প্রকাশ: 08/11/2023
বিএনপির সমাবেশকে
কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলাসহ বাসে আগুন দেওয়ার কথা জিজ্ঞাসাবাদে দলটির
কেন্দ্রীয় নেতারা স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)
প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
বুধবার (৮ নভেম্বর)
দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই দাবি করেন
তিনি।
তিনি বলেন,
বিচারপতির বাসভবনে হামলা, বিআরটিসি বাসে আগুনসহ ২৮ অক্টোবরের পর থেকে চলমান অবরোধে
চালানো নাশকতার দায় স্বীকার করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এমনকি এ ধরনের নাশকতা
করা ঠিক হয়নি বলে তারা মন্তব্য করেছেন।
হারুন অর রশীদ
বলেন, প্রথমত বিএনপির যেসব কেন্দ্রীয় নেতা আমাদের কাছে আছেন তারা প্রথমে বলেছিলেন
যে, নাশকতা আমাদের দলের লোকজন করে নাই। মনে হয় অন্য কেউ করেছে। এটা নিয়ে তারা সন্দিহান
ছিলো। তখন আমাদের কাছে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ, স্মার্ট টিমের করা ভিডিও তাদেরকে দেখানো
হয়েছে। আমরা বলেছি, আপনারা স্টেজে ছিলেন, সমাবেশের নেতৃত্বে ছিলেন।
এছাড়া ভিডিওতে
তারা দেখেছেন, সমাবেশের দিন মঞ্চে থাকা কেন্দ্রীয় নেতারা কে কি রোল প্লে করেছেন। সুলতান
সালাউদ্দিন কোথায় লাঠি নিয়ে দৌড়াচ্ছেন, রবিউল ইসলাম নয়ন কোথায় আগুন লাগাচ্ছেন,
ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাঈদ মিন্টুর বাসা থেকে গানপাউডার আমরা পেয়েছি।
এসব কিছু দেখার পরে তারাও (কেন্দ্রীয় নেতা) দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন এটা ঠিক
হয় নাই।
মূল পরিকল্পনাকারী
কারা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা হয়তো মনে করছেন বাংলাদেশের কয়েকটা বিচ্ছিন্ন
স্থানে আগুন লাগালেই ভয় পেয়ে যাবে। অথবা পুলিশ ডিমোরালাইজড হবে, এটা ঠিক না। পুলিশ
বাহিনীর কাজ হচ্ছে জনগণের জাল মাল নিরাপত্তা দেওয়া। সাধারণ মানুষের চলাচলে যেনো কোনো
বাধা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা। আমাদের পুলিশের প্রত্যেকটি সদস্য, ডিবি
পুলিশ, থানা পুলিশ, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে। ছদ্মবেশে ঘোরাফেরা
করছে। বাসে যাত্রীর ছদ্মবেশে পুলিশ ঘুরছে। যদি কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে চায় তাদের কোনো
ছাড় দেওয়া হবে না। এমন কি এইসব ঘটনা যারা জড়িত তাদেরকে ধরিয়ে দিলে পুরস্কার দেওয়া
হবে। যা কয়েকদিন আগে আমাদের ডিএমপি কমিশনার ঘোষণা করেছেন। নাশকতাকারীকে ধরিয়ে দিলেই
২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
তিনি বলেন,
অনেক সময় দেখবেন, একটা লোকের একটি বাস আছে। এটা দিয়ে তার সংসার চলে। এই বাসটিতে যখন
আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, তখন তার জীবন শেষ হয়ে যায়। পরিবার নিয়ে রাস্তায়
নেমে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। অতএব আমি মনে করি, সবাই মিলে সাধারণ মানুষের জানমাল
রক্ষায় কাজ করতে হবে। সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করতে হবে। কেউ যেন কোনোভাবে হামলা করতে
না পারে। সেদিকে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে তাদের নাম
আমরা পেয়েছি। তাদের শিগগির আমরা গ্রেফতার করতে পারবো।
এদিকে ২৮ অক্টোবর
বিএনপির মহাসমাবেশের দিন, হরতাল ও অবরোধে গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত আরও পাঁচজনকে
গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিবির লালবাগ ও মতিঝিল বিভাগ।
এ বিষয়ে হারুন
অর রশীদ বলেন, বিএনপির সমাবেশে অংশগ্রহণ করে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের ভূমিকা পালনকারী
বেশ কয়েকজনকে আমরা ধরেছি। অংশগ্রহণকারী অনেকের নাম পেয়েছি। তাদের মধ্যে যুবদলের কেন্দ্রীয়
কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সাইদ হাসান মিন্টুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাসা থেকে ৮
কেজি গান পাউডার উদ্ধার করা হয়। মিন্টু স্বীকার করেছেন, বাশার এবং মাসুদকে দিয়ে এগুলো
তিনি বানান। রবিউল ইসলাম নয়ন ও সুলতান সালাউদ্দিন যে সহায়তা করেছেন তিনি সেটিও স্বীকার
করেছেন।
ঢাকা মহানগর
গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ ডিভিশন ও মতিঝিল ডিভিশন অভিযান চালিয়ে অংশগ্রহণকারীকে পাঁচজনকে
গ্রেফতার করে। তারা হলেন- ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা হাসান হাওলাদার। তিনি প্রথমে প্রধান
বিচারপতির বাসভবনের সামনে গুলতি নিয়ে পুলিশের ওপর মারবেল নিক্ষেপ করে ও বিআরটিসি বাসে
আগুন দেন। কবি নজরুল ইসলাম কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আবুল হোসেন জুয়েল নাইটিংগেল মোড়ে
পুলিশের ওপরে হামলা করে, এর ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। পুলিশ মার্ডারের মামলায়
যে দুজন ১৬৪ দ্বারা জবানবন্দি দিয়েছেন, তারা বলেছেন ছাত্রদলের মুগদা থানার সাধারণ
সম্পাদক রানা মিয়া পুলিশ হত্যায় অংশগ্রহণ করেছেন, তাকেও আমরা গ্রেফতার করেছি।
তিনি আরও বলেন,
কামরুজ্জামান টুকু নিজে স্বীকার করেছেন বাস পোড়ানোর কথা। হৃদয় স্বীকার করেছেন তিনি
বাংলামোটর, মৌচাক ফ্লাইওভার, কাকড়াইল মোড়ে শুধু আগুন লাগিয়েছেন। পেট্রোল বোমা ও ককটেল
সরবরাহ করেছেন রবিউল ইসলাম নয়ন। সবার নেতা হচ্ছেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। তার নেতৃত্বেই
গত ২৮ তারিখ থেকে চলমান সময় পর্যন্ত বাসে আগুন, ককটেল নিক্ষেপ, পেট্রোল বোমা বা পেট্রোল
লাগিয়ে আগুন জ্বালানো হয়েছে। গত ২৮ তারিখ যারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ককটেল বিস্ফোরণ
ঘটায়, বিআরটিসি বাসে আগুন, পুলিশ হাসপাতালে আগুন, অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করে, পুলিশ
মার্ডার মামলার আসামিদের অনেকের নাম সিসি ক্যামেরার ফুটেজের মাধ্যমে আমাদের কাছে এসেছে।
পাশাপাশি গ্রেফতাররা আরও অনেকের নাম বলেছেন। তাদের ছবি পেয়েছি, তাদের গ্রেফতারে অভিযান
অব্যাহত আছে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭