ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশ নিয়ে জাতিসংঘ হঠাৎ এত তৎপর কেন?


প্রকাশ: 09/11/2023


Thumbnail

হঠাৎ করেই বাংলাদেশ নিয়ে জাতিসংঘের মাথাব্যথা যেন বেড়েছে। গত ১ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক একটি চিঠি লিখেছেন। সেই চিঠিতে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে জরুরি চিকিৎসার জন্য মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ এরকম একটি চিঠি একটি স্বাধীন দেশের সরকার প্রধানকে দিতে পারেন কিনা এ নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে এটি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার উপর সুস্পষ্ট হস্তক্ষেপ বলেই অনেকে মনে করছেন। 

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ এবং এখানে একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার রয়েছে। এ দেশের সংবিধান অনুযায়ী আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং শাসনবিভাগ সম্পূর্ণ আলাদা। বিচার বিভাগ সাংবিধানিকভাবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। বিচার বিভাগের কাজে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করে না। আর এরকম একটি আইনি পরিকাঠামোর মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া ২টি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন, যার মধ্যে একটিতে হাইকোর্ট তার সাজা বহাল রেখেছে। দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত বেগম খালেদা জিয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকারের নির্বাহী আদেশে বিশেষ বিবেচনায় জামিনে রয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় তিনি তার নিজ বাসভবনে থেকে চিকিৎসার সুযোগ লাভ করেছেন। 

কিন্তু ভলকার টুর্কের চিঠি পড়ে মনে হচ্ছে খালেদা জিয়া যেন বন্দি। বেগম খালেদা জিয়া এখন বন্দি নন। তিনি জামিনে রয়েছেন। একজন বন্দি ব্যক্তি তার নিজ বাসভবনে থাকতে পারেন না। কাজেই জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান সঠিক তথ্য না জেনে এরকম চিঠি কেন দিচ্ছেন তা প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যাপার। শুধু এটিই নয়, বরং তিনি তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এই ধরনের বক্তব্য জাতিসংঘ দিতে পারে কিনা, এটি একটি স্বাধীন দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রমের হস্তক্ষেপ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

শুধু বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং বিরোধী দলের আন্দোলন ইত্যাদি নিয়েও জাতিসংঘকে তৎপর দেখা যাচ্ছে। এই তৎপরতার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারছেনা অনেকের ধারণা। বিশেষ করে যখন হাসপাতালে হামলা হয়েছে বা যখন একজন পুলিশ কনস্টেবলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেসব ব্যাপারে জাতিসংঘ নিরব ছিল। আবার বিরোধী দলের প্রতি এক ধরনের সহানুভূতিশীল আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, এটি বিএনপি এবং জামায়াতের যে লবিস্ট এবং তাদের যে তৎপরতা তার সাফল্য। অন্যদিকে এটি বাংলাদেশে যে জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন রয়েছে সেই মিশনের ব্যর্থতা। বাংলাদেশের একটি মিশন রয়েছে নিউইয়র্কে এবং সেখানে একজন স্থায়ী প্রতিনিধি রয়েছেন। তারা কী কর্মকাণ্ড করছেন সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ জাতিসংঘ একটি বিশ্বসভা, যেখানে সকল দেশের ব্যাপারে তাদেরকে নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ অবস্থান রাখতে হয়। জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে যিনি আছেন বা যে সমস্ত কর্মকর্তারা কাজ করেন তারা কতটুকু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ জাতিসংঘ একপাক্ষিক বক্তব্য শুনে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। 

বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয় নিয়ে জাতিসংঘ কথা বলছে। আগামী ১৩ তারিখে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ে বাংলাদেশ নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। আইনমন্ত্রী সেখানে নেতৃত্ব দেবেন বলেও জানা গেছে।

জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান কার্যালয়। জেনেভাতে যিনি বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আছেন সম্প্রতি তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের মানবাধিকার প্রসঙ্গে তারা কতটুকু দায়িত্ব পালন করছেন, সেটি এখন প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, সঠিক লোকজন না থাকার কারণে বাংলাদেশ জাতিসংঘের কূটনীতিতে পিছিয়ে পড়ছে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী লোকজন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে জাতিসংঘে নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে। এ জন্যই জাতিসংঘ এখন বাংলাদেশের ব্যাপারে একধরনের পক্ষপাতপূর্ণ আচরণ করছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭