ইনসাইড পলিটিক্স

অর্থহীন অবরোধ নিয়ে বিএনপিতে মতবিরোধ


প্রকাশ: 02/11/2023


Thumbnail

তিন দিনের অবরোধ আজ শেষ হল। বিএনপি এখন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, আবার তারা অবরোধের মতো কর্মসূচি দেবে। মাঝখানে তারা একদিন বা দুইদিনের একটি বিরতি দিতে পারে। বিশেষ করে ৭ই নভেম্বর বিএনপির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন৷ এই কারণে ওই দিনটিকে তারা বাদ রেখে টানা আন্দোলনের কর্মসূচির মধ্যে থাকতে চাচ্ছে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া আন্দোলনকে অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি যেহেতু ঢাকায় থাকেন না, বাংলাদেশের বাস্তবতা সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। তার ঝুঁকিও নেই। তিনি প্রতিনিয়ত চাঁদার টাকা পান। আন্দোলন হলে চাঁদার রেট আরও বেড়ে যায়। এরকম অবস্থা থেকে আন্দোলনের ঘোষণা দিতে তার কোনও অস্বস্তি নেই। কিন্তু বিএনপির যে সমস্ত নেতা কর্মীরা ঢাকায় থাকেন, তাদেরকে অনেকগুলো বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। যেমন এখন সাধারণ মানুষ এই ধরনের আন্দোলনকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

রোববার থেকে যে অবরোধ শুরু হয়েছে তা দ্বিতীয় দিনেই ভেসতে গেছে। এখন রাস্তায় মোটামুটি যানজট। শুধুমাত্র বিক্ষিপ্ত ভাবে বিএনপির কোনো কোনো নেতা কর্মীরা হঠাৎ যেয়ে কিছু ভাঙচুর এবং অগ্নি সংযোগ করছে। এর ফলে বিএনপি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের আরও নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে বিএনপির দুর্বলতাও প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। যাদের একটি অবরোধ করার ক্ষমতা নেই তারা আগামী নির্বাচন কী ভাবে প্রতিরোধ করবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

তবে এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে বিএনপির। বিএনপির একাধিক নেতা গ্রেফতার হয়েছেন আরও অনেক নেতা আত্মগোপনে আছেন। কর্মীরা ঘর থেকে পলাতক। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় বিএনপি নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়বে এমনটাই মনে করছেন দলটির নেতা কর্মীরা। আর এই রকম অবস্থায় নির্বাচন প্রতিরোধ করা তো দূরের কথা, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাও বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। সরকার কেবল বিএনপিকে চাপে ফেলে নাই, সাধারণ মানুষও বিএনপির সম্পর্কে এক ধরনের অনাস্থা প্রকাশ করছে।

সবকিছু মিলিয়ে একটি বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতায় বাইরে থাকা দলটি। এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপির মধ্যে আবার অবরোধ এবং টানা কর্মসূচি রাখা নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হচ্ছে। বিএনপির মধ্যে যারা চিন্তাশীল ব্যক্তি, যারা রাজনীতি বোঝেন, তারা মনে করছেন, এখন বিএনপির আন্দোলনের সময় নয়, এখন বিএনপিকে কৌশলগত অবস্থান নিতে হবে। নির্বাচন কমিশন যেহেতু বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সেখানে শনিবারের সংলাপে বিএনপির অংশগ্রহণ করা উচিত এবং এই সংলাপে যদি বিএনপি শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করে তাহলে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির জন্য আন্দোলন করে সরকারকে হটানো বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার৷ আর এ কারণেই বিএনপির অনেকেই মনে করছেন যে এখন কৌশলগত অবস্থান নিতে হবে এবং আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিতে হবে। তারপর যদি সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে কারচুপি আশ্রয় নেয়, প্রভাব বিস্তার করে বা অন্য কোনো ঘটনা ঘটায় সেটির দায়িত্ব সরকারের ওপর পড়বে। তখন বিএনপি সম্পর্কে মানুষের এবং আন্তর্জাতিক মহলের একটি ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে৷ তারা তাদের পাশে দাঁড়াবে।

কিন্তু লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এরকম ফর্মুলার সাথে একমত নন বরং অব্যাহত আন্দোলন, ভাংচুর, নাশকতার মাধ্যমে একটি সন্ত্রাসী পরিস্থিতি তৈরি করাই তার লক্ষ্য। কিন্তু এই পরিস্থিতি তৈরি করতে গিয়ে বিএনপির লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হচ্ছে বলেই মনে করেন অনেকে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭