ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাতছানি: আবারও অর্থনৈতিক মন্দার দিকে এগোচ্ছে বিশ্ব?


প্রকাশ: 06/11/2023


Thumbnail

এই মুহূর্তে বিশ্বে যে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ অস্বাভাবিক কিছু নয়। রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের পর এখন ইসরায়েল ও গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উত্তপ্ত গোটা বিশ্ব। এই যুদ্ধেকে ঘিরে ইতোমধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো। ইতোমধ্যে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি অনেক নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলো। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের চরম পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কাকে। এর মধ্যে যদি আরেকটি বড় যুদ্ধের হাতছানি দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এর থেকেও বিরাট হুমকির মুখে পড়বে অর্থনীতি।

অতীতে আমরা দেখেছি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কৃষ্ণসাগর দিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে খাদ্যশস্য রপ্তানিতে বাধা পড়ে। এছাড়া অন্যান্য দেশ খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে রপ্তানি সীমিত করতে বাধ্য হয়। বিশ্বের খাদ্যদ্রব্যের বাজারে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। বিশ্বজুড়ে হুহু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্যের উপরও বিরুপ প্রভাব পড়ে, যা এখনো চলমান। বিশ্বের শিল্পোৎপাদনকারী দেশসমূহ তাদের উৎপাদন সীমিত করতে বাধ্য হয়। এতে বিশ্বের শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ শিল্প ও ব্যবসা খাতের প্রতিটি ধাপে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ইতোমধ্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান অস্থিরতার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলের বাজারে। যুদ্ধের কারণে তেল সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কায় বিশ্ববাজারে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশও এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। যদি আরব দেশগুলো সরাসরি এ যুদ্ধের সাথে জড়িয়ে পরে তাহলে তেল উৎপাদন ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হবে এবং বিশ্বব্যাপী তেলের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিবে। সম্প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯৩ মার্কিন ডলার উঠেছে। এর দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বে চলমান অর্থনৈতিক সংকটে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ, শিল্পোৎপাদন, রপ্তানি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির পরিস্থিতি যাচাই করে দেখা গেছে দেশগুলো ধীরগতির অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে যেয়ে কয়েকটি দেশ আশঙ্কাজন্ক হারে তাদের রিজার্ভ হারিয়েছে।

গতবছর খাদ্য, জ্বালানি, জরুরি ওষুধসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে শ্রীলঙ্কা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে। পাকিস্তানও একই রকমের অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে অন্যান্য দেশ থেকে লোন নিয়ে চলমান পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।

আইএমএফ জানিয়েছে, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। আগামী বছরও এ নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। এ অব্যাহত থাকলে এর প্রভাব সরাসরি পড়বে ছোট অর্থনীতির দেশগুলোতে। 

বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে তার প্রভাবের বাইরে নেই বাংলাদেশও। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আর মহামারি পরবর্তী সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটার ফল হিসেবে চলতি বছরের প্রায় পুরোটাই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভুগতে হয়েছে। বাংলাদেশের একটি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন দেশ তবুও বর্তমানে বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্যের বাজার অস্থিতিশীল। একদিকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে।

অন্যদিকে ডলার সংকট, ডলারের দাম বৃদ্ধি, বৈদেশিক ঋণ ইত্যাদির ফলে নানামুখী চাপে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। এ অস্থিরতা কতদিন চলমান থাকবে তাও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছেনা। অর্থনৈতিক সংকট কেটে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। বরং তা আরও গভীর ও দীর্ঘ হচ্ছে। অর্থনীতির অনেকগুলো সূচকই আরও দুর্বল হয়েছে। খাদ্য সংকটের আশঙ্কা বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়েই রয়েছে। এর মধ্যে যদি বিশ্ব আরেকটি বড় যুদ্ধের দিকে আগায় তাহলে সেটি হবে মরার উপর খাঁড়ার ঘা। 

ইতোমধ্যে বিশ্বনেতাদের প্রতি শান্তি ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্য যুদ্ধ বন্ধ ও দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিভিন্ন সময় বিশ্ব মঞ্চে যুদ্ধ, সংঘাত ও অস্ত্র প্রতিযোগিতার অবসান ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতের সংকট মোকাবেলায় আরও ভালো প্রস্তুতি এবং পারস্পরিক সম্মান পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।

কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন এখন পরিস্থিতি কারো নিয়ন্ত্রনে নেই। যেকোন সময় যুদ্ধ বন্ধও হতে পারে আবার নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেত পারে। তবে যদি আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় তাহলে তার সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ছোট এবং মধ্যম অর্থনীতির দেশগুলোর উপর।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭