ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিকে ছাড়াই আরেকটা জাতীয় সংসদ নির্বাচন


প্রকাশ: 01/11/2023


Thumbnail

বিএনপি কি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে? নিজেদের আত্মঘাতী তৎপরতার কারণে বিএনপি এখন বিপর্যস্ত, ব্যাকফুটে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ থেকে যে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে সেই ঘটনার ফলে ব্যাকফুটে চলে গেছে দলটি। দলের শীর্ষ নেতারা এখন কেউ ভয়ে পালিয়ে আছেন অথবা জেলে রয়েছেন। এরকম পরিস্থিতিতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখা দলটির পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার। তাই বিএনপির সামনে নির্বাচনে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই। বিএনপি এখন সরকারের সঙ্গে সমঝোতার একটা পথ খুঁজছে। কিন্তু সরকারের সাথে সমঝোতা করার জন্য বিএনপির কোনো নেতাও এখন আর দৃশ্যমান নন। তাই বিএনপির জন্য আবার একটি ২০১৪’র মতো পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। কারণ বিএনপি যে কৌশলটি গ্রহণ করেছিল সেই কৌশলটি এখন ভুল প্রমাণিত হয়ে গেছে।

অন্যদিকে কদিন আগেও আওয়ামী লীগ নানা রকম চাপে অস্বস্তিতে ছিল। বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, বিএনপির আন্দোলনের ফলে নির্বাচন কি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে কিনা, ইত্যাদি নানা প্রশ্ন ছিল আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে। সেখান থেকে বিএনপির ভুলে আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন একটা উৎফুল্ল ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা এখন আবার ক্ষমতায় আসার ঘ্রাণ পাচ্ছেন। 

আওয়ামী লীগ মনে করছে বিএনপি ২৮ অক্টোবর যে ঘটনা ঘটিয়েছে সেই ঘটনার কারণে তারা এখন সর্বশেষ গ্রহণযোগ্য টুকুও হারিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ এখন কৌশলগত ভাবে এরকম একটা পরিস্থিতিতে বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন করতে চায় বলে কোন কোন মহল মনে করছেন। বিশেষ করে এই বিপর্যস্ত অবস্থায় জনগণ যখন বিএনপির ব্যাপারে হতাশ এবং অনেকটাই ক্ষুব্ধ ঠিক সেরকম সময়ে যদি নির্বাচন হয় তাহলে সেই নির্বাচনে বিএনপির আশা না আশা নিয়ে মানুষ খুব একটা মাথা ঘামাবে না। আন্তর্জাতিক মহলেও এ নিয়ে বিএনপিকে চাপ দিতে পারবে না। আর এর ফলে সরকারের জন্য বিএনপিকে ছাড়া একটি নির্বাচন সহজ হবে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা তা মনে করছেন না। 

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে তারা চান যে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। তবে বিএনপিকে অনুরোধ করে, তাদেরকে অনুনয়-বিনয় করে নির্বাচনে আনার কোনো পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের নেই। বরং আওয়ামী লীগ সবসময় মনে করছে যে বিএনপির ভুলের মাসুল বিএনপিকে দিতে হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না সেটি তাদের সিদ্ধান্ত। বিদ্যমান পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি যদি মনে করে যে তারা নির্বাচন কমিশনে আসবে তাহলে তারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে যাবে, তারা তাদের মনোনয়ন দেবে এবং একটি রাজনৈতিক দল যেভাবে নির্বাচনে যায় সেভাবেই নির্বাচন করবে। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। যে দল ইচ্ছা সেই দল আসবে, যে দলের ইচ্ছা হবে না তারা নির্বাচন করবে না। তবে আন্তর্জাতিক মহল বিএনপিকে এখন নির্বাচনে আনার জন্য চাপ দিচ্ছে। আর বিএনপিও যে ভুল করেছে সেই ভুলের মাসুল হিসেবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসতে চাইছে। তবে এই নিয়ে বিএনপির মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত গো ধরে থাকে এবং এই আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত তারা নির্বাচন করবে না এমন একটি অনড় অবস্থানে থাকে তাহলে সেটা বিএনপির অস্তিত্বকেই সংকটে ফেলবে। এর ফলে বিএনপি বিলীন হয়েও যেতে পারে। কারণ এখন বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের পরে দেশে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে পরিস্থিতিতে বিএনপি বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থা হারিয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক মহলের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্পষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় নির্বাচন না করে নির্বাচন প্রতিরোধের আন্দোলন করা তাদের পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার। তিন দিনের অবরোধ যারা সফল করতে পারেনি তারা আগামী ৯০ দিন কিভাবে আন্দোলন করবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন এবং সেটি বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয় বলেই মনে করেন। আর সে কারণেই কৌশলের খেলায় আওয়ামী লীগ যেমন চায় যে বিএনপি নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে আসুক অথবা না আসুক তেমনি বিএনপির করণীয় ঠিক করতে হবে দ্রুতই। কারণ সময় চলে যাচ্ছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭