ইনসাইড পলিটিক্স

নাটকীয় ঘোষণা দেবে বিএনপি?


প্রকাশ: 30/10/2023


Thumbnail

নিজের ভুলে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া বিএনপি এখন আন্দোলনের কৌশল নিয়ে বিভ্রান্ত, দ্বিধা বিভক্ত। দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতারা পলাতক। তাদের টিকিটই পাওয় যাচ্ছে না। কর্মীরা বিভ্রান্ত। এর মধ্যেই গতকাল বিএনপি আগামীকাল থেকে তিন দিনের অবরোধ ঘোষণা করেছে। এই অবরোধের ধরন কি রকম হবে এবং অবরোধ বাস্তবায়ন কারা, কিভাবে করবে সেই সম্পর্কেও কোন নির্দেশনা এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, বিএনপির পক্ষ থেকে একটি নাটকীয় ঘোষণা আসবে। 

বিএনপি এরকম বিপর্যস্ত অবস্থায় আবার কূটনীতিকদের স্মরণাপন্ন হয়েছেন। কূটনীতিকরা তাদেরকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে। আর এই রকম পরিস্থিতিতে যেকোনো সময় বিএনপির নেতাদের পক্ষ থেকে এই শর্ত সাপেক্ষে সরকারের সঙ্গে সংলাপের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। এছাড়াও বিএনপি নির্বাচনের নির্বাচনে যাওয়ারও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারে কিছু শর্ত সাপেক্ষে। বিভিন্ন বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ থেকে যে সহিংসতা শুরু হয়েছে সেজন্য দলটির শীর্ষ নেতারা অনেকের ওপর ক্ষুব্ধ। বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতাই এরকম পরিস্থিতি চাননি। বিশেষ করে যারা ২০১৩ এবং ২০১৪ সালের আন্দোলনের পরিণতি সম্পর্কে জানেন তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। এরকম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া পরিস্থিতির ফলে কি পরিণতি হতে পারে সেটা সম্পর্কে পূর্ব থেকে ধারণা ছিল বিএনপির অনেক নেতার। কিন্তু বিএনপির এই সমস্ত নেতাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না কর্মীরা। এই সমস্ত কর্মীরা সরাসরি তারেকের নির্দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন। এর ফলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার যে সম্ভাবনা বিএনপি জাগিয়ে তুলেছিল এবং যে আন্দোলনের ব্যাপারে সুশীল, বুদ্ধিজীবী, কূটনীতিক এবং সাধারণ মানুষের কিছুটা হলেও আস্থা অর্জন করেছিল মুহূর্তেই সেই সমস্ত আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন বিএনপির ওপর সকলেই বিরক্ত। বিশেষ করে হরতালের পর তিন দিনের অবরোধে সাধারণ মানুষ বিএনপির ওপর রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি নিজেরাও জানে যে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।

বিএনপির বিভিন্ন শীর্ষ নেতারা বর্তমান পরিস্থিতির বাস্তবতা লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। এরকম পরিস্থিতিতে আন্দোলন করে নির্বাচন প্রতিহত করা অসম্ভব ব্যাপার। নির্বাচন তফসিলের বহু আগেই বিএনপির শীর্ষ সব সামনে তারা এখন গ্রেপ্তারের মুখে। দলের মহাসচিব ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন ঠেকানো তো দূরের কথা কোনোরকম আন্দোলন গড়ে তোলাও অসম্ভব হয়ে যাবে। আর তাই এখন বিএনপির ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অনেক শীর্ষ নেতা। তারা সরকারকে কিছু শর্ত দিয়ে সংলাপের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাতে পারেন। আর যে সমস্ত শর্ত দেওয়া হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে- আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি। বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি প্রত্যাহার, যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে সেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার। 

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, এরকম একটি পরিস্থিতি থেকে দলের ইমেজ পুনরুদ্ধারের জন্য এখন একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে তা হলো নির্বাচনে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এটা পরিষ্কার করা যে বিএনপি নির্বাচনের বিরুদ্ধে নয়। নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এটি যদি বিএনপি প্রমাণ করতে পারে তাহলে সেক্ষেত্রে বিএনপির জন্য আবার কূটনীতিকদের আস্থা অর্জন সম্ভব হবে। বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ দিতে পারবে। এই একটি বিকল্পই বিএনপির সামনে খোলা আছে। এখন দেখার বিষয় বিএনপি সেরকম কোনো না ঘোষণা দেয় কিনা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭