ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

লিপস্টিকের আমদানি বাড়ল কেন


প্রকাশ: 10/11/2023


Thumbnail

বাংলাদেশে পণ্যভিত্তিক খুচরা বিক্রির হিসাব পাওয়া যায় না। তবে আমদানি থেকে কোন পণ্যের চাহিদা বেড়েছে না কমেছে তা পরিমাপ করা যায়। দেশের অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে আমদানির হিসাবে একটি প্রসাধনী পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয় লক্ষ্য করা গেছে। আর তা হলো বিলাসী পণ্য লিপস্টিক।

মানুষের আয় কমলে বিলাসপণ্য কেনার চাহিদা কমে যায়। কমদামি বিলাসপণ্য কেনার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে মানুষ। লিপস্টিক হচ্ছে এমনই একটি বিলাসী পণ্য। বিলাসপণ্যের মধ্যে তুলনামূলক দাম কম লিপস্টিকের। ঠোঁট রাঙিয়ে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে লিপস্টিক অনন্য। অন্য প্রসাধনের চেয়ে বেশি সময় ব্যবহার করা যায়। 

বাংলাদেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। মূল্যস্ফীতির রেকর্ড হচ্ছে। এক যুগের রেকর্ড ভেঙে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি। এমন সময়ে বলা যায় মানুষের খরচ অনেক বেড়েছে। এতে দামি বিলাসী দ্রব্যের উপর মানুষের খরচ কমাতে হচ্ছে আর তাতে কমদামি এ লিপস্টিকের চাহিদা বেড়েছে। 

আর্থিক কষ্টের সময় নিজেকে পরিপাটি রাখার মধ্য দিয়ে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করে মানুষ। এ কারনে অর্থনৈতিক খারাপ সময়ে লিপস্টিকের চাহিদা বেড়ে যায়। এমনই একটি তত্ব রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার সময় দেশটির একটি প্রসাধন কোম্পানি এস্টি লাউডারের চেয়ারম্যান লিওনার্দ লাউডার ঘোষণা দিলেন, এই মন্দায় লিপস্টিক বিক্রি আরও বেড়েছে। তিনি প্রথম ‘দ্য লিপস্টিক ইফেক্ট’ শব্দ ব্যবহার করেন। এই তত্ত্ব খুব জনপ্রিয় হয়। এ কারণে মন্দার আশঙ্কা বা পূর্বাভাস বোঝার জন্য লিপস্টিক বিক্রির ওপর চোখ রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদেরা।

দেশের অর্থনৈতিক সংকটের এমন সময়ে শিল্পের কাঁচামাল থেকে প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কমছে। তবে সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে লিপস্টিকের আমদানি ও ব্যবহার বাড়তে শুরু করেছে। লিপস্টিকের আমদানি বৃদ্ধিই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভয় দেখাচ্ছে। ভয়টা মূলত পশ্চিমের ‘লিপস্টিক এফেক্ট’ তত্ত্বের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশেও নারীদের মধ্যে লিপস্টিকের ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে। তবে পশ্চিমের লিপস্টিক ইফেক্ট তত্ত্ব কতটুকু মিলবে এ দেশে, তা নিয়ে সন্দিহান গবেষকেরা; যদিও খরচ সামলাতে মানুষ কম বিলাসপণ্যের দিকে ঝোঁকে বলে মনে করেন তাঁরা। অবশ্য অর্থনীতির গতি কমার সঙ্গে মিলে গেলেও পশ্চিমা তত্ত্বে ভয় পাওয়ায় কিছু নেই বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে ঠোঁটে ব্যবহারের উপকরণ বা লিপস্টিক-জাতীয় পণ্য আমদানি হয়েছে ৪০ হাজার ৭৭৫ কেজি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয় ২৬ হাজার ৮৫৩ কেজি। সরকারি হিসাবে, লিপস্টিক আমদানি ৫২ শতাংশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে লিপস্টিক আমদানিতে শুল্কায়নমূল্য ছিল ৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শুল্কায়নমূল্য ছিল ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আমদানিব্যয়ের হিসাবে লিপস্টিক আমদানি বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। আমদানি বাড়ায় সরকার আড়াই কোটি টাকা বেশি রাজস্ব পেয়েছে লিপস্টিক থেকে।

আমদানি বেড়ে যাওয়ার অর্থ দেশে লিপস্টিকের চাহিদা বেড়েছে। তবে বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মো. কবির ভূঁইয়া বলেন, ক্রয়ক্ষমতা কমলে প্রসাধনীর মতো বিলাসপণ্যের চাহিদা কমে যায়। প্রসাধনী বিক্রি তুলনামূলক কমেছে। প্রসাধনীর মধ্যে আলাদা করে লিপস্টিকের চাহিদা বাড়ল না কমল, সে সম্পর্কে আলাদা তথ্য তাঁদের কাছে নেই। আমদানি বাড়লেও বিক্রি বেড়েছে কি না, তা চার মাসের হিসাব দিয়ে বোঝা কঠিন। তবে বছর শেষের তথ্য দিয়ে ধারণা পাওয়া যাবে। 

বাংলাদেশে প্রসাধনীর বাজার আমদানি ও উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল। লাগেজ বা অবৈধ পথে লিপস্টিকের মতো রঙিন প্রসাধনী বাজারে থাকলেও খুব বেশি নয় বলে জানিয়েছেন কবির ভূঁইয়া। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭