কালার ইনসাইড

মাত্র একটি হলে মুক্তি পাওয়া সিনেমাই অবশেষে সেরা সিনেমা নির্বাচিত


প্রকাশ: 01/11/2023


Thumbnail

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২ এ সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে দুটি সিনেমা। একটি ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ এবং আরেকটি ‘পরাণ’। নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউমের ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমাটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেলেও সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার পর সিনেমাটি মুক্তির সময় নির্মাতাকে নানা প্রতিকূলতা ও বাঁধা পার করতে হয়েছে। সিনেমা হলের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন নির্মাতা, সিনেমায় কথিত তারকা নেই বলে সিনেমাটি চালাতে চাননি হলমালিকেরা।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম আনন্দের সাথে জানান সেই আক্ষেপ ও ছবিটিকে নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের অবহেলার কথা। তিনি বলেন, ২০২২ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় মাত্র এক সপ্তাহ প্রদর্শিত হয়েছিল সিনেমাটি। সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে তুমুল আগ্রহ থাকলেও হলগুলো সপ্তাহখানেকের মধ্যেই নামিয়ে ফেলে। এরপর চট্টগ্রামের সুগন্ধা সিনেমা হল ও নারায়ণগঞ্জের সিনেস্কোপে কিছুদিন প্রদর্শিত হয়।

পরবর্তীতে সিনেমাটি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পাঠানো হয়। বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ এ উৎসবের আন্তর্জাতিক বিভাগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৪টি সিনেমার সঙ্গে মনোনীত হয় ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’। উৎসবের মধ্যে টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ ভারতের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সিনেমাটি নিয়ে তুমুল আলোচনাও হয়েছিল। তখনই স্পেনের সিনেমা ‘আপঅন এন্ট্রি’র সঙ্গে যৌথভাবে উৎসবের সেরা সিনেমার (গোল্ডেন রয়েল বেঙ্গল টাইগার) পুরস্কার জিতে ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’।

আজ জাতীয় চলচ্চিত্র ২০২২ এ সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার ঘোষণার পর সিনেমাটির পরিচালক ও প্রযোজক বলেন, ‘পুরস্কার পেলে সাধারণত ভালোই লাগে। আমি বেশি খুশি হয়েছি, আমার চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি একটা-দুটো পুরস্কার যা-ই পাই না কেন, চলচ্চিত্রটা পাওয়া মানে হচ্ছে এই চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত পুরো টিমের সব সদস্যের অর্জন বা সবার কৃতিত্ব। কারণ, চলচ্চিত্র নির্মাণ একটা টিমওয়ার্ক।’

নির্মাতা আরও বলেন, সিনেমাটি নিয়ে লড়াইয়ের মধ্যে ছিলাম। মুক্তির তারিখ পেলেও হল পাইনি, চলচ্চিত্র মুক্তির জন্য পরিবেশক সমিতি থেকে অনুমতি নিতে হয়। মুক্তির আবেদন করার পরে, পরিবেশক সমিতি থেকে মুক্তির তারিখ দিয়ে দেয়। কিন্তু কিন্তু সিনেমাটি কোথায় মুক্তি পাবে, এ দায় দায়িত্ব কেউ নিতে চায়নি। সিনেমা হল মালিকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি।

সিনেমার নাম দেখে, পোস্টার দেখে, কোনো চলচ্চিত্র তারকা নেই, হিট গান ছিল না বলে তারা সিনেমাটি ফিরিয়ে দিয়েছে। মুখের ওপর তারা জানিয়ে দিয়েছে এটা তারা চালাতে পারবে না। সিনেপ্লেক্স থেকেও সিনেমাটি মুক্তি দিতে চায়নি। অবশেষে অনেক অনুরোধ করে মাত্র ৬ দিনের জন্য সিনেপ্লেক্সে চালাতে পেরেছি।

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমাটি ছিল নির্মাতার ২৫ বছরের স্বপ্ন এবং পাঁচ বছরের সাধনার ফসল। সব পরিশ্রমের এতো সুন্দর উপহার পেয়ে আবেগাপ্লুত নির্মাতা। তিনি বলেন, সিনেমাটি মুক্তির পর দর্শক, সমালোচক থেকে শুরু করে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছি এবং আজকের এই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সব মিলিয়ে আমার এতো বছরের পরিশ্রমের অনেক সুন্দর উপহার পেয়েছি।

সিনেমাটি মুক্তিকালের ঘটনা জানিয়ে পরিচালক বলেন, সিনেমার কাঙ্ক্ষিত একটি দৃশ্য পেতে পাক্কা আড়াই বছর অপেক্ষা করেছেন তিনি। সিনেমার এক দৃশ্যে দেখা যায়, হাওরে ধান কাটার মৌসুমে হড়কা বান নামে, ২০১৯ সালে সেই বানের দৃশ্য ধারণের পর আর বানের দেখা মেলেনি; কাইউমের অপেক্ষা বছরের পর বছর পেরিয়ে দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়। ২০২১ সালের শেষে এসে সেই দৃশ্য ধারণ করেন তিনি।  

তবে এ ধরনের সিনেমা মুক্তি দিতে যে প্রতিকূলতা থাকে তা কাটিয়ে উঠা উচিত বলে মনে করেন এই নির্মাতা। নির্মাতার মতে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা, সংস্কৃতিতে সুস্থ ধারার যে সাংস্কৃতিক আয়োজন তার অধিকাংশে ব্যাহত হচ্ছে। বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমা না হলে সেসব সিনেমা মুক্তি দিতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। শুধু মুক্তি নয়, সিনেমা নির্মাণ ও শুটিং থেকে শুরু করে ভারী যন্ত্রের অভাব। এই প্রতিকূল অবস্থা কাটিয়ে উঠা উচিত। 

হাওরের সংগ্রামের গল্পে নির্মিত সিনেমা ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে ওড়া’। এতে অভিনয় করেছেন জয়িতা মহলানবিশ, উজ্জ্বল কবির হিমু, সুমি ইসলাম, সামিয়া আকতার বৃষ্টি, বাদল শহীদ, মাহমুদ আলম ও আবুল কালাম আজাদ। নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম নিজেই প্রযোজনা করেছেন ছবিটি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭