ইনসাইড পলিটিক্স

গার্মেন্টসকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ষড়যন্ত্র


প্রকাশ: 08/11/2023


Thumbnail

গতকাল জাতীয় মজুরি বোর্ড গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করেছে। সর্বনিম্ন বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। গার্মেন্টস মালিকরা বলছেন, এই বেতন দেওয়াই তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু গার্মেন্টস শ্রমিকদের একাংশ এই মজুরি মানেননি। এ নিয়ে তারা আজ রাস্তায় আবার নতুন করে আন্দোলন শুরু করার চেষ্টা করেছেন। প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশের কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। আর এর মধ্যে দিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদেরকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের একটি ষড়যন্ত্র উন্মোচিত হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

গত কিছুদিন ধরেই গার্মেন্টসে হঠাৎ করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এই উত্তেজনার সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনের একটা যোগসাজশ রয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদেরকে তারা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন বলেও বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেছে। যে সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাম রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির সঙ্গে মিলে আন্দোলন করছে তাদের অনেকেই গার্মেন্টস শ্রমিকদের উস্কানির সঙ্গে জড়িত এবং এরাই নতুন মজুরি বোর্ডের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। 

বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে, যারা গার্মেন্টসের প্রকৃত শ্রমিক, তারা নতুন মজুরিতে খুশি এবং এ নিয়ে তারা কাজ করতে চায়। কিন্তু যারা আসলে প্রকৃত শ্রমিক নন, যারা বিভিন্ন ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত থেকে গার্মেন্টস শিল্পকে অশান্ত করতে চান, তারাই নতুন মজুরির বিরুদ্ধে গার্মেন্টস শ্রমিকদের উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এমনি বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প চ্যালেঞ্জ এবং সংকটের মুখে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গার্মেন্টসের ব্যাপারে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করে কিনা এ নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক ও উত্তেজনা চলছে। বিশ্ব মন্দার কারণে প্রতিযোগিতামূলক দামে গার্মেন্টস রপ্তানি করতে হচ্ছে। আর এর ফলে পোশাক খাতের আয় কমে যাচ্ছে। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের কারণে গার্মেন্টসের কাঁচামালের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কাঁচামাল আমদানি করে একটি পূর্ণাঙ্গ পোশাক তৈরি করা এবং তা বাজারে দেওয়া বহুল হয়ে পড়েছে। এর ফলে লভ্যাংশ থাকছে খুবই কম। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্যই এমনটা করছেন গার্মেন্টস মালিকরা। এই পরিস্থিতিতে যদি শ্রমিকরা অসন্তোষ তৈরি করে এবং অশান্তি সৃষ্টি করে তাহলে বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্প একটা সংকটের মধ্যে পড়বে৷ এই সংকটটি তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

ইতোমধ্যে কিছু কিছু হঠকারী এবং দেশবিরোধী শক্তি বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকরা ন্যায্য মূল্য পায় না, তারা অমানবিক ইত্যাদি নানা রকম কল্পকাহিনী গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে ক্রেতাদের কাছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তথাকথিত কিছু শ্রমিক নামধারী নেতারা বাংলাদেশের গার্মেন্টসের অব্যবস্থাপনা নিয়ে নালিশ করছে। এর ফলে বিভিন্ন বড় বড় ক্রেতারা বাংলাদেশের ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক জটিলতায় গার্মেন্টস শিল্পকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পোশাক যেন না নেওয়া হয়- এ নিয়েও বিএনপি ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন জায়গায় তদবির করছে। এই সমস্ত তৎপরতা দেশদ্রোহিতার শামিল। কারণ একটি দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে বা ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য দেশের সবচেয়ে প্রধান রপ্তানি উৎসকে ঝুঁকিতে ফেলা কোনোভাবেই দায়িত্বশীলতার কাজ নয়। কিন্তু এই দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করছেন কিছু কিছু সুনির্দিষ্ট রাজনীতিবিদরা। গার্মেন্টস ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকার শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এই খাতে নিয়োজিত কোটি মানুষ বিপদে পড়বেন। এই বোধটি নেই ক্ষমতার লোভে অন্ধ কিছু সুযোগসন্ধানী রাজনীতিবিদের। আর এ কারণেই গার্মেন্টস নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের জন্য একটি অশনি সঙ্কেত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭