ইনসাইড পলিটিক্স

হরতালের পরে কি


প্রকাশ: 28/10/2023


Thumbnail

অবশেষে দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশে আবার হরতালের রাজনীতি ফিরে এলো। আজ বিএনপির মহাসমাবেশ ছিল। এই মহাসমাবেশকে ঘিরে পুরো রাজধানী জুড়ে ছিল টানটান উত্তেজনা। উত্তেজনার মধ্যেই বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রথমে একটি পাবলিক বাস আক্রমণ করে। এরপর তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করে এবং সর্বশেষ বিএনপির আক্রমণের শিকার অডিট ভবন। এরপর এই পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর অবস্থান নিতে হয়। বিজিপি নামানো হয়। ফলে বিএনপি বুঝতে পারে যে তারা যে লক্ষ্য অর্জন করতে চাইছে তা অর্জন করা সম্ভব না। পাশাপাশি অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, বিএনপির এই হরতাল ডাকাটি ছিল পরিকল্পিত। যেহেতু বিএনপি ঢাকায় অবস্থান নিতে পারছে না এই জন্য হরতাল দিয়ে বিএনপি একটি সহিংস রাজনীতির ধারা আবার নতুন করে চালু করতে চায়। এ কারণেই তারা হরতাল ডেকেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এখন প্রশ্ন হলো হরতালের পরে কি? বিএনপি রাজনীতি এখন কোন পথে যাবে? 

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীর সূত্রগুলো বলছে, হরতালের রাজনীতির মধ্যে দিয়ে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচির ধারা নতুন করে সূচনা করল। বিএনপির মধ্যে একটি ধারা খুব বেশি সক্রিয় আছে যারা মনে করে যে, সমাবেশ বা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে হটানো সম্ভব নয়। এর ফলে সরকার কোনো চাপে পড়বে না। বরং এই ধরনের কর্মসূচি সরকারকে একতরফা নির্বাচনের দিকে উৎসাহিত করবে। এ কারণেই হরতাল, সচিবালয় ঘেরাও, অবস্থান কর্মসূচি ইত্যাদি সহিংস কর্মসূচির ব্যাপারে বিএনপির একাংশের অনেকদিন ধরেই আগ্রহ ছিল। কিন্তু তারা সুযোগ পাচ্ছিল না। কারণ বিএনপি এখন পশ্চিমা দেশগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা এবং তাদের পরামর্শে আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করছিল। তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখার জন্যই বিএনপি চাইছিল যে নমনীয় কর্মসূচি দেবে এবং এই কর্মসূচির ফলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে সরকার তাদের দাবি মানতে বাধ্য হবে। একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। কিন্তু আজ সকালেই বিএনপির জন্য একটি দুঃসংবাদ আসে। ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বেসরকারি বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সলমন এফ রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা হয়। এর ফলে বিএনপি বুঝতে পারে যে, সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের দেশগুলোর সাথে একধরনের সমঝোতা করে ফেলছে। এই সমঝোতা হলে বিএনপির আম-ছালা দুই যাবে এমনটি মনে করে বিএনপির অনেক নেতা। এই কারণেই বিএনপির পক্ষ থেকে হরতালের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে বিএনপি আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারক সূত্রগুলো বলছে, আগামীকাল হরতালের পরপরই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ৩০ অক্টোবর বা তার পরদিন তারা সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে পারে। এছাড়াও বিএনপি রাজপথ, রেলপথ অবরোধ, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিগুলো পালন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে। 

বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, আমাদের হাতে আর কোনো পথ খোলা নেই। কারণ সরকার যেভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে দমন করেছে এর ফলে আমাদের আর কোন বিকল্প কিছু ছিল না। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে দেখা যায় যে বিএনপি ইচ্ছে করেই কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্যই আজকের এই নাটকটি সাজিয়েছে। কারণ হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়ার জন্য যে পরিস্থিতি তৈরি করার দরকার সেই পরিস্থিতি করাটা বিএনপির জন্য জরুরি ছিল। সে কারণেই তারা এধরনের পরিস্থিতি আগে তৈরি করেছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭