফ আষাঢ়ের গল্প। আর তার পরপরই সরকার যারা পদ্মা সেতুর ঘটনায় অপমানিত হয়েছেন, লাঞ্ছিত হয়েছেন, অপদস্ত হয়েছেন, তাদেরকে পুরস্কার প্রদান শুরু করেন। সেই পুরস্কারের ভান্ডার পূর্ণ করেছেন একজন। তিনি হলেন তৎকালীন যোগাযোগ সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া। মোশারফ হোসেন ভুঁইয়াকে শুধু অভিযুক্তই করা হয়নি তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। আর এ কারণেই তার পুরস্কারের মাত্রাটা ছিল সীমাহীন। এখনো তিনি পুরস্কৃত হয়েই চলেছেন। তাকে এনবিআর এর চেয়ারম্যান করা হয়েছিল, সেখানে তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। এখন তাকে জার্মানির রাষ্ট্রদূত করা হয়েছে। সেখানেও তিনি একের পর এক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েই আছেন।

এছাড়াও পদ্মা সেতুর দুর্নীতি তদন্তের দক্ষতা এবং সাহসিকতার পরিচয় দেওয়ার জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি। কারণ সেই সময় তিনি যে দৃঢ়তা এবং সাহস দেখিয়েছেন, বিশ্ব ব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগকে আইনগতভাবে মোকাবিলা করেছেন তার পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন তার সাহস এবং সততার জন্য। সকলেই পুরস্কার পেয়েছেন, পুরস্কার পাননি শুধু একজন। পদ্মা সেতুর তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রিত্ব হারিয়ে ছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। এরপর তিনি নির্বাচনও করেননি। অথচ তার এলাকায় তিনি একক জনপ্রিয়, তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। মন্ত্রিত্ব হারানোর পর তিনি সংসদ সদস্য পদও ছিলেন। আর শেষ পর্যন্ত যখন পদ্মা সেতু নির্মিত হলো এবং প্রধানমন্ত্রী স্বপ্না সেতু উদ্বোধন করলেন তখন সৈয়দ আবুল হোসেন শুধুমাত্র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন। এটিকে বলা যায় সান্ত্বনা পুরস্কার। এছাড়া তার প্রাপ্তির ঝুলিতে কিছুই নেই। প্রধানমন্ত্রী যখন সকলকে পুরস্কৃত করলেন তখন সৈয়দ আবুল হোসেন অপ্রাপ্তির বেদনা নিয়েই চলে গেলেন। তার মৃত্যুর পরও এই প্রশ্নটা থেকে যাবে যে লোকটি একেবারেই নির্দোষ ছিলেন, যার হাতে পদ্মা সেতুর স্বপ্নের বাস্তবায়নের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী সেই লোকটি কেন অপ্রাপ্তির বেদনা নিয়ে চলে গেলেন। এই দুঃখ তার মৃত্যুর শোককে আরও বাড়িয়ে দেবে নিঃসন্দেহে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭