ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

গাজা যুদ্ধে বহুরূপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে যেসব দেশ!


প্রকাশ: 03/11/2023


Thumbnail

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ যেন সকল সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। গত ২৬ দিন ধরে গাজায় অব্যাহত বোমা হামলা চালিয়েই যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। হাসপাতাল থেকে শুরু করে শরণার্থী শিবির কিছুই বাদ দিচ্ছে না তারা। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। টানা এ বিভৎস হামলায় গাজায় এযাবৎকালে মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই প্রায় ৪ হাজারের কাছাকাছি।

একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ব্যতীত আর কেউই এ বর্বরতায় সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েলিদের সাথে সামিল হয়নি। ইসরায়েল হামাসের এ সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের মত বহুমুখী আচরণ আর কেউ হয়তো করেনি। এই একদিকে তারা গাজায় মানবিক বিরতি চায়, কিন্তু যুদ্ধবিরতি চায় না। আবার আরেকদিকে মানবিক বিরতি চাইলেও তারা ইসরায়েলকে ব্যাপকভাবে কোটি কোটি ডলারের সামরিক অস্ত্র সহায়তা দেয়, পাঠায় রণতরী। আবার জাতিসংঘে উত্থাপিত রাশিয়ার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবও যুক্তরাষ্ট্র ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অন্যান্য দেশ হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের এই ‘আত্মরক্ষা’ নামক নাটকে যুক্তরাষ্ট্রের মত বহুমুখী আচরণে যায়নি। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে ইসরায়েলের এ গণহত্যায় অন্যান্য দেশ তাদের অবস্থান করেছে স্পষ্টভাবে পরিষ্কার। বহু দেশ ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের সাথে সকল রকম বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।


গাজায় অব্যাহত সামরিক হামলার প্রতিক্রিয়ায় শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয় খোদ পশ্চিমা রাষ্ট্রের বহু ইহুদি সম্প্রদায়ই বিক্ষোভ করেছে, করেছে যুদ্ধবিরতির আন্দোলন। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। এর জের ধরেই ইসরায়েলিদের এ নৃশংস হামলার প্রতিবাদে দেশটির সঙ্গে সর্বপ্রথম কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে লাতিন আমেরিকার দেশ বলিভিয়া। গাজা-সংকট শুরুর পর প্রথম যদি কোনো দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় সেটি হচ্ছে এ দেশটি। বলিভিয়া গাজা উপত্যকায় সংঘটিত আক্রমণাত্মক ও অগ্রহণযোগ্য ইসরায়েলি সামরিক আক্রমণ নিন্দাভরে প্রত্যাখ্যান করে এবং ইসরায়েলি রাষ্ট্রের সঙ্গে সকল প্রকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এর পরপরই বলিভিয়ার প্রতিবেশী দেশ কলম্বিয়া ও চিলিও তেল আবিবে নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ডেকে পাঠায়। দূতদের সঙ্গে দেশগুলো গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েল হামলার নিন্দা ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর বিষয়ে সলাপরামর্শ করে। ঐতিহাসিকভাবেই লাতিন আমেরিকার বামঘেঁষা দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তবে অঞ্চলের ডানপন্থী দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ছায়াতলে ইসরায়েলঘেঁষা নীতি অবলম্বন করে। একারণেই এ সিদ্ধান্ত এসেছে বলে ধারণা করা হয়।

চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বরিস এক টুইটে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করে তেল আবিবে নিযুক্ত চিলির রাষ্ট্রদূত জর্জ কারভাহালকে ডেকে পাঠান। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টও ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালানোর প্রেক্ষিতেই রাষ্ট্রদূত ফেরত পাঠানোর এ সিদ্ধান্ত নেন।

এদিকে জর্ডানও ইসরায়েল থেকে অবিলম্বে নিজেদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েল ‘নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে অভিযোগ দেশটি এ বক্তব্য প্রকাশ করে। একই সঙ্গে ইসরায়েলকেও জর্ডান থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিতে বলে দিয়েছে দেশটি।

এছাড়া, লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশ যেমনমেক্সিকো ও ব্রাজিলও এরই মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তাদের প্রতিক্রিয়াও যেকোনো সময় সামনে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে চলমান হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাতের মাঝেই বিশ্ব মানচিত্রের অনলাইন সংস্করণ থেকে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের নাম মুছে দিয়েছে চীন। শীর্ষ দুই চীনা কম্পানি বাইদু ও আলিবাবা বিশ্ব মানচিত্রের যে অনলাইন সংস্করণ প্রকাশ করেছে তাতে ইসরায়েলের নাম পাওয়া যায়নি। লুক্সেমবার্গের মতো ক্ষুদ্র দেশের নামও চীনা মানচিত্রের অনলাইন সংস্করণে দেখা গিয়েছে কিন্তু ইসরায়েলের নাম সেখানে ছিল না। চীনও বেশ ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল সম্পর্কে তাদের আসল ধারণা। সংঘাতের শুরু থেকেই পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ এড়িয়ে দুই পক্ষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছে চীন, কিন্তু ইসরায়েলের সেদিকে কর্ণপাতের সময় কোথায়। তারা যেন মেতে আছে রক্ত নিয়ে হোলিখেলায়।

সর্বশেষ এবার ইসরায়েলের সঙ্গে সকল রকম বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত করেছে বাহরাইন। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে গণহত্যা ও হামলার প্রতিবাদেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। ইসরায়েল থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে ইতোমধ্যেই প্রত্যাহার করে নিয়েছে সাথে সাথে বাহরাইনে নিযুক্ত ইসরায়েলি দূতও বাহরাইন ছেড়েছেন ইতোমধ্যেই।

সবকিছুরই শেষ আছে। এ ভয়াবহ গণহত্যারও হয়তো আছে। ভবিষ্যত কেউ জানে না। কাল কি হবে কেউই বলতে পারে না। তবুও ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করতে শুরু করেছে তাতে করে কি তারা তাদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে পারবে একমাত্র সবেধন নীলমণি যুক্তরাষ্ট্রের ভরসায়?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭