ইনসাইড পলিটিক্স

সংলাপ নয়, নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ নিতে পারে পাঁচ পদক্ষেপ


প্রকাশ: 06/11/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপে যাবে না। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, সেটি বিএনপির নিজস্ব বিষয়। এ ব্যাপারে কোন আন্তর্জাতিক চাপের কাছে আওয়ামী লীগ নতি স্বীকার করবে না। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক মহলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় এবং বিএনপি যে দাবি করছে সেই দাবি যে ভুল তা প্রমাণের জন্য নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এ রকম অন্তত পাঁচটি পদক্ষেপের কথা শোনা যাচ্ছে। 

আগামী ৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছেন। এই বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। এই নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি না আসে তাহলে নির্বাচনকে উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক করার জন্য আওয়ামী লীগ বেশ কিছু স্বপ্রণোদিত পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ভাবছে। তার মধ্যে রয়েছে-

১. সংসদে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে মন্ত্রিসভা: যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন বর্তমানে যে মন্ত্রিসভা আছে, সেটি নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা বা নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে কাজ করবে। মন্ত্রিসভা ছোট করলে কাজের স্থবিরতা তৈরি হয়। কিন্তু বিভিন্ন সূত্র বলছে যে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি এবং সকলের কাছে আস্থা অর্জনের জন্য আওয়ামী লীগ স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা পরিবর্তন করতে পারে। বিশেষ করে সংসদে যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, সেই রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্যদেরকে নিয়ে একটি মন্ত্রিসভা গঠন করতে পারে, যেটি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা বলা যেতে পারে। ২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ যদিও বিএনপি প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। বিএনপি প্রস্তাব গ্রহণ না করা সত্ত্বেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ২০১৩ সালে একটি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল। এবারও আওয়ামী লীগ সভাপতি সংসদের ভিতরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি মন্ত্রিসভা গঠনের ব্যাপারে আগেই ইঙ্গিত করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে সরকার যে আন্তরিক তা প্রমাণের জন্য এই ধরনের মন্ত্রিসভা গঠিত হতে পারে চমক হিসাবে।

২. প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরপেক্ষ রাখা: নির্বাচনের সময় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন এবং প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিতে পারেন। খুব শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানেও তিনি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দিবেন। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এই ধরনের বার্তা ইতোমধ্যেই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। 

৩. নির্বাচনে কোন কারচুপি নয়: আওয়ামী লীগ সভাপতি বারবার বলছেন এবার নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন একটি আকর্ষণীয় এবং সুষ্ঠু এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হিসাবে উপস্থাপন করতে চায়। আন্তর্জাতিক বিশ্বকে প্রমাণ করতে চায় যে বিএনপি আসলে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন, তারা গণতান্ত্রিক নয়। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে ভুল করেছে। আর নির্বাচন বিএনপিকে ছাড়াও অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে যে নির্বাচনের জন্য কোন রকম কারচুপি না হয় সেটা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৪. প্রচুর স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে: এবার নির্বাচনে কোনো আসনে যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত না হয় সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি অংশগ্রহণ না করে তাহলে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

৫. আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা: সরকারের আগামী নির্বাচনের প্রধান লক্ষ্য হল আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন। আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে সরকার বিদেশি পর্যবেক্ষকদের যেমন আমন্ত্রণ জানাবে ঠিক একই ভাবে আন্তর্জাতিক বিশ্বকেও নির্বাচনের সময় আগে উপযুক্ত হয়ে ব্রিফিং করা হবে, যেন তারা দেখেন যে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও সম্ভব। কাজেই কোন সংলাপ নয়, স্বপ্রণোদিত কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে চায় সরকার।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭