ইনসাইড গ্রাউন্ড

শেষ বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছেন সাকিব, বিদায় ‘লিজেন্ড’


প্রকাশ: 09/11/2023


Thumbnail

সাকিব আল হাসান নামটি অনেক ক্রিকেটমোদীকে আমোদিত করে। কাউকে কাউকে বিদ্বেষী করে তোলে। কেউবা, আবার সাকিব মানেই মনে করেন এক ‘স্পিরিট’ এক উৎসাহ। কারণ, এই তরুণ প্রজন্মের বাংলাদেশে যারাই ক্রিকেট দেখেন এবং ক্রিকেটার হতে চান তাদের বেশীরভাগই সাকিব হতে চান। তাই মাঠের বাইরের বিতর্ককে ছাপিয়ে সাকিব এক উদ্দীপনার নাম উৎসাহের নাম। আর এই লাল-সবুজের ক্রিকেট উদ্দীপকের সম্ভবত এবারই ছিল শেষ বিশ্বকাপ। সম্ভবত শব্দটি এজন্য বলতে হলো যে তিনি নিজ মুখে এখনও ঘোষণা করেননি এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ। তবে তিনি আগেই বলেছিলেন ২০২৩ বিশ্বকাপই তার শেষ বিশ্বকাপ। তারপরও তার বয়স অনুপাতে এটা বলা যায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবারই তিনি হয়তো তার শেষ বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছেন। 

প্রায় ৩৭ বছর ছুঁই ছুঁই সাকিব এই বিশ্বকাপে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। তবে ২০১৯ বিশ্বকাপেই তিনি নিজেকে প্রমাণ করে গেছেন। নিজের ক্যারিয়ারে ৬টি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ২টি বিশ্বকাপে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। 

২০০৭ বিশ্বকাপে সুযোগ পান সাকিব আল হাসান। পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক ৫ উইকেটের জয়ের ম্যাচেই ফিফটির দেখা পান আল হাসান। ৮৬ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় করেছেন ৫৩ রান।  

২০০৭ বিশ্বকাপে সুপার এইটে যেতে বারমুডাকে হারাতেই হতো বাংলাদেশকে। পোর্ট অব স্পেনে সেই ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন সাকিব। ৩ ওভার বোলিং করে ১২ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। বৃষ্টি আইনে ৭ উইকেটে জিতে সুপার এইট নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ভারতের পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সেই বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ দেখায় দ্বিতীয় চমক। গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে সুপার এইটের ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৮৭ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে মার্ক বাউচার ও জাস্টিন কেম্প-এই দুই প্রোটিয়া ব্যাটারের গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। ভারতের পর সেই বিশ্বকাপে আরও এক ফিফটি পেয়েছেন তিনি। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিবের ৯৫ বলে ৫৭ রানের অপরাজিত ইনিংস ভেস্তে যায় বাংলাদেশ ৪ উইকেটে হেরে যাওয়ায়। নিজের প্রথম বিশ্বকাপে ২৮.৮৫ গড় ও ৫৭.২২ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২০২ রান। আর বোলিংয়ে ৪.৯৬ ইকোনমিতে নিয়েছেন ৭ উইকেট। 

২০১১ সালে নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপেই সাকিব খেলেছেন অধিনায়ক হিসেবে। সেই ম্যাচ বাংলাদেশ ৩টি ম্যাচ হেরেছিল এবং জয়ের রেকর্ডও ছিল তিন ম্যাচে। ইংলিশদের প্রথমবারের মতো তারা বিশ্বকাপেই হারিয়ে দেবার স্বাদ পায়। সেবার বিশ্বকাপে বোলিংয়ে ৪.৮১ ইকোনমিতে নিয়েছেন ৮ উইকেট। তবে ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারেননি সাকিব। 

চার বছর পর অর্থাৎ ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ খেলতে যায় নিজেদের পঞ্চম বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপকে এখনো পর্যন্ত ধরা হয় বাংলাদেশের সেরা বিশ্বকাপ। ইংল্যান্ডকে ছিটকে দিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। নিজের তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া সাকিব এই বিশ্বকাপে ব্যাটিংয়ে ছিলেন দুর্দান্ত। ৩৯.২০ গড় ও ৯৩.৭৭ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১৯৬ রান। আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত দুটি ফিফটি করেছেন। 

২০১৯ বিশ্বকাপে ভেন্যু বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে ফরম্যাটও বদলে যায়। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপ ছিল ১০ দলের রাউন রবিন ফরম্যাটে। এই বিশ্বকাপে সাকিব ছিলেন অতিমানবীয় ফর্মে। ব্যাটিংয়ে ৮৬.৫৭ গড় ও ৯৬.০৩ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৬০৬ রান। যে ৮ ম্যাচ বাংলাদেশ খেলার সুযোগ পেয়েছিল, তার মধ্যে ৭ টিতেই পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান-যে তিন ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছিল, সবগুলোতেই দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে হয়েছেন ম্যাচসেরা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কার্ডিফে ১১৯ বলে ১২১ রানের ইনিংসটাই ছিল সাকিবের বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান-পাঁচ ম্যাচেই করেছেন ফিফটি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে এক ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন সাকিব। বোলিংয়ে এই বিশ্বকাপে ৫.৩৯ ইকোনমিতে নিয়েছেন ১১ উইকেট। 

২০১৯ বিশ্বকাপের মতো ১০ দল ও রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে হচ্ছে ২০২৩ বিশ্বকাপ। ভারতের মাঠে হওয়া এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে খেলেছেন সাকিব। এশিয়ান কন্ডিশনে হওয়ায় সাকিবের থেকে ভক্ত সমর্থকদের প্রত্যাশা একটু বেশি ছিল। তবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি নানা কারণে। দলেরও পারফরম্যান্স হয়েছে হতাশাজনক। তবে শেষ বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটি রাঙিয়েছেন সাকিব। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৫ বলে ১৩ চার ও ২ ছক্কায় করেছেন ৮২ রান। যা এবারের বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম ফিফটি। দূর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ২ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরাও। বাংলাদেশের ৩ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ও শেষ দুই ম্যাচেই জয় পেয়েছেন সাকিব। আর এই জয়ের ম্যাচটি আরেকটি কারণে ইতিহাসের পাতায় তার নাম উঠে থাকবে। তা হলো ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে টাইমড আউটের আবেদনটি তিনিই অধিনায়ক হিসেবে করেছিলেন। 

২০০৭ থেকে ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলে ৩৬ ম্যাচে ৪১.৬২ গড় ও ৮২.২৭ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১৩৩২ রান। বিশ্বকাপে রান সংগ্রাহকদের তালিকায় আছেন ৭ নম্বরে। ২ সেঞ্চুরি ও ১১ ফিফটিতে ১৩টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন তিনি। পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলার রেকর্ডে শচীন টেন্ডুলকার (২১), বিরাট কোহলির (১৪) পরেই আছেন সাকিব। আর বোলিংয়ে বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে ৫.১৪ ইকোনমিতে নিয়েছেন ৪৩ উইকেট। স্পিনারদের মধ্যে বিশ্বকাপে সাকিবের ওপরে শুধুই আছেন ৬৮ উইকেট নেওয়া মুত্তিয়া মুরালিধরন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭