ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপি নেতারা কি স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হচ্ছেন


প্রকাশ: 03/11/2023


Thumbnail

একের পর এক বিএনপির শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। সর্বশেষ গত রাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গুলশানে তার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও তার বাসভবনে অবস্থান করছিলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস তার বাসার পাশেই আত্মগোপনে ছিলেন। তবে সেটিকে আত্মগোপন বলা যায় না। 

বিএনপি ২৮ অক্টোবরের যে তাণ্ডব নাশকতা করেছে সেই তাণ্ডব এবং নাশকতায় ২৮ টি মামলা হয়েছে। এই ২৮ টি মামলাতে বিএনপির প্রায় সব স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সক্রিয় নেতারা আসামি হয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। কিন্তু লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া নেতাকর্মীদের আত্মগোপনে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং আত্মগোপনে থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ২৮ অক্টোবরের পর তারেক জিয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের প্রত্যেককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন নিরাপদ স্থানে আত্মগোপন করে থাকেন এবং আত্মগোপন থেকে যেন আন্দোলন পরিচালনা করে। কিন্তু তারেকের নির্দেশ শুনছেন না বিএনপি নেতারা। তারা কেউই আত্মগোপনে যাচ্ছেন না। বরং তারা যে যার বাড়িতে অবস্থান করছেন। তারা জানতেন যে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। পুলিশ হাসপাতালে হামলা, অগ্নিসংযোগ, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনা সহ বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় বিএনপির প্রায় সব নেতাই আসামি। আসামি হওয়ার পরও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে কৌশলগত কারণে কেন তারা আত্মগোপনে থাকছেন না, কেন তারা বাসায় থাকছেন এই প্রশ্ন এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে। 

তারা বলছেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা কি তাহলে ইচ্ছা করেই গ্রেপ্তার হচ্ছেন? আন্দোলনের দায় থেকে এড়ানোর জন্য এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া থেকে নিজেদেরকে বাঁচার জন্যই কি তারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন? অনেক বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে তারেক জিয়া যে সর্বগ্রাসী আন্দোলনের তত্ত্ব এবং লাগাতার অবরোধের চিন্তা তাকে বিএনপি নেতারা উদ্ভট মনে করছেন এবং এভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং কারাগারে গিয়ে আরাম আয়েশে কদিন বিশ্রাম নেওয়া হল সবচেয়ে সুবিধাজনক। এতে একদিকে যেমন ঝুঁকি নেই অন্যদিকে তেমনি কিছুটা বিশ্রাম পাওয়া যাবে। কারণ বিএনপির কোনো নেতাই এই রকম আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে রাজি নন। এই আন্দোলনের পরিণতি কী হবে সেটি বিএনপির অনেক নেতারাই জানেন। বিএনপির যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তাদের মধ্যে রুহুল কবির রিজভী একজন। রুহুল কবির রিজভী দলীয় কার্যালয়েই অবস্থান করছেন এবং তিনি নিয়মিত কর্মসূচিতে গ্রহণ করছেন। তিনিও যেন চাইছেন থেকে গ্রেপ্তার করা হোক। বিএনপির আরেক নেতা আবদুল মঈন খানও তার বাসায় অবস্থান করছেন এবং সেখানে তিনি গতকাল ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠক করেছেন। অন্যান্য নেতারা আত্মগোপনে আছেন বলে মনে হয় না। বিএনপির মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা বিএনপির একটা কৌশলগত অবস্থান। সব নেতারা গ্রেপ্তার হলে বিএনপি তখন একটা অজুহাত দাঁড় করাতে পারবে। নেতারা সবাই গ্রেপ্তার হয়েছেন এজন্য তাদের আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। নেতারা গ্রেপ্তার হোক বা বাইরে থাকুক এই আন্দোলনের পরিণতি হত অভিন্ন। তবে নেতারা গ্রেপ্তার হয়ে ব্যর্থতার গ্লানি থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে চাইছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে হঠকারী আন্দোলনের অংশীদার না হওয়ার জন্যই বিএনপি নেতারা পুলিশের কাছে ধরা দিচ্ছেন নিজেদেরকে নিরাপদ দূরত্বে রাখার জন্য।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭