ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

হামাসের প্রতিরোধে পিছু হটেছে স্থলবাহিনী


প্রকাশ: 30/10/2023


Thumbnail

শুক্রবার রাতে গাজা উপত্যকায় স্থলপথে হামলা শুরু করার পর থেকে ক্রমেই হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। শনিবার রাতে ৪৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হলেও রোববার রাতে সে সংখ্যা ৬০০টিতে উন্নীত করেছে আইডিএফ। এর ফলে হামলার ২৪তম দিনে সোমবারও গাজার বিভিন্ন স্থানেই মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দের পাশাপাশি ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।

গাজার উত্তরাংশের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার প্রথম কয়েক ঘণ্টায় ইসরায়েল তীব্র গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় গাজার উত্তরাংশের অনেক এলাকায় ইন্টারনেট ও ফোন পরিষেবা ফের বন্ধ হয়ে গেছে। গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলের বিমান হামলা কোনোরকম বিরতি ছাড়াই অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) প্রতিদিনের হামলা আগের দিনের চেয়ে তীব্র করছে।   

আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, গাজায় আমাদের অভিযান জোরদারের লক্ষে আরও পদাতিক সেনাকে গাজায় পাঠিয়েছি।পদাতিক বাহিনী, ট্যাক, ভারী অস্ত্রসহ সমন্বিতভাবে আমরা এখন অভিযান পরিচালনা করছি। সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে আমাদের আকাশ থেকেও সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও জানিয়েছেন, ‘গাজার লড়াই শেষ হতে সময় লাগবে। পরিস্থিতি খুব সহজে স্বাভাবিক হবে না।গাজায় স্থলসেনারা যে অভিযান চালাচ্ছে, তা সহজে বন্ধ হবে না।’

এদিকে হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন স্থানে তারা ইসরায়েলের হামলাকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের প্রতিরোধে ট্যাঙ্কসহ ইসরায়েলের বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। 

এদিকে ফিলিস্তিনের গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমানগুলো গাজা নগরীর শিফা ও আল কুদস হাসপাতালের আশপাশের এলাকাতে হামলা চালিয়েছে আর দক্ষিণে খান ইউনুস শহরের পূর্বদিকের সীমান্ত এলাকায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। দুপক্ষের সংঘাতে উপত্যকার উত্তরাংশের সঙ্গে দক্ষিণাংশের প্রধান সংযোগ সড়ক সালাহ আল দীন স্ট্রিট বন্ধ হয়ে গেছে। ইসরায়েলি সৈন্যরা সালাহ আল দীন স্ট্রিটের বিভিন্ন স্থান কেটে ফেলেছে এবং কোনো যানবাহন এই সড়ক দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেই সেটি লক্ষ্য করে তারা গুলি চালাচ্ছে।

এদিকে আরেক খবরে জানা গেছে, হামাস যোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উপকণ্ঠে ঢুকে পড়া ইসরায়েলি বাহিনীর ট্যাংক ও বুলডোজার। গাজায় ঢোকা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে হামাসের তীব্র সংঘর্ষের জেরে ইসরায়েলি ট্যাংক ও বুলডোজার গাজা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বলে হামাসের সরকারি অফিসের প্রধান এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

সোমবার ফিলিস্তিনি একাধিক সূত্র আলজাজিরাকে বলেছে, ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো গাজার সীমান্ত থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে গাজা শহরের মধ্যবর্তী সালাহ আল দীন সড়কের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় আক্রান্ত হয়েছে। পরে ওই এলাকায় হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলি সৈন্যদের তুমুল লড়াই হয়।

৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত  ৩৪৫৭ শিশু, ২১৩৬ নারী এবং ৪৮০ প্রবীণসহ কমপক্ষে ৮৩০৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন ২১,০৪৮ জন। আর ১০৫০টি শিশুসহ ১৯৫০ জন ফিলিস্তিনি এতে নিখোঁজ রয়েছেন। এদিকে  গাজার খান ইউনুসে ইসরায়েলের হামলায় ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ জন নিহত হয়েছেন।

গাজায় হামাসের সরকারি অফিসের প্রধান কর্মকর্তা সালামা মারুফ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গাজা উপত্যকার আবাসিক এলাকাগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনীর কোনো স্থল অভিযান নেই। সালাহ আল দীন সড়কে কেবল দখলদার সেনাবাহিনীর কয়েকটি ট্যাংক এবং একটি বুলডোজার অনুপ্রবেশ করেছিল।’ 

তিনি বলেন, ‘এসব যানবাহন সালাহ আল দীন স্ট্রিটে দুটি বেসামরিক গাড়িকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। পরে হামাসের যোদ্ধাদের প্রতিরোধে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে ইসরায়েলি সব যানবাহন। চলে যাওয়ার আগে দখলদার বাহিনী সড়কের বিভিন্ন স্থান কেটে রেখে গেছে।’

ইসরায়েল-গাজায় সেনা পাঠাবে না যুক্তরাষ্ট্র :

সো পাঠানোর বিষয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, ‘ইসরায়েল বা সিরিয়ায় নিয়ে আমারা এ ধরনের কোনো পরিকল্পনাও করছি না। ইসরায়েল বা গাজায় সেনা পাঠানোর কোনো আগ্রহ ওয়াশিংটনের নেই।  

 সিবিএস নিউজকে তিনি বলেন, ইসরায়েলে ১৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে তবে ইসরায়েলকে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা বিষয়টি দেখতে হবে। হামাস ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করে না এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফিলিস্তিনিদেরও সমান নিরাপত্তা ও সুরক্ষা, আত্মমর্যাদা রক্ষার অধিকার রয়েছে। 

গাজায় ৪৭টি মসজিদ ও ৭টি গির্জা ধ্বংস : 

গত তিন সপ্তাহে ২০৩টি স্কুল এবং ৮০টি সরকারি অফিসও ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। ব্যাপক বোমা হামলার কারণে ২ লাখ ২০ হাজার আবাসন ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৩২ হাজার ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

এছাড়া ইসরায়েলের চলমান বিমান হামলায় ৪৭টি মসজিদ এবং ৭টি গির্জা ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার মিডিয়া অফিস।

গাজায় আরও ৩৩ ট্রাক ত্রাণ : 

অবরুদ্ধ গাজায় রোববার আরও ৩৩ ট্রাক ত্রাণ ঢুকেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, মিসরের সঙ্গে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে রোববার ত্রাণবাহী ৩৩ ট্রাক প্রবেশ করে। এসব ট্রাকে ছিল পানি, খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী। 

জাতিসংঘের সংস্থাটি বলেছে, ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত মিসরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে গাজায় ত্রাণবাহী ১১৭টি ট্রাক ঢুকেছে। যদিও সেটি গাজার প্রায় ২৪ লাখ মানুষের জন্য অপ্রতুল। অবরোধের আগে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ট্রাক সাহায্য এবং অন্যান্য পণ্যবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করত।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭