এডিটর’স মাইন্ড

নির্বাচন নিয়ে যা যা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র


প্রকাশ: 08/11/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কমতি হয়নি। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও নিবিড়ভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং নির্বাচনের পর সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কৌশলগত কারণে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এখন আর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। বিএনপিরও অধিকাংশ সিনিয়র নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার ফলে তাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ সংকুচিত হয়ে গেছে। এরকম পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি নির্বাচন থেকে তাদের অবস্থান সরিয়ে এনেছে কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি এখন হাত গুটিয়ে নিচ্ছে? এরকম কিছু প্রশ্ন সামনে এসেছে।

তবে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কোন পরিবর্তন হয়নি। আগামী ১০ নভেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারত সফরে আসছেন। এখানে আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং এই অঞ্চলে শান্তি নিরাপত্তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। সেখানেও বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয় নিয়ে কথা বলবে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কি কি করবে? এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন ধারণা দিতে পারছেন না কেউই৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিকারের মনোভাব নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। 

আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের ব্যাপারে নমনীয় হয়েছে। আবার বিএনপির অনেক নেতা মনে করছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগের অবস্থানে আছে। তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কি কি করতে পারে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েকটি ধাপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নিতে পারে৷ 

১. ১০ নভেম্বর ব্লিঙ্কেন-জয়শঙ্কর বৈঠক: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক নানা কারণে বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে তাৎপর্যপূর্ণ। এই বৈঠকের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের মনোভাব স্পষ্ট হতে পারে। এটি হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পদক্ষেপ। যা আগামী ১০ নভেম্বর সংঘটিত হতে যাচ্ছে। 

২. সংলাপের জন্য তাগিদ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে প্রধান দুই রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে সংলাপের জন্য তাগিদ দিয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এই বক্তব্য গণমাধ্যমে দিয়েছেন যে, শর্তহীন সংলাপ প্রয়োজন। এরকম পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় পদক্ষেপ হবে নির্বাচনের তফসিলের আগে যেন দুই পক্ষ সংলাপে আসে। সেজন্য চেষ্টা করা। কোন কোন ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ করা। তবে মার্কিন এই পদক্ষেপ কতটা সফল হবে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রস্তুত রয়েছে। 

৩. বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। আর এই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাতে পারে। এমনকি চাপ দিতে পারে। তার কিছু লক্ষণ এখন আস্তে আস্তে স্পষ্ট হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে সরকার নির্বাচনে কিভাবে কারচুপি করছে বা কতটুকু কারচুপি করছে, কতটুকু প্রভাব বিস্তার করছে ইত্যাদি জানা বোঝা সহজ হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচন কারচুপির কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ জরুরি। এজন্য তারা বিএনপির ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে। 

৪. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর অস্বীকৃতি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি শেষ পর্যন্ত একতরফা নির্বাচন হয়, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে নির্বাচনের তফসিলকে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। এই তফসিল গ্রহণযোগ্য নয় এমন একটি বার্তা দিতে পারে। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একটা দেশের নির্বাচন নিয়ে এ ধরনের অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ নাও করতে পারে। তবে কম্বোডিয়ায় এ ধরনের অবস্থানই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করেছিল। এই ধরনের পদক্ষেপ যদি তারা নেয় তাহলে সেটি হবে একটি বড় ধরনের ঘটনা। 

৫. বিএনপি ছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্য যেটি করতে পারে যে, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সস্তেও তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে, নির্বাচন কতটুকু অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে সেটি দেখবে এবং তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেবে যে এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেওয়া যায় কি যায় না।

৬. নির্বাচন পরবর্তী পদক্ষেপ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশকে কোন চাপে ফেলতে চায় বা বাংলাদেশকে বড় ধরনের সংকটে ফেলতে চায় তাহলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা সহ অন্যান্য নিষেধাজ্ঞাগুলো দিবে নির্বাচনের ওপর, নির্ভর করবে বাংলাদেশে কিভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা দেখার ওপর। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বাংলাদেশের ওপর বড় ধরনের কোনো চাপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেবে না বলেই অনেকে মনে করছেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব এখন পর্যন্ত কারো কাছেই স্পষ্ট নয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭