ইনসাইড বাংলাদেশ

সাবের চৌধুরী-পিটার হাস বৈঠক: নতুন ষড়যন্ত্রের গন্ধ?


প্রকাশ: 07/11/2023


Thumbnail

হঠাৎ করেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস পরিবাগে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গতকাল দুপুরে দেড় ঘণ্টার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকের ব্যাপারে মার্কিন দূতাবাস আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেয়নি। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস অন্য বৈঠকগুলোর পর যেভাবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন, সে রকম কোন কথাবার্তা বলেননি। সাবের হোসেন চৌধুরী অবশ্য বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বিস্তৃত সম্পর্ক রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তার অন্যতম। তবে এই আলোচনার বিস্তারিত কিছু তিনি জানাননি।

যখন বিএনপি রাজপথে লাগাতার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে এবং সরকার যখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নাকচ করে দিয়ে একটি নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে, ঠিক সেই সময় সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন শুরু হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে এ নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। পিটার হাসের সঙ্গে সাবের হোসেন চৌধুরীর বৈঠক কোন ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত কি না, তা নিয়েও বিভিন্ন মহল বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। পিটার ডি হাস আগে আওয়ামী লীগের নেতাদের দাওয়াত করতেন। তার বাসভবনে অথবা অ্যামেরিকান ক্লাবে। সেখানে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও যেতেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিজেও একবার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গিয়েছিলেন এবং সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে তার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই বৈঠকে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক করার ব্যাপারে মার্কিন আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন।

এ রকম বাস্তবতায় যখন ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের জন্য বিএনপি তারিখ ঘোষণা করে, তখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছুটে গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রীর কাছে এবং সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার কী কথা হয়েছে এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেন। এই বৈঠকের পরপরই পিটার ডি হাস প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যানের বাসভবনে নৈশভোজে আমন্ত্রিত হন এবং সেখানে আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, যিনি ভূমি মন্ত্রণালয়য়ের দায়িত্বে আছেন তিনি উপস্থিত ছিলেন। যদিও ভূমিমন্ত্রী পরবর্তীতে দাবি করেছেন যে, কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়নি। তবে যে নৈশভোজে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন, সেখানে একমাত্র আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রীর উপস্থিতি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং আওয়ামী লীগে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।

এখন যখন পিটার ডি হাস প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগ সেই সংলাপের প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন এবং তাদের সাথে সংলাপের কোনো প্রশ্নই আসে না। সংলাপের সময় যখন শেষ হয়ে গেছে ঠিক তখন পিটার ডি হাস দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল মনে করেন। একটি হচ্ছে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেটিও এক ঘণ্টার ওপরে ছিল। আর সর্বশেষ গতকাল সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করলেন। এই দুটি বৈঠক কি ইঙ্গিত বহন করে? পিটার ডি হাস কেন এরকম বৈঠক করলেন এ নিয়ে নানামুখী কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু আওয়ামী লীগ সংলাপের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভয় ভীতি নিষেধাজ্ঞার হুমকি ইত্যাদিকে উপেক্ষা করে নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, সেকারণে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে এখন আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষনেতাদেরই অনাগ্রহ রয়েছে। আর এই অনাগ্রহের কারণেই হয়তো পিটার ডি হাস সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত সাবের হোসেন চৌধুরীকে বেছে নিয়েছেন। তার কাছে তিনি হয়ত কিছু বার্তা দিয়েছেন। যে বার্তাটি দলের নীতি নির্ধারকদের কাছে যেন দেওয়া হয়। 

আবার এ রকমও অনেকে মনে করছেন যে সাবের হোসেন চৌধুরীর ভূমিকা এক-এগারোর সময় প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন, তাদের অন্যতম ছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। এই কারণেই এক-এগারোর পর তিনি কক্ষচ্যুত হয়ে যান। আওয়ামী লীগে ২০০১’র পর যিনি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন, যিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব নিয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগের মত একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন, সেই সাবের হোসেন চৌধুরী এক-এগারোর পর অপাংক্তেয় হয়ে পড়েন, রাজনীতিতে কোণঠাসা অবস্থায় তিনি নীরবে নিভৃতে তার কাজ করেছেন। অতি সম্প্রতি তাকে জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত করা হয়েছে। কিন্তু এক-এগারোর কারণে অনেকটাই পরিত্যক্ত সাবের হোসেন চৌধুরী সুশীল সমাজের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য এবং আস্থাভাজন ব্যক্তি। আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা বিনয়ী এবং ভদ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম একজন। 

কিন্তু এক-এগারোতে তিনি শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন বলে আওয়ামী লীগের অনেকে মনে করে। সে কারণে তিনি আওয়ামী লীগের মধ্যে বিশ্বস্ত হিসাবে এখনও চিহ্নিত নন। আর সেকারণেই তার সাথে পিটার হাসের বৈঠক রাজনীতিতে নতুন করে কোনও ষড়যন্ত্রের হাওয়া বইছে কি না সেরকম একটি শঙ্কা তৈরি করেছে। এখন দেখার বিষয় পিটার হাসের বৈঠকের ফলাফল বা প্রভাব রাজনীতিতে কিভাবে পরে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭