বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, অনেক দিন ধরে আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল। রাস্তা-ঘাট বন্ধ না করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। সাধারণত নির্বাচনের আগ দিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ে। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো কি করবে না করবে, নির্বাচনী ইশতেহার কেমন হবে ইত্যাদি। কিন্তু রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দিয়ে হরতাল-অবরোধ করা কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর উচিত না।
হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দেশের অর্থনীতির ওপর কি রকম প্রভাব রাখে তা নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা করেন ড. আতিউর রহমান। পাঠকদের জন্য ড. আতিউর রহমান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।
ড. আতিউর রহমান বলেন, যারা সাধারণ মানুষ, যারা দিন আনে দিন খায়, রাস্তার পাশে যারা ছোটখাটো ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিংবা দোকান দেয়, যারা কষ্ট করে বেঁচে থাকার জন্য চেষ্টা করে তাদের সেই জীবন চলাটা বন্ধ হয়ে যায় এই সব হরতাল-অবরোধের কারণে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে তারা কষ্টে আছে। সুতরাং এই নতুন এই প্রতিবন্ধকতা এগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নিশ্চিয় চাপে ফেলবে। এখন প্রতিদিন কতটুকু অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে প্রতিটি অংশীজন যেমন- যিনি দিনমজুর তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যিনি কৃষক তিনিও ক্ষাতগ্রস্ত হবেন, যিনি পরিবহন শ্রমিক তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যিনি ছোট দোকারদার তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যিনি ভোক্তা তিনি তো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ তাকে বেশি দামে সব কিছু কিনতে হবে। সব মিলিয়ে অর্থনীতির ভেতরের যে প্রক্রিয়া যেমন সরবরাহ, চাহিদার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সবগুলো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়বে।
হরতাল-অবরোধে স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য করা যায় না উল্লেখ্য করে ড. আতিউর রহমান বলেন, গার্মেন্টসের যারা উদ্যোক্তা আছেন তাদের আমদানি বা রপ্তানির বা পণ্য সংগ্রহ করতে খরচ অনেক বেড়ে যায় এবং এ সমস্ত পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে তারা শঙ্কিত থাকে। ইতোমধ্যে গতমাসের আমাদের রপ্তানির হার কমেছে। এই মাসে আরও কমেতে পারে। আমাদের দেশে যখন রিজার্ভের ওপর এতো চাপ সেখানে রপ্তানি কমে গেলে এর প্রভাব বিরাট আকার ধারণ করবে। আমরা ভেবেছি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি হয়তো দেশ থেকে উঠে গেছে কিন্তু এখন আবার নতুন করে রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে হরতাল-অবরোধ দিচ্ছি এর মানে আমরা যারা রাজনীতি করছি তারা সাধারণ মানুষের স্বার্থকে উপেক্ষা করছি।