ইনসাইড পলিটিক্স

নব্য মোশতাকদের নিয়ে সতর্ক আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 08/11/2023


Thumbnail

২৮ অক্টোবরের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মনোভাব অত্যন্ত চাঙ্গা। তারা এখন মোটামুটি নিশ্চিত বিএনপি আগামী নির্বাচন প্রতিহত করতে পারবে না, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবেই। নির্বাচনের ব্যাপারে যে আন্তর্জাতিক চাপ তা দুর্বল হয়ে যাবে বিএনপির সন্ত্রাস এবং সহিংসতার জন্য। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা রয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতা এবং ব্যক্তির বিশ্বাসঘাতকতার কারণে আওয়ামী লীগ সঙ্কটে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু ব্যক্তির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন, তখন এক-এগারো সময় যারা সক্রিয় ছিলেন, এরকম ব্যক্তিরা আবার তৎপরতা শুরু করেছে বলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহল মনে করছেন। এদেরকে আওয়ামী লীগের ভাষায় বলা হচ্ছে নব্য মোশতাক। যারা ষড়যন্ত্রকারী। এই নব মোশতাকদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ এখন অত্যন্ত সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আওয়ামী লীগ মনে করে যে নির্বাচন বানচাল করে একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য একটি মহল সক্রিয় রয়েছে। সেই মহলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত থাকতে পারে। 

সাম্প্রতিক সময়ে একজন মন্ত্রীর সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠক নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে তুলকালাম হয়েছিল। ওই মন্ত্রী এমন এক দাওয়াতে গিয়েছিলেন যে দাওয়াতে বাকি সব অতিথি ছিল বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা। যদিও ঐ দাওয়াত নিয়ে নিয়ে ওই মন্ত্রী এখন পর্যন্ত অনুতাপ প্রকাশ করেননি। বরং তিনি বলেছেন যে সেখানে তিনি কোন রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেননি। রাজনৈতিক বক্তব্য রাখুন, না রাখুন ওই দাওয়াতে যাওয়াটা তার সঠিক হয়নি এমনটাই মনে করেন আওয়ামী লীগের অনেকে। একইভাবে সাম্প্রতিক সময় এক-এগারোর সংস্কারপন্থী নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠক নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করেন যে, সঙ্কটের সময় আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতারা বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং তার মাশুল দিতে হয় দলকে। 

আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ কখনও বাইরের শক্তির কাছে পরাজিত হয়নি। আওয়ামী লীগ সব সময় হয়ে গেছে নিজেদের দলের বিশ্বাসঘাতকদের কাছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে খুনি মোশতাকের বিশ্বাসঘাতকতা না হলে জিয়াউর রহমানের ষড়যন্ত্র সফল হতো না এবং এই বিয়োগান্ত ঘটনার পর একটি অবৈধ এক নায়ক সরকার ক্ষমতায় আসতে পারত না। আবার ১৯৯১ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঘরের শত্রুরাই বিভীষণের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তাদের কারণেই আওয়ামী লীগের বিপর্যয় ঘটেছে। ঠিক তেমনি ২০০৭ সালের এক-এগারোর সময় আওয়ামী লীগের নব্য মোশতাকরাই শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছে এবং সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করে কর্মীদেরকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে। এখন আবার নির্বাচন বানচালের নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হবে না যদি আওয়ামী লীগের কোনো অংশ ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে হাত না মেলায়। 

অবশ্য আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আগের সেই পরিস্থিতি এখন নেই। শেখ হাসিনা এখন অনেক সতর্ক এবং আওয়ামী লীগের কোনো একক নেতা বা গোষ্ঠীবদ্ধ নেতা যদি ষড়যন্ত্র করেন তারা শুধু ব্যর্থই হবেন। কারণ শেখ হাসিনার প্রতি এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিরঙ্কুশ সমর্থন রয়েছে। তবে শেখ হাসিনা যতই জনপ্রিয় হোক না কেন, ষড়যন্ত্রকারীদেরকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হালকা ভাবে দেখছে না । বরং তারা মনে করছে যে, এরা সক্রিয় এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এদেরকে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। তা না হলে আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের সংকট আসতে পারে, গণতন্ত্রের জন্য বিপর্যয় আনতে পারে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭