কালার ইনসাইড

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে নৃত্য পরিচালকদের ক্ষোভ


প্রকাশ: 05/11/2023


Thumbnail

গত ৩১ অক্টোবর ২৮টি শাখায় ২৭ ক্যাটাগরির জাতীয় চলচ্চিত্র ২০২২ পুরস্কারের তালিকা ঘোষণা করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। তবে প্রতিবারের মতো এবারও তালিকা প্রকাশের পর উঠেছে নানা অভিযোগ। গতবারের মতো এবারও নৃত্য শাখায় দেওয়া হয়নি কোনো পুরস্কার। আর এ নিয়েই নৃত্য পরিচালকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জুরিবোর্ড নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র নৃত্য পরিচালক সমিতি। তবে জুরি বোর্ডের সদস্যরা বলেছেন, নম্বরের দিক দিয়ে তারা কেউ পাসই করতে পারেনি।

নৃত্য পরিচালকদের অভিযোগ, গেল দুই বছর প্রজ্ঞাপনে থাকলেও পুরস্কারে ছিল না কোন নৃত্য পরিচালকের নাম। পুরস্কার দেওয়ার মতো নাকি কোন গানের কোরিওগ্রাফি খুঁজে পায়নি জুরি বোর্ডের সদস্যরা। অথচ করোনা পর ২০২২ সাল ছিল বাংলা চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। ২০২২ সালে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে প্রায় অর্ধশত সিনেমা। যার মধ্যে দু’চারটি সিনেমা বাদে সবগুলোতেই ছিল গান।

এ নিয়ে নৃত্যপরিচালক এবং সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক খোকন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এবার নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নৃত্য বিভাগকে জাতীয় পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করা হলো। রীতিমতো এটা বিমাতাসুলভ আচরণ। অথচ বাণিজ্যিক সিনেমার প্রাণ হলো গান আর নাচ। আপনি গান বাছাই করতে পারলেন, কিন্তু নৃত্য কোরিওগ্রাফিকে অস্বীকার করলেন কোন বিবেচনায়? কয়েক বছর ধরেই আমরা দেখছি নৃত্য ক্যাটাগরিকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, তাই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে নৃত্য পরিচালকদের প্রতিনিধি রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জুরিবোর্ড গঠন প্রক্রিয়া নিয়েই আমার প্রশ্ন। তারা কি জাতীয় পুরস্কার ক্যাটাগরি থেকে কোরিওগ্রাফিকে বিদায় দিলো নাকি তারা বোঝেনই না। যদি তাই না হয়, তবে কেনো গুরুত্বপূর্ণ এই জায়গাটিতে প্রতিনিধিত্ব করার মতো কাউকে নির্বাচন করেনি। এটা শিল্পের প্রতি সরাসরি অপমানজনক। একই সঙ্গে শিল্পের অগ্রগতির জন্য সাংঘর্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি।

নৃত্য পরিচালক হাবিব রহমান জানান, ‘২৮টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হবে বলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তার মধ্যে ১৫ নম্বর সিরিয়ালে ছিল নৃত্য পরিচালক বিভাগ। পুরস্কার ঘোষণার দেখা গেল নৃত্য পরিচালক ক্যাটাগরি বাদ দিয়ে ২৭টি বিভাগে পুরস্কার ঘোষণা করা হল। পরে শুনলাম বিচারকদের বিবেচনায় আসেনি নৃত্য পরিচালকের বিষয়টি।’

তিনি আরও বলেন, অনেক নৃত্য পরিচালকের গান জমা পড়েছে। আমার এককভাবে ৬টি ছবির ২০টি গান জমা দেওয়া ছিল। তার মধ্যে শাকিব খান ও পূজা চেরি অভিনীত ‘গলুই’ ছবির ৫টি গান করেছি। এই ৫টি গান পাঁচ ধরনের। এছাড়া আপু বিশ্বাস ও বাপ্পী চৌধুরীর ‘শ্বশুর বাড়ি জিন্দাবাদ’, মাহিয়া মাহি ও আদর আজাদের ‘যাও পাখি বল তারে’, মোশাররফ করিম-পরীমণি-রোশানের ‘মুখোশ’, নিপুণ-ইমন-সালওয়া ‘বীরত্ব’, অনন্ত জলিল-বর্ষার ‘দিন দ্য ডে’। ৬টি বাণিজ্যিক ছবিতে কোন গানই বিবেচনায় আসেনি এটা মেনে নিতো পারি না। যেহেতু নৃত্য পরিচালক ক্যাটাগরি আছে। সে অনুযায়ী আমাদের পুরস্কারটা দিলে কি হতো না? দুইবার পুরস্কারটা বাতিলের সিদ্ধান্ত মানে আমাদের সঙ্গে অন্যায় কর হল।

এ বিষয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক শাহ মো. কিরণ বলেন, ‘সিনেমায় গান খুব বড় বিষয়। সেই গানের পূর্ণাঙ্গ প্রাণ দেন নৃত্য পরিচালকরা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রজ্ঞাপনে নৃত্য পরিচালক ক্যাটাগরি থাকলেও নাম ঘোষণায় কেন তাদের পুরস্কার দেওয়া হল না তা আমার বোধগম্য নয়। তবে এভাবে তাদের অবহেলা করলে দিনশেষে ক্ষতিটা সিনেমার ওপরই পড়বে। নতুন যারা আসতে চায় তারা এই পেশা থেকে মুখ ফিয়ে নেবে। কর্তৃপক্ষকে আমি বলব, এটা যদি পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকে তাহলে তারা যেন সেটা করেন।’ 

২০২২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ১৩ সদস্যের জুরি বোর্ডের একজন সদস্য ছিলেন নায়ক রিয়াজ। বিষয়টি নিয়ে তিনি  বলেন, ‘জুড়ি বোর্ডের সদস্য আমি তো একা ছিলাম না। যারা ছিলেন তারা প্রত্যেকেই সূক্ষ্মভাবে দেখে নম্বর প্রদান করেছেন। একাটা স্ট্যান্ডার্ড নম্বরের উপর ভিত্তি করেও পুরস্কারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। এবার যে গানগুলো জমা পড়েছে সেগুলোর মধ্যে থেকে আমরা স্ট্যান্ডার্ড মানের নৃত্য পরিচালক খুঁজছিলাম। কিন্তু পাইনি।তাই হয়ত এই ক্যাটাগরি বাদ দেওয়া হয়েছে।’

জুড়ি বোর্ডের সদস্য নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘পুরস্কারের জন্য নির্ধারিত নীতিমালা থাকে। ১০ নম্বরের উপর ভিত্তি করে আমরা নম্বর দিয়ে থাকি। বিচারকের নম্বর যোগ করে ৫ নম্বর পেলে আমরা পাশ হিসেবে গণ্য করি। কিন্তু এবার নৃত্য পরিচালক ক্যাটাগরিতে যেগুলো গান জামা পড়েছিলো সেগুলো পাশ মার্কের ধারের কাছেও যেতে পারিনি। ফলে এটা বাদ পড়েছে।’



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭