ইনসাইড পলিটিক্স

জামায়াতের দুই নৌকায় পা


প্রকাশ: 05/11/2023


Thumbnail

জামায়াত দুই নৌকায় পা দিয়েছে। একদিকে তারা বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণা দিচ্ছে, বিএনপি সঙ্গে এক সাথে সমান্তরাল কর্মসূচি ঘোষণা করছে অন্যদিকে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সাথে সুর মিলিয়ে জামায়াতও শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ ডেকেছিল। কিন্তু শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করতে পারেনি। আরামবাগ মোড়ে তারা মহাসমাবেশ করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিএনপি সহিংস তৎপরতা জড়ালেও জামায়াত সহিংস তৎপরতা জড়ায়নি। বরং তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে ঘরে ফিরে গেছে। 

জামায়াতের এই আচরণকে রহস্যময় মনে করছেন বিএনপি নেতারা। ওই ঘটনার পর জামায়াত আবার প্রকাশ্যে বিএনপির ২৯ অক্টোবরের হরতাল এবং ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধও সমর্থন দিয়েছে। এসব অবরোধ বা হরতাল কর্মসূচিতে জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীকে দেশের কোথাও পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। বরং পিকেটিং বা গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগে জড়িত যারা ধরা পড়েছেন তারা সবাই বিএনপির কর্মী। বিএনপির বিভিন্ন স্থানের কর্মীরাই অগ্নিসংযোগ করেছে, বাসে আগুন দিয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস করার জন্য বিক্ষিপ্ত ভাবে চেষ্টা করেছে। অথচ সন্ত্রাসী, ফ্যাসিস্ট সংগঠন জামায়াতে ইসলাম এ ব্যাপারে ছিল সম্পূর্ণ নীরব। জামায়াত তাহলে কেন এই নীরবতা পালন করল। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, জামায়াত একদিকে যেমন বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে কাজ করতে চাইছে অন্যদিকে তারা গোপনে গোপনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপি ওপর যখন ধরপাকড় চলছে সেই সময় জামায়াত নিজেদেরকে গুছিয়ে নিচ্ছে
নির্বাচনের জন্য। তাহলে কি জামায়াত বিএনপিকে ধোঁকা দিচ্ছে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, না, জামায়াত এখন দ্বিমুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। জামায়াত একদিকে বিএনপিকে মদদ দিচ্ছে, তাদেরকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলছে, অন্যদিকে জামায়াত মাঠে না নেমে তাদের যারা সম্ভাব্য প্রার্থী হবে তাদেরকে নির্বাচনে প্রস্তুত হওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে। 

২৮ অক্টোবর বিএনপির এই তাণ্ডবের ফলে এখন পুরো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি বিএনপির ওপর। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, যারা সন্ত্রাসী তৎপরতার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা এ সমস্ত ঘটনা নির্দেশদাতা তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আর এসব থেকে নিরাপদ দূরত্বে আছে জামায়াত। 

কিছুদিন আগেও এই সন্ত্রাসী সংগঠনটির মধ্যে সশস্ত্র গ্রুপগুলো সোচ্চার ছিল এবং তারা বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এখন বিএনপিকে সামনে দিয়ে তারা সংগঠন গোছাতে চেষ্টা করছে। জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন যে এতদিন সরকারের প্রধান দৃষ্টি ছিল জামায়াতের বিরুদ্ধে। এখন সরকার বিএনপির ব্যাপারে বেশি নজর দিচ্ছে। ফলে জামায়াত সংগঠন গোছাতে পারে। এছাড়াও এটি একটি কৌশলগত অবস্থানও বলে অনেকে মনে করছেন যে জামায়াত বিএনপিকে সামনে দিয়ে নিজেরা ভালো সেজে সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ এমন একটি ভাব আন্তর্জাতিক মহলে দিতে চাচ্ছে। যার ফলে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের অনৈতিক সম্পর্ক সেটিও চেয়েও বড় হয়ে উঠছে হচ্ছে যে সরকার কি তাহলে জামায়াতকে প্রশ্রয় দিচ্ছে? অর্থাৎ সরকার সম্বন্ধে একধরনের বিভ্রান্তি এবং নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টির কৌশল হিসেবেই জামায়াত এইরকম দ্বিমুখী আচরন করছে এবং দুই নৌকায় পা দিচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে বোঝা যাবে জামায়াতের আসলে রাজনৈতিক কৌশল কি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭