ইনসাইড পলিটিক্স

কার পক্ষে মাঠে নামলেন মেজর হাফিজ?


প্রকাশ: 08/11/2023


Thumbnail

অবশেষে মুখ খুললেন বিএনপির জনপ্রিয় নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। এক সময় মাঠ কাঁপানো ফুটবলার ছিলেন। ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। নানা পরিচয়ে পরিচিত এই তারকা রাজনীতিবিদ অনেক দিন ধরেই এক ধরনের নীরবতা পালন করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি আজ মুখ খুললেন। মুখ খুলে তিনি অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি নতুন কোন দল করছেন না। নতুন দলগঠনের তথ্য সঠিক নয় বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন।

আজ সকালে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে দল গঠনের কথা অস্বীকার করলেও বিএনপির সঙ্গে তার যে বিরোধ এই বিষয়গুলো নিয়ে তিনি কোন কিছুই গোপন রাখেননি। বরং বিএনপি যখন এক দফার দাবিতে টানা অবরোধ করছে, তখন তার বক্তব্যগুলো রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বিএনপির রাজনীতিতে। মেজর হাফিজের সংবাদ সম্মেলনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এসেছে:

প্রথমত, তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে নাকচ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ বিএনপি যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এখন আন্দোলন করছেন, সেই দাবি যে সঠিক নয়, তা মেজর হাফিজের বক্তব্য থেকে উচ্চারিত হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, মেজর হাফিজ বলেছেন যে, বিএনপিতে তিনি উপেক্ষিত। জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া তাকে যে সম্মান দেখাতেন, সেই সম্মান তিনি এখন পাচ্ছেন না। স্পষ্টতই তারেক জিয়ার সঙ্গে তার যে বিরোধ সেটি তিনি উপস্থাপন করেছেন।

তৃতীয় প্রসঙ্গ যেটি গুরুত্বপূর্ণ তা হল, ২০১৪’র নির্বাচনে না যাওয়া বিএনপির জন্য একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।

এই তিনটি বক্তব্যের ফলে বিএনপির বর্তমান রাজনীতি এবং রাজনৈতিক কৌশল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তিনি দল গঠন করবেন না। তিনি বিএনপিতে থাকবেন এবং বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি অনেকের কন্ঠস্বর হিসেবেই আজকের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখলেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

মেজর হাফিজ বিএনপিতে অপাংক্তেয় নয়। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যারা ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং এই ঘনিষ্ঠতার সূত্র থেকে যারা বিএনপির রাজনীতিতে এসেছেন, তাদের শেষ স্মৃতি মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যারা রাজনীতিতে ছিলেন, তাদের কেউই এখন আর বিএনপির রাজনীতিতে নেই, একমাত্র মেজর হাফিজ ছাড়া।

অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন বিএনপির প্রথম মহাসচিব। জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের একজন। তিনি বিএনপির রাজনীতিতে থাকতে পারেননি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর তাকে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপমানজনকভাবে তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল।

কর্ণেল (অবঃ) অলি আহমেদের বিদায় হয়েছিল আরও আগে। কর্ণেল (অবঃ) অলি আহমেদ ছিলেন জিয়াউর রহমানের এডিসি। শুধু তাই নয়, জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত বিশ্বস্ত অনুচর হিসাবে তিনি বিবেচিত হতেন।

জিয়াউর রহমানের আপত্ত স্নেহে বেড়ে উঠেছিলেন প্রায়ত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। সেই নাজমুল হুদাও মৃত্যুর আগে বিএনপির রাজনীতি করে যেতে পারেননি। এ রকম অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যায়। আর এইসমস্ত উদাহরণ থেকে স্পষ্ট যে তারেক জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের বিশেষ করে যারা জিয়াউর রহমানের সাথে ঘনিষ্ঠ ছিল, তাদেরকে অপমান করছেন, লাঞ্ছিত করছেন এবং প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছেন না।

এ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে, যাদের হাতে বিএনপি গড়ে উঠেছিল, তাদের যে ক্ষোভ এবং হতাশা, সেই হতাশার প্রকাশ ঘটেছে বিএনপির মধ্যে। মেজর হাফিজের এই বক্তব্য তার একার নয়। বিএনপির অধিকাংশ নেতাই মুখ ফুটে বলতে পারেন না। কিন্তু বিশ্বাস করেন, ২০১৪’র নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপির জন্য মারাত্মক ভুল। বিএনপির অধিকাংশ নেতাই এখনকার আন্দোলনকে সমর্থন করেন না। তারেকের চাপে এই আন্দোলনের ব্যাপারে তাদের সায় দিতে হয়। কিন্তু মেজর হাফিজ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সে কারণে তারেকের এই হঠকারী রাজনীতি এবং অর্বাচীন সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নিতে পারেননি। এই কারণে তিনি মুখ খুলেছেন। এখন দেখার বিষয় যে, মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজের এই বক্তব্য বিএনপিতে কি মেরুকরণ সৃষ্টি করে।

তিনিই বিএনপির মূলধারা। এটি যদি তিনি প্রমাণ করতে পারেন তাহলে তার নেতৃত্বেই বিএনপি হয়ত বিকশিত হবে। তারেক জিয়ার অপরিণামদর্শী তৎপরতা, তার অর্ধশিক্ষিত চিন্তাভাবনা এবং উদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ যে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কী হাল করেছে, মেজর হাফিজ তার একটি বিজ্ঞাপন মাত্র।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭